তালিকাভুক্তির আহবান শিক্ষানবীশ আইনজীবিগণের মানবেতর জীবন যাপন

সমগ্র বাংলাদেশের শিক্ষানবীশ আইনজীবীগন পেশাগত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নিবন্ধন না থাকায় সকল প্রকার আর্থিক, মানবিক ও আইনগত অধিকার
হতে সম্পূর্ণরূপে বঞ্চিত হচ্ছেন। শিক্ষানবীশগনকে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্তির আহবান জানিয়ে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী বরাবর আবেদন জানিয়েছেন এম.সি.কিউ. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ মৌলভীবাজার জেলা বারের সকল শিক্ষানবীশ
আইনজীবীবৃন্দ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- শিক্ষানবীশ আইনজীবি তানিম আফজাল, রুপক চন্দ্র দেব, কামাল চৌধুরী, ভাস্কর পুরকায়স্থ, সুজন কান্তি
বিশ্বাসসহ অন্যান্যরা। শিক্ষানবীশ আইনজীবীগন লিখিত আবেদনে জানান-আমরা অত্যন্ত মর্মাহত ও ব্যথিত চিত্তে আপনার সদয় অবগতির জন্য জানাচ্ছি
যে, আমরা কেউ বিগত ১০ বৎসর, কেউ ৭ বৎসর, কেউবা ৫ বৎসর পূর্বে দেশের বা বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় হইতে আইন বিষয়ে ডিগ্রী অর্জন
করি। কিন্তু দুর্ভাগ্য বশতঃ বার কাউন্সিলের নিবন্ধন পেতে বিলম্ব হওয়ায় আমরা একটি দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশের বিভিন্ন বারে সিনিয়র
আইনজীবীগনের সাহচর্যে থেকে অত্যন্ত স্বল্প পারিশ্রমিকের বিনিময়ে আইন পেশায় সেবা প্রদান করে আসছি। বিশ্ব মহামারীর এই সংকটময়
মুহূর্তে আমরা শিক্ষানবীশগন অত্যন্ত মানবেতর জীবন যাপন করছি।
আমাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নিবন্ধন না থাকায় আমরা সকল প্রকার আর্থিক, মানবিক ও আইনগত অধিকার হতে সম্পূর্ণরূপে বঞ্চিত। বার কাউন্সিলের ইতিহাসে দেখা যায়- ২০১২ সালের
পূর্বে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে বৎসরে ২ বার অর্থাৎ ৬ মাস পর পর নিবন্ধন পরীক্ষা গ্রহন করা হতো এবং কখনো কখনো শুধু মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে মেধা যাচাই পূর্বক আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হতো।
বর্তমানে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে পরীক্ষা পদ্ধতির পরিবর্তনের কারনে একটি পরীক্ষার শুরু থেকে শেষ করতে ২/৩ বৎসর চলে যায়। আবার প্রতি ৩ বছর বা ৪ বছর পর পর পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ায় আমরা আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্তি পেতে
জীবনের অনেক মূল্যবান সময় পেশায় প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পূর্বেই হারিয়ে যায়।
তাই আমরা যারা এই দীর্ঘ সময় তালিকাভুক্ত আইনজীবী হতে পারিনি, তারা এক অসহনীয় দুর্দশাগ্রস্থ জীবন যাপন করছি। আমরা না পারছি আইন পেশা থেকে সরে যেতে, না পারছি অন্য কোন পেশায় নিজেদের মানিয়ে নিতে। আইন পেশা, একটি স্বাধীন মহান পেশা। এই পেশায় নিজ নিজ দায়িত্বে পেশাগত দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে বিপদগ্রস্থ মানুষকে আইনী সেবা প্রদান করে অতি সামান্যে তুষ্ট থেকে একজন আইনজীবীকে ভদ্রোচিত ভাবে অতি মানবিক জীবন যাপন করতে হয়। সরকারের তহবিল থেকে কোন মাসিক বেতন বা ভাতা পাওয়ার সুযোগ নেই। বরং একজন শিক্ষানবীশ,
আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হলে তার পেশার মাধ্যমে অর্জিত আয় থেকে বাৎসরিক আয়কর প্রদান করে দেশকে এগিয়ে নিতে সরকারকে সহযোগিতা
করতে পারে।মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি হয়তো আপনার ব্যক্তিগত সোর্সের মাধ্যমে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের বর্তমান চলমান সংকট এবং
আইনে ডিগ্রী প্রাপ্ত নবীন শিক্ষার্থীদের আইনজীবী হিসাবে তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে নানা বিড়ম্বনার কাহিনী শুনে থাকবেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ! আপনি আমাদের ¯েœহময়ী জননী। আপনার সদয় দৃষ্টি না পড়লে আজ চলমান বাংলাদেশের কোন সমস্যাই সমাধান হয় না। তাই বাংলাদেশ বার
