লালমনিরহাটে স্থানীয় রাজনীতি ও ভবিষৎ পরিকল্পনা নিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে মতবিনিময় সভা

লালমনিরহাট প্রতিনিধি।

লালমনিরহাটে স্থানীয় রাজনীতি ও ভবিষ্যত কর্মপরিকল্পনা নিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে মতবিনিময় সভা/ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টায় লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী উপজেলার নিজ বাস ভবনে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মোঃ শামীম কামাল এনডিইউ, এএফডব্লিউসি, পিএসসি, এলএলবি, এমফিল এর আয়োজনে এ মতবিনিময় সভা/ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

মতবিনিময় সভা/ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য রাখেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মোঃ শামীম কামাল এনডিইউ, এএফডব্লিউসি, পিএসসি, এলএলবি, এমফিল। এ সময় লালমনিরহাটের প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

মতবিনিময় সভা/ সংবাদ সম্মেলনে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মোঃ শামীম কামাল এনডিইউ, এএফডব্লিউসি, পিএসসি, এলএলবি, এমফিল লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করেন, উপস্থিত ইলেক্ট্রনিক-প্রিন্ট মিডিয়া এবং গণমাধ্যমকর্মীবৃন্দ আসসালামু আলাইকুম। আমি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবঃ) মোঃ শামীম কামাল দীর্ঘ ৩২বছর সেনাবাহিনীতে অত্যন্ত সততা-সুনাম-সুখ্যাতি ও গভীর দেশপ্রেম নিয়ে চাকুরী করেছি। আমি বাংলাদেশে সর্বোচ্চ সামরিক ও বেসামরিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছি এবং চীনে এনডিইউ, ভারতে কমান্ড কোর্স, জার্মানী এবং ফ্রান্সে আন্তর্জাতিক ভূরাজনীতি ও নিরাপত্তাবিষয়ক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছি। আমি বাংলাদেশ মিলিটারী একাডেমী থেকে শুরু করে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজে প্রশিক্ষক এবং প্রধান প্রশিক্ষক হিসেবে ১২বছর দায়িত্ব পালন করেছি। এনডিসি একটি আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেখানে আমি দুবার প্রশিক্ষক এবং দুবার প্রধান প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করি। আমি সামরিক অসামারিক উভয়ক্ষেত্রে মোট ৪টি বিষয়ে মাষ্টার্স, এলএলবি এবং এমফিল সম্পন্ন করেছি। বর্তমানে আমি “সামরিক কূটনীতি” তে পিএইচডি করছি।

আমার দীর্ঘ চাকুরী জীবনে কোনোরপ্রকার দুর্নীতি, অসতা, অনিয়ম, শৃংঙ্খলা রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকান্ড এবং কোনো প্রকার নেতিবাচক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত ছিলাম না। আমি একজন সৎ, পেশাদার এবং দেশপ্রেমিক অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। আমি ১৯৯০ সালে কমিশন্ডপ্রাপ্তির পর থেকে ২০১৪ পর্যন্ত প্রত্যেকটি পদোন্নতিতে আমার মেধা, জ্ঞান ও উন্নতমানের পেশাগত দক্ষতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে পদোন্নতি বোর্ড অত্যন্ত সন্তুষ্টচিত্তে আমার পদোন্নতি সর্বসম্মতিক্রমে আনন্দচিত্তে প্রদান করেন এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব-কর্তব্যে আমাকে নিয়োজিত করেন। ইতোমধ্যে ২০১১ সালে আমাকে র‍্যাব এ পোস্টিং এর প্রস্তাব করা হলে আমি তা প্রত্যাখান করি।
২০১১ সালে আমি ঢাকায় সদর দপ্তর লজিস্টিকস্ এরিয়ায় জিএসও-১ পদে নিয়োগ পাই। এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সংবেদনশীল দায়িত্ব। এই দায়িত্ব পালনকালে ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) সংস্কার নিয়ে একটি বড় ধরণের এবং নারায়ণগঞ্জে সেনাবাহিনীর একটি বড় জায়গায় দোকান বরাদ্দের ক্ষেত্রে ৩০০-৪০০ কোটি টাকার একটি দুর্নীতি সাক্ষ্যপ্রমানসহ ধরি। এ দুর্নীতির সাথে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অবঃ) তারেক আহম্মেদ সিদ্দিকের স্ত্রী শাহীন সিদ্দিক জড়িত ছিলেন। বাংলাদেশে যত গুম-খুন ও জুলুম নির্যাতন হয়েছে তার সাথে মেজর জেনারেল (অবঃ) তারেক আহমেদ সিদ্দিক জড়িত। বিগত ১৫বছরে সশস্ত্রবাহিনীতে অযোগ্য অফিসারদের পদোন্নতিসহ যত দুর্নীতি হয়েছে তার সাথে তার স্ত্রী শাহীন সিদ্দিক এর সম্পৃক্ততা ছিল। অনতিবিলম্বে এই দম্পতির অন্যায়, গুম-খুন ও দুর্নীতির যথাযথ বিচার এবং তাদের সম্পত্তি ক্রোক করা প্রয়োজন।

