পাবনার ভাঙ্গুড়ায় এমপিও ভুক্ত একটি মাধ্যমিক স্কুলে কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি এবং ইলেকট্রনিক্স বিষয়ে ল্যাব এসিস্ট্যান্ট পদে নিয়োগে স্বজনপ্রীতি অবৈধ অর্থ লেনদেনের ও নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার পার-ভাঙ্গুড়া ইউনিয়নের ভেড়ামাড়া উদয়ন একাডেমি নামের এই প্রতিষ্ঠানে শনিবার (২৭’ জুন) নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। অভিযোগকারী পরীক্ষায় অংশগ্রহন করা অন্যান্য চাকুরী প্রার্থীরা জানান প্রতিষ্ঠানের সভাপতির ছেলে কে নিয়োগ দিতে কুষ্টিয়া থেকে একজন বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারকে কে প্রার্থী বানিয়ে প্রক্সি দিয়ে পরীক্ষা মাধ্যমে প্রথম বানানো ও সভাপতির ছেলেকে দ্বিতীয় বানানো হয়েছে। অপরদিকে ইলেকট্রনিক্স বিষয়ে লিখিত পরীক্ষায় ৪১ নাম্বার পাওয়া নয়ন আহমেদকে বাদ দিয়ে রাকিবুল ইসলাম নামে আরেক জনকে চূড়ান্ত নিয়োগ পত্র দেওয়া হয়েছে। এছাড়া এর আগেও এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে জাল সনদে শিক্ষক নিয়োগ, এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ কোচিং এর নামে টাকা আদায় করে প্রবেশপত্র দেয়া ছাড়াও নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।
লিখিত অভিযোগ ও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৯৫ সালে স্থাপিত এই প্রতিষ্ঠানটিকে চলতি বছর ভোকেশনাল শাখার অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড। যার প্রেক্ষিতে চলতি বছর ফেব্রুয়ারীতে ভোকেশনাল শাখায় একজন ল্যাব এ্যাসিস্ট্যান্ট কম্পিউটার ও একজন তথ্য প্রযুক্তি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। বিজ্ঞপ্তির বিপরীতে প্রথম পদে উক্ত প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘদিনের সভাপতির ছেলেসহ মোট ১২ জন এবং দ্বিতীয় পদের জন্য ৪ জন আবেদন করে। মোট ষোল জনের পনেরো জন স্থানীয় হলেও একজন ভিন্ন জেলা চুয়াডাঙ্গা থেকে আবেদন করে। চলতি মাসের সাতাশ তারিখে এই দুই পদের জন্য লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। লিখিত অভিযোগকারী রাকিবুল ইসলাম ও সরোয়ার হোসেনের দাবী স্বজনপ্রীতি ও অবৈধ অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে সভাপতির ছেলে মাহফুজ হোসেন কে নিয়োগ দিতে কুষ্টিয়া জেলার এক প্রার্থীকে পরীক্ষায় প্রথম ও নির্বাচিত করা হয়েছে এবং মাহফুজ কে দ্বিতীয় করা হয়েছে। নির্বাচিত প্রার্থী কুষ্টিয়া থেকে পাবনায় এসে এই পদে চাকুরী করবে না ফলে মাহফুজ দ্বিতীয় হওয়ায় পরবর্তীতে তার নিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করে রাখা হয়েছে। তারা পরীক্ষার এই কৌশলের বিরুদ্ধে মহা পরিচালক মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর বরাবরে লিখিত আবেদন করেছেন। এছাড়া এই লিখিত আবেদনের অনুলিপি যাথাক্রমে স্থানীয় সাংসদ (পাবনা-০৩), জেলা প্রশাসক পাবনা, এডিসি শিক্ষা পাবনা, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা পাবনা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ভাঙ্গুড়া বরাবরে ডাক রেজিষ্ট্রিযোগে পাঠিয়েছেন। এছাড়া অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে ইলেকট্রনিক্স বিষয়ে ল্যাব এসিস্ট্যান্ট নিয়োগ পরীক্ষার ক্ষেত্রেও। ইলেকট্রনিক্স বিষয়ে লিখিত পরীক্ষায় ৪১ নাম্বার পেয়ে প্রথম স্থান অধিকার করা নয়ন আহমেদ অভিযোগ করেন, ব্যবহারিক পরীক্ষা না নিয়েই ৩৭ নাম্বার পাওয়া রাকিবুল নামে আরেক জনকে ব্যবহারিক পরীক্ষায় বেশি নাম্বার দিয়ে প্রথম বানিয়ে চূড়ান্ত নিয়োগ পত্র দেওয়া হয়। তবে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটি আবেদন কারীদের এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। লিখিত অভিযোগে আরও জানা যায় ২০১২ সলে এই প্রতিষ্ঠান ও ম্যানেজিং কমিটির বিরুদ্ধে জাল সনদে শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যাচাইয়ে জাল সনদের বিষয়টি প্রমাণিত হলে ঐ শিক্ষক চাকুরী হারান।
প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য বাবলু হোসেন জানান, এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ অসচ্ছ। চাকুরীতে নির্বাচিত হাবিবুর রহমান জানান, আমি চাকুরীর জন্য আবেদন করেছিলাম প্রক্সি দেয়ার জন্য নয়। বিদ্যালয় র্কতৃপক্ষ নিয়োগ দিলে আমি যোগদান করবো।
বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সদস্য বাবলু হোসেন জানান, কম্পিউটার বিষয়ে নিয়োগ পরীক্ষা সম্পূর্ণ অস্বচ্ছ। কৌশলে সভাপতির মেধাহীন ছেলে মাহফুজকে নিয়োগ দিতে দ্বিতীয় বানানো হয়েছে। কৌশলের অংশ হিসেবে চুয়াডাঙ্গার একজনকে প্রথম করা হয়েছে সে যোগদান না করলে সভাপতি ছেলেকে নিয়োগ দেওয়া হবে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও পার-ভাঙ্গুড়া ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব হেদায়েতুল হক বলেন, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোন অনিয়ম হয়নি পরিক্ষার ফলাফল অনুযায়ী প্রথম স্থান অধিকারীকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোতালেব হোসেন জানান, সঠিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই নিয়োগ পরীক্ষা নেয়া হয়েছে। আমার ছেলে প্রার্থী হলেও আমি তার নিয়োগের জন্য কোনো প্রকার কৌশল নেইনি। কয়েকজন চাকুরী প্রার্থী নিয়োগ না পেয়ে বিভিন্ন জায়গায় লিখিত অভিযোগ করেছে বলে শুনেছি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ও নিয়োগ বোর্ডের সদস্য সাইফুল ইসলাম বলেন, যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ প্রথম স্থান অধিকারিকে নিয়োগ দেয়া হবে। তবে তিনি যদি যোগদান না করেন তখন দ্বিতীয় স্থান অধিকারী নিয়োগ পাবেন, যা বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের উপর নির্ভর করবে।
ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ আশরাফুজ্জামান বলেন, লিখিত অভিযোগের অনুলিপি কপি এখনো হাতে পাইনি। অভিযোগ হাতে পেলে এ বিষয়ে অনুসন্ধান করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে।