আটঘরিয়ার খামারিরা করোনায় কোরবানির গরু নিয়ে আতঙ্কে

আটঘরিয়া (পাবনা) প্রতিনিধি
আসন্ন কোরবানির ঈদে আতঙ্কে রয়েছে পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার গরু খামারিরা। করোনা পরিস্থিতিতে বছরব্যাপী গরু লালন-পালনকারী খামারিরা অনিশ্চয়তায় আছে গরু বেচাকেনা নিয়ে। এখানকার খামারিরা কোরবানির ৫-৬ মাস আগ থেকেই গরু মোটাতাজাকরণের প্রস্তুতি শুরু করেন। আর ঈদের একমাস আগেই তাদের বেশিরভাগ গরু বিক্রি হয়ে যায়। কিন্তু এবার পরিস্থিতি একেবারেই ভিন্ন। কোরবানি ঈদের আর ১৮/১৯ দিন বাকি সে অনুযায়ী খামারগুলোতে ক্রেতাদের তেমন আনাগোনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। কোরবানির গরুর বাজার নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। এবার ব্যবসা হবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন খামারের মালিকরা।

খামার ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে গরু সংগ্রহ করে কেরানীগঞ্জের খামারগুলোতে নিয়ে আসেন তারা। এখানে বছরব্যাপী গরুগুলো যতœ সহকারে লালন-পালন করে সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে মোটাতাজা করা হয়। এরপর ঈদ উপলক্ষে কেরানীগঞ্জসহ রাজধানীর বিভিন্ন হাটে বিক্রি করা হয়। আর এটিই তাদের একমাত্র পেশা। কিন্তু এবার করোনার কারণে অনিশ্চয়তায় আছেন তারা। কীভাবে গরুগুলো বিক্রি করবে এ নিয়ে আতঙ্কে রয়েছে খামার ব্যবসায়ীরা। উপজেলা প্রাণিসম্পদ সূত্রে জানা গেছে, এবারের কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে কেরানীগঞ্জে ৭৪৭টি ঘামারে ১২ হাজার ৫শ’ ৬০টি গরু দেশীয় পদ্ধতিতে মোটা তাজা করা করেছে। খামারগুলোতে বিভিন্ন উন্নত জাতের গরু রয়েছে এদের বিভিন্ন নামও রাখা হয়েছে যেমন, আমেরিকান ব্রাহামা, অস্ট্রেলিয়ান, ফিজিয়ান, ক্রস, দেশি, শাহী, আসা, বাহুবলি, কষ্টাল, ইন্ডিয়ান বলদ ও গয়াল। গরু পরিচর্যার জন্য খামারগুলোতে রয়েছে পেশাদার রাখাল তারা গরুগুলোকে লালন পালন করে থাকে। সবুজ ঘাস, খর-কুটা, খৈল, ভুসি, খের ও ভাতের জাউ খাইয়ে সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে গরুগুলোকে মোটা-তাজাকরণ করা হয়েছে।

শরীফ এগ্রোভেটের ম্যানেজর মো. মোস্তফা কামাল জানান, এ বছর গরুর খাবারের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতিটি গরুর জন্য আমাদের খরচ দ্বিগুণ। তছাড়াও এবার করোনাভাইরাসে আমাদের ব্যবসা কেমন হবে তা অগ্রিম কিছু বলতে পারছি না। আমাদের খামারে ২শ’ ২০টি বিভিন্ন জাতের দেশি-বিদেশি গরু রয়েছে। প্রতি বছর এ সময় খামার থেকেই আমাদের ৮০-৯০টি গরু বিক্রি হয়ে যায় সে তুলনায় এবার মাত্র ৫-৬টা গরু বিক্রি হয়েছে। করোনার প্রভাবে দেশের মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ থাকায় অধিকাংশ মানুষই এবার কোরবানি দিবে না। তাই হয়তো এবছর আমাদের লোকসানে পড়তে হবে। তিনি জানান, তার খামারের সব চেয়ে বড় গরুটির মূল্য ১৬ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এছাড়া ৯০ হাজার থেকে শুরু করে ১০ লাখ টাকা মূল্যমানের গরু তার খামারে রয়েছে। কেরানীগঞ্জের খাড়াকান্দি সানারঘাট এলাকার সুলতান এগ্রোর ম্যানেজার শিপন আহমেদ জানান, আমাদের ফার্মে বর্তমানে ২শ’র অধিক গরু রয়েছে। যেহেতু এবার কোরবানির ঈদ সিজনে করোনা মহামারী চলছে। তাই আমরা একটু অনিশ্চয়তায় আছি, ব্যবসায় কতটুকু টার্গেট মতো পৌঁছতে পারব। তবে আমরা সকল ভাবে প্রস্তুত আছি ক্রেতারা যদি খামার থেকে গরু কিনতে চায় তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া গরু বিক্রির জন্য আমরা ইতোমধ্যে অনলাইনসহ বিভিন্নভাবে প্রচার প্রচারণা করছি। ঈদের বেশ কিছুদিন বাকি রয়েছে এখন দেখি শেষ পর্যন্ত কি হয়। আমাদের খামারে সাড়ে ৩ লাখ থেকে ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত মূল্যমানের গরু রয়েছে।

কেরাণীগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. জহির উদ্দীন জানান, উপজেলার প্রতিটি খামারের গবাদিপশুলোকে বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধকের টিটা প্রদান নিশ্চিত করেছে আমাদের উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে গরুর খামারিরা একটু চিন্তিত রয়েছে গরু বিক্রি নিয়ে। আমরা তাদের পরামর্শ দিচ্ছি তারা যাতে হাটে নিয়ে গরু বিক্রির পাশাপাশি অনলাইনে গরু বিক্রির ব্যবস্থা রাখে। আর এতে খামার থেকেই গরুগুলো বিক্রির সুবিধা তারা পাচ্ছে।