এবারে আমি বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে কথা বলতে চাই। মূলত: বাংলাদেশের বিগত ৫৩বছরের রাজনৈতিক ক্যানভাস অতান্ত প্রতিহিংসা-অন্যায়-জুলুম এবং অগণতান্ত্রিকতার ছবি বৈ কিছু না। এদেশের রাজনীতি নেতা এবং পরিবারভিত্তিক। সবার ওপর নেতা, তার নিচে দল এবং সবার নিচে দেশ। আমার দীর্ঘ কর্মজীবনে আমি বাংলাদেশের সর্বত্র গমন করেই সংকীর্ণ রাজনীতির কদর্য চেহারা দেখেছি। বাংলাদেশে রাজনীতি বলতে প্রতিপক্ষকে নোংরা ভাষায় আক্রমন, নির্যাতন, জেল-জুলুম, দুর্নীতি, অর্থ-পাচার ইত্যাদিতে বাংলাদেশের রাজনীতির চরিত্রটি অত্যন্ত কলংকিত।

আমাদের পররাষ্ট্রনীতি হলো নতজানু নীতি। “এক গালের চড়ের দাগ মুছতে-না-মুছতে আরেক গাল পেতে দেয়া কোনো স্বাধীন-সার্বভৌম দেশের পররাষ্ট্রনীতি হতে পারে না। প্রতিবেশী বৃহত্তর গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের সাথে ন্যায্যতাভিত্তিক সম্পর্ক এবং আরেক প্রতিবেশী মায়ানমারের সাথে প্রায় সম্পর্কহীন পরিস্থিতির মধ্যেও উভয় দেশ বাংলাদেশে তাদের স্বার্থের শতভাগ সুবিধা আদায় করে নিচ্ছে। প্রায় ২০০টি আন্তর্জাতিক নদীর পানির হিস্যা নিয়ে ভারতের সাথে বাংলাদেশের এবং প্রায় ১২লক্ষ রোহিঙ্গাকে মায়ানমার জোড়পূর্বক বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করিয়েছে আমাদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে। বঙ্গপোসাগরে বিশাল স্থলভাগ প্রাপ্তির পরে কোনো উদ্যোগই নেয়া হয়নি। সুনীল অর্থনীতির মনোলোভা তত্ত্বীয় আলোচনা জাতীয় স্বার্থে একেবারেই অর্থহীন। বর্তমানে জটিল ভূরাজনেতিক- অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং প্রেক্ষাপটে “মোজাবে র‍্যাটেল স্নেক”-এর কূটনীতি অবলম্বন করা এখন সমেয়র দাবী।
রাজনীতিতে আমার বাবার আদর্শই আমি অনুসরণ করতে চাই। তিনি অত্যন্ত সম্প্রীতির এবং অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি করেছেন। একটি দল করতেন বটে কিন্তু অন্যদলের কারো প্রতিই তিনি বিরূপ আচরণ করেন নাই। তাঁর রাজনীতিতে এবং ক্ষমতার ৪২বছরে নিজ বা তাঁর পরিবারের কারো নামে কোনো কিছুই করেননি। বাংলাদেশে ক’জন রাজনীতিবিদের ছেলে-মেয়ে প্রকৃতঅর্থে সৎ এবং আদর্শ মানুষ হয়েছে? এর অর্থ খুবই স্পষ্ট। অবৈধ উপার্জনে সন্তানাদি মানুষ হয় না। এটাই প্রকৃতির বিচার। বাংলাদেশের সৎ-ভালো রাজনীতিবিদগণের প্রতি সম্মান রেখেই আমি এমন মন্তব্য করছি।

