প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের স্বাস্থ্য নির্দেশিকা কঠোরভাবে মেনে শ্রমিকদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে পারলে রোজার মাসের মধ্যে সীমিত আকারে কিছু গার্মেন্টস ও শিল্প কারখানা চালু করা যেতে পারে। বিশেষ করে যেগুলো রপ্তানি বেজড।
আজ সোমবার সকালে গণভবন থেকে সর্বশেষ করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে ঢাকা এবং ময়মনসিংহ বিভাগের আটটি জেলার সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে মতবিনিময়কালে তিনি একথা বলেন।
তিনি বলেন, লকডাউন নিশ্চিত করে সীমিত পর্যায়ে হলেও উৎপাদন অব্যাহত রাখতে হবে। সেটি কীভাবে করা যায় নিশ্চিত করতে হবে। তবে এজন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার শর্ত মেনেই কাজ করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সামনে রমজান মাস। আমরা তো সবাইকে বসিয়ে রাখতে পারব না। কিছু কিছু ফ্যাক্টরি খোলা রাখতেই হবে। তবে সবাইকে একসঙ্গে আনা যাবে না এবং সুরক্ষা দিয়ে সীমিত আকারে তাদের আনার ব্যবস্থা করতে হবে।
তিনি বলেন, করোনার কারণে সারা বিশ্ব আজ আতঙ্কিত। সারাবিশ্বের প্রায় আড়াই শ কোটি মানুষ ঘরবন্দি। আমার মনে হয় সারাবিশ্বে আগে কখনো এমন পরিস্থিতি দেখেনি। করোনায় গোটা বিশ্বের অর্থনীতি স্থবির। বন্ধ রয়েছে মসজিদ-মন্দির-গির্জা,প্যাগোডাসহ সব প্রার্থনার কেন্দ্র। কাজেই সকলকে ঘরে বসেই নামাজ আদায় এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে হবে।
তিনি সকলকে সতর্ক করে বলেন, এপ্রিল মাসটি আমাদের জন্য একটু কষ্ট হবে। এ মাসে সাবধানে থাকতে হবে। তারপরও ইউরোপ-আমেরিকায় যে পরিমাণ রোগ সংক্রমিত হয়েছে তার তুলনায় আমাদের দেশে কম। যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র অনেক উন্নত দেশেই বাঙালি মারা গেছে।
গার্মেন্টস মালিকরা করোনার সুরক্ষা সামগ্রী তৈরির নামে অন্য কাজ করছেন এবং কিছু গার্মেন্টস কারখানার সমন্বয়ের অভাবে গাজীপুর জেলা আজ করোনা আক্রান্ত বলেও ভিডিওতে কনফারেন্সে অভিযোগ করেন পুলিশ সুপার শামছুন্নাহার।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেব। আমি পরবর্তীতে গার্মেন্টস মালিকদের সঙ্গে বসব।
ভিডিও কনফারেন্সের শেষ পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা এবং কেন্দ্রীয় ওষধাগারের (সিএমএসডি) কর্মকর্তাদেরদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বিভিন্ন মেডিক্যাল সামগ্রীর সরবরাহ নেওয়ার সময় কেবল মোড়ক না দেখে ভেতরের বস্তুটিও দেখে এবং বুঝে নেয়ার নির্দেশ দেন। এ ধরনের কিছু অভিযোগ তাঁর নিকট আসারও ইঙ্গিত করেন প্রধানমন্ত্রী।
সিএমএসডির পরিচালককে উদ্দেশ্যে করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আমাদের মন্ত্রীর কাছে কিছু ছবি পাঠিয়েছি। যারা সাপ্লাই দেয়, তারা কি সঠিকভাবে সবকিছু দিচ্ছে কিনা? নাম দিচ্ছে ভালো কিন্তু সঠিকভাবে ঠিক জিনিসগুলো যাচ্ছে না। এটা আপনাদের দেখা উচিত।
প্রধানমন্ত্রী বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে বলেন, এন ৯৫ লেখা বক্স কিন্তু ভিতরে যে জিনিটা, সেটা সঠিক থাকে কিনা। যেটা আপনাদের দেখা দরকার। মহানগর হাসপাতালে (বাবুবাজার) এটা গেছে, এটাতো কোভিডের জন্য ডেডিকেটেড। যদি এমনটা কিছু কিছু জায়গায় হয়, তাহলে তো ঠিক নয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নজরদারি বাড়ানোর প্রয়োজন বা যিনি এটা গ্রহণ করবেন তিনি যেন দেখেশুনে তা গ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রী দুর্যোগের সময় ভেঙে না পড়ে বরং সাহসের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্যও দেশবাসী প্রতি আহবান জানান।
তিনি বলেন, ‘দুর্যোগ আসে এবং তাকে মোকবেলাও করতে হয়। যেজন্য যথেষ্ট প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে। তবে, জনগণের সহযোগিতা চাই এজন্য যাতে এই রোগের প্রাদুর্ভাবটা ছড়িয়ে না পড়ে। সকলের সচেতনতা এখানে একান্ত অপরিহার্য। প্রধানমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘শিগগির সংকট কেটে যাবে। কিন্তু সাহসের সঙ্গে আমাদের এই সংকট মোকাবেলা করতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের কথা চিন্তা করেন, সমগ্র বাঙালি জাতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে অস্ত্র হাতে তুলে যুদ্ধ করে বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল।
তিনি বলেন, ‘অনেকেই সবকিছু ছেড়ে দিয়ে অস্ত্র হাতে নেমে পড়েছিল, তাদের পোশাক ছিল না, একেবারে খালি পায়ে। লুঙ্গি পড়ে অস্ত্র নিয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল। মনে সাহস নিয়েই আমরা বিজয় অর্জন করেছি।
বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, এবারও করোনাভাইরাসে সেই সাহস নিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। এখানেও বাঙালিকে জয়যুক্ত হতে হবে। সেই চিন্তা ভাবনা নিয়েই আমরা কাজ করছি।
ভিডিও কনফারেন্সে জেলার প্রশাসনসহ মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ, জনপ্রতিনিধি, সিভিল সার্জনসহ চিকিৎসকগণ, স্থানীয় মসজিদের ইমাম, আইনশৃংখলা রক্ষাকারি বাহিনী ও সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিনিধিগণ এবং স্থানীয় সাংবাদিকসহ ঢাকার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং আইইডিসিআর সংযুক্ত ছিল।
জেলাগুলো হচ্ছে ঢাকা বিভাগের মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, টাঙ্গাইল এবং কিশোরগঞ্জ এবং ময়মনসিংহ বিভাগের জামালপুর, শেরপুর, নেত্রকোনা এবং ময়মনসিংহ সদর।