কাউন্সিলের প্রতি আপনার সদয় দৃষ্টির আকুল আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা আপনার সরকারের নিকট মাসিক বেতনের বিনিময়ে চাকুরী প্রার্থী নই।
শুধু আমরা যারা আইনকে পেশা হিসেবে জীবনের ব্রত নিয়ে গ্রহন করেছি তাদের জন্য আইনজীবী হিসেবে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে নিবন্ধন না থাকা একদিকে যেমন পেশা চালানো অমর্যাদাকর ঠিক তেমনি রাষ্ট্রীয়ভাবেও
আইনে স্বীকৃত নয়। তাই এমতপরিস্থিতিতে আমরা যারা কঠোর অধ্যাবসায়ের মাধ্যমে কেউ ২০১৭ সালে আবার কেউবা ২০২০ সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারী অনুষ্ঠিত তালিকাভুক্তির এম.সি.কিউ পরীক্ষায় তীব্র
প্রতিযোগিতার মাধ্যমে মাত্র ১৩% পাস করেছি, যাহার লিখিত পরীক্ষা
গতানুগতিক নিয়ম অনুযায়ী গত মার্চ/এপ্রিলের মধ্যে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিশ্ব মহামারীর এই চলমান সংকটের কারনে আমাদের লিখিত পরীক্ষা বার কাউন্সিল কর্তৃপক্ষ যথা সময়ে গ্রহন করতে পারে নাই। এই পরিস্থিতিতে হয়তো দেখা যাবে যতদিন এই করোনা নামক মহামারী চলতে
থাকবে, ততদিন আমাদের পরীক্ষা বার কাউন্সিল কর্তৃপক্ষ গ্রহন করবেন না।
আবার কোন ক্রমে লিখিত পরীক্ষায় বসাতে পারলে খাতা দেখার নামে এবং
চুড়ান্ত তালিকাভুক্তির ফলাফল দিতে ২/৩ বৎসর সময় অপেক্ষা করতে হবে এক
অনিশ্চিত ভবিষ্যত যাত্রায়। যেখানে আমাদের তালিকাভুক্তির পরীক্ষায় অংশ
নিতেই কেবল অপেক্ষা করতে হয়েছিল ২০১৫ থেকে ২০১৭ সাল আবার ২০১৭
সালের পর ২০২০ সাল পর্যন্ত অর্থাৎ ৩ বৎসর থেকে ৫ বৎসর। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি আমাদের মা। আপনার সন্তানেরা যারা আইনজীবী হওয়ার মানসে আইন পরীক্ষায় পাশ করে দীর্ঘকাল ধরে বেকারত্বের অভিশাপে ধুকছে, মানবেতর জীবন যাপন করছে, পরিবার, আত্মীয় স্বজনের কাছে লাঞ্চিত হচ্ছে
তবুও তারা আপনার নিকট চাকুরী চাচ্ছে না। শুধু আইনজীবী হিসেবে
তালিকাভুক্ত হয়ে নিজেদের পেশায় মর্যাদার সাথে আত্মনিয়োগ করতে চায়।
বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ইতিহাসে দেখা যায়, জাতির এক সংকটময় মুহূর্তে আমাদের প্রয়াত প্রান প্রিয় নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান যাদের আইন বিষয়ে কোন ডিগ্রী ছিল না। কিন্তু দীর্ঘকাল
আইন পেশার সাথে সংশিষ্ট থাকায় তাদের ডিগ্রী ছাড়াই শুধুমাত্র অভিজ্ঞতাকে বিবেচনায় এনে আইনজীবী হিসেবে তালিকভুক্তির নির্দেশ
দিয়েছিলেন। আপনিও সেই মহান নেতার যোগ্য উত্তরসূরী। আপনি শুধু
একজন প্রধানমন্ত্রী নন, একজন শাসক নন, একজন মমতাময়ী দুরদর্শী ও
বিচক্ষন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমরা আপনাকে বুকে ধারন করি। তাই মানবিক বিবেচনায় আমরা যারা আইন বিষয়ে ডিগ্রী প্রাপ্ত এবং
বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের চলমান তালিকাভুক্তির এম.সি.কিউ. পরীক্ষায় তীব্র
প্রতিযোগীতার মাধ্যমে অতি কষ্টে উর্ত্তীন হয়েছি, আমাদেরকে মহামারীর
এই সংকটময় মুহূর্তে পরীক্ষার জন্য সমগ্র বাংলাদেশের পরীক্ষার্থীদেরকে ঢাকায় এনে জমায়েত করলে বর্তমানে চলমান এই মহামারীতে সংক্রমিত হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। এমতপরিস্থিতিতে, আমাদেরকে ঝুঁকির মধ্যে না ফেলে কিংবা আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্তি পরীক্ষার জন্য আরো
অনির্দিষ্টকাল অপেক্ষায় রেখে করোনা মহামারী কবে নাগাদ শেষ হবে সেই অপেক্ষায় আমাদেরকে ঝুলিয়ে রাখলে এটা হবে মানবতা বর্জিত । কারণ আমরা ইতিমধ্যেই আমাদের জীবন থেকে ৫-৭ বছর সময় শুধু পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করার অপেক্ষায় হারিয়েছি। তাই আমাদের জীবন থেকে আর মূল্যবান
সময় কেড়ে না নিয়ে মানবিক বিবেচনায় অবশিষ্ট পরীক্ষা থেকে অব্যাহতি
দিয়ে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের তালিকাভুক্ত আইনজীবী হিসেবে নিবন্ধনভুক্ত করিতে এবং আইন মন্ত্রনালয় কর্তৃক গেজেট প্রকাশ করিতে আপনার মানবিক হস্তক্ষেপ ও সদয় দৃষ্টি কামনা করছি।