আমার পিতা-মাতা সারাজীবন একদিকে রাজনীতি অন্যদিকে ছেলে-মেয়েদের মানুষ করতে ব্যস্ত থেকেছেন বলেই আমাদের পাঁচ ভাই-বোনের কারো নামে সামান্য কোনো অভিযোগ উত্থাপন করার সুযোগ আমরা দেইনি। আলহামদুলিল্লাহ, আমি এবং আমার ছোটভাই-দুজনই রংপুর ক্যাডেট কলেজে পড়ালেখা করেছি এবং উভয়েই মানবিক বিভাগ থেকে রাজশাহী বোর্ডে মেধা-তালিকায় স্থান পেয়েছি। আমি লালমনিরহাট জেলার দ্বিতীয় ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এবং আমার ছোট ভাই প্রথম ব্যার-এট-ল ডিগ্রী অর্জন করেছেন। আমার পিতার মতো এমন একজন মানুষই আমার রাজনৈতিক আদর্শ, দর্শন এবং চিন্তা-চেতনা জুড়ে থাকায় আমি আপাতত কোনো রাজনৈতিক প্লাটফর্মের কথা ভাবছি না। আমি সততা, আদর্শ ও দেশপ্রেম নিয়ে আদিতমারী-কালীগঞ্জ আসনের রাজনীতিতে অনুপ্রবেশ করতে চাই ইনশাল্লাহ। সারাজীবন আমি অত্যন্ত সৎভাবে আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করেছি। আমার উপার্জনে একটি কানাকড়িও অবৈধ নয়। ব্যক্তিগতভাবে আল্লাহতায়ালা আমাকে মান-সম্মান, শিক্ষা-দীক্ষা, অর্থ-সম্পত্তিতে অনেক ভালো রেখেছেন। তথাপিও আমার পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে আমি আদিতমারী-কালীগঞ্জ উপজেলার মানুষের পাশে থেকে কাজ করার সদিচ্ছা পোষণ করি ইনশায়াল্লাহ্।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনকারীগণের প্রতি আমার হাজার কৃতজ্ঞতা। এ আন্দোলনে যাঁরা শহীদ হয়েছেন ভাদের রুহের মাগফেরাৎ কামনা করি এবং যাঁরা আহত হয়েছেন তাদের জন্য দোয়া করি যেন তাঁরা অতিদ্রুত সুস্থ হয়ে উঠেন। পৃথিবীতে সফল বিপ্লবের সংখ্যা হাতেগোনা ৪-৫ টি। অন্তবর্তীকালীন সরকার অতি গুরুত্বপূর্ণ কিছু সংস্কার করলেও এ বিপ্লবের আশাব্যঞ্জক ফলাফল পাওয়া যাবে বলে আমি মনে করি না। শেষতক বিপ্লবের মাধ্যমে শুধুমাত্র ক্ষমতার পালাবদলই হবে বলে আশংকা করছি। এ বিপ্লবের নামকরণ, লক্ষ্য নির্ধারণ, দর্শণ নির্ধারণ এবং সর্বশেষ সুষ্ঠু ও আদর্শ সমাজ ও রাষ্ট্র গঠণের জন্য একটি রাজনৈতিক বন্দোবস্ত অপরিহার্য। সাথে এই মুহুর্তে একটি বিপ্লবের একটি সুন্দর সহজ ন্যারেটিভ তৈরী করতে হবে বলে আমি মনে করি। এমন একটি সফল সম্ভবনার স্বপ্নকে অন্তরে লালন করলেও সেই পরিনতির কোনো আলামতই লক্ষ্য করছি না।

উত্তরবঙ্গ বাংলাদেশের রুটির ঝুড়ি। কিন্তু উন্নয়ণের ক্ষেত্রে উত্তরবঙ্গ চরম বঞ্চনার শিকার। তিস্তা মহাপরিকল্পনা নিয়ে তামাশা চলছে। নিজস্ব অর্থ্যায়নে তিস্তা মহাপরিকল্পনা, লালমনিরহাট বিমানবন্দর চালু করা এবং লালমনিরহাট জেলায় একটি রপ্তানী প্রক্রিয়াকরণ জোন নিয়ে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করছি ইনশায়াল্লাহ। আজকের এই সম্মেলনে আপনারা উপস্থিত হয়ে আমাকে কৃতজ্ঞতার পাশে আবদ্ধ করেছেন। আপনাদের অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আমার বক্তব্য শেষ করছি আল্লাহ হাফেজ।