সবে বৈশাখ না পেরুতেই রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় খাল বিল ও নদ নদী গুলোতে ঢুকে পড়েছে পানি। বৈশাখে নদীর হাঁটু পানির বদলে এখন অথৈ পানি। এই অথৈ পানি উন্মুক্ত ও ভাঙ্গাচোরা স্লুইস গেইট দিয়ে ঢুকে পড়ছে বিভিন্ন খাল বিলে। বাণের পানি যেন গ্রাস করতে চাইছে কৃষকরের আদাপাকা ধান। স্থানীয় কৃষকদের আশঙ্কা এভাবে পানি বাড়তে থাকলে তাদের আশার গুড়েবালি হবে। স্থানীয় কৃষক ও উপজেলা কৃষি দপ্তর সুত্রে জানা গেছে, বাগমারার ১৬ টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌর এলাকায় কমবেশি বোরো আদাদ হয়েছে। এখানে মোট বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ১৮ হাজার ৫শ হেক্টর নির্ধারন করা হলেও অনুকুল আবহাওয়া সার বীজের সহজলভ্যতা ও কৃষি বিভাগের ওতপ্রোত সহযোগীতার কারণে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে বোরো আবাদ হয়েছে ১৯ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে। উপজেলার বৃহত্তম বিল বিলসৌতি, খয়রা, বিলকালাই, বিলমাললি,নাককাঠি মরাবিলা, সোনবিলা, কাদারবিল, যশের বিলে বোরো আবাদ হয়েছে সবচেয়ে বেশি। বিআর ২৮, বিআর ২৯ সহ বিভিন্ন উচ্চ ফলনশীল হাইব্রীড জাতের বোরো আবাদ হয়েছে সবচেয়ে বেশি। এসব অধিকাংশ বিলের ধার দিয়ে বয়ে চলেছে ফর্কিনী ও বারনই নদী। সম্প্রতি এই দ্ইু নদীর পানি ফুলেফেপে ওঠেছে। স্থানীয়রা বলছেন, এগুলো আগাম বন্যার পানি। তাদের মতে, চলতি মাসেই কোন ভারী বর্ষণ হয়নি। আর নদীতে যে পানি আসছে তা অতি স্বচ্ছ ও ঠান্ডা। তারা বলেন, এই পানি পাহাড়ী নদীর পানি। এটি আগাম বন্যারই পূর্বাভাষ। খয়রা, মরাবিলা ও নাককাঠি বিল এলাকার প্রায় ২০/২৫ জন কৃষক জানান, তাদের বিলের পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে ফর্কিনী ও বারনই নদী। এসব নদীর পানি সুবিধামত বিলে ঢুকানো ও বাহির করার জন্য বিল এলাকায় এরশাদ আমলে নির্মিত স্লুইস গেইট গুলোর অধিকাংশই এখন ভেঙ্গেচুড়ে আকেজো হয়ে পড়েছে। ফলে নদীর পানি এখন সামান্য পরিমান বাড়লে তা স্লুইচ গেইটেরর ভাঙ্গাচোরা ফাক ফোকর দিয়ে সহজেই বিলে প্রবেশ করতে পারে। এভাবে পানি প্রবেশ করার ফলে বিলের নীচু জমি এক সময় তলিয়ে যায়। এসব নীচু জমিতে এখন রোপন করা আছে বোরো ধান। ধান গুলো ক্রমেই পাকতে শুরু করেছে। আর ১০/১২ দিনের মধ্যেই এই ধান পুরোদমে কাটা শুরু করা যাবে। কৃষকদের আশংঙ্কা এই অল্প দিনের মধ্যেই যদি এভাবে বিলের পানি বাড়াতেই থাকে তাহলে তারা বিলের নীচের ধান কাটতেই পারবেন না। সোনাবিলার এক ধানচাষী আব্দুস সামাদ জানান, তিনি ওই বিলে ষোল বিঘা জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছেন। তার অভিযোগ গত কয়েকদিনে ফর্কিনী নদীর পানি বাড়তে থাকায় তা মোহনপুর রাস্তায় নির্মিত স্লুইচ গেইট দিয়ে বিলে প্রবেশ করা শুরু করেছে। তার মতে এভাবে বিলে পানি প্রবেশ চলমান থাকলে তাদের ধান ডুবে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। তবে তারা বিষয়টি স্থানীয় কৃষি বিভাগকে জানিয়েছেন। ওই বিলের ধান চাষী খোরশেদ, দুলাল, মমতাজ প্রায় একই আশঙ্কার কথা ব্যক্ত করে জানান, এখন ধানকাটা শ্রমিকের বড়ই সংকট। আর এ সময় বন্যা চলে আসলে তারা উভয় সংকটে পড়বেন। কৃষকদের এমন সংকটের বিষয়ে জানতে চাইলে বাগমারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শরিফ আহম্মেদ জানান, হটাৎ নদ নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টি শুনে তিনি কৃষি অফিসারকে নিয়ে কয়েকটি এলাকা পরিদর্শন করছেন। অতি দ্রুত সময়ে এই পানি বের করে দেওয়ার জন্য নাটোরের নলডাঙ্গায় বারনই নদীতে স্থাপিত রাবার ড্যামটি খুলে দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। একই অভিমত ব্যক্ত করে উপজেলা কুষি অফিসার ড. রাজিবুর রহমান জানান, রাবার ড্যাম খুলে দেওয়ার জন্য র্যাবার ড্যাম অলরেডি খুলে দেওয়া হয়েছে। পানি নামতে দুই চার দিনে সময় লাগবে।