ওবেসিটিতে ভুগলে করোনা আক্রান্তের ভয় বেশি। হৃদরোগ, কিডনির অসুখে ভুগতে থাকা মানুষদের মতোই এরাও ঝুঁকির বৃত্তে আছেন। বিএমআই (বডি-মাস ইনডেক্স) যদি ৩৫ পেরিয়ে প্রায় ৪০-এর ধারেকাছে চলে যায় বা পেরিয়ে যায়— চিকিৎসার পরিভাষায় যাকে ২ ডিগ্রি ওবেসিটি বলে তা ছুঁলেই বিপদ কিন্তু শিয়রে। আবার এর সঙ্গে যদি ওবেসিটির সম্পর্কিত অসুখবিসুখ, যেমন ডায়াবিটিস, হাইপ্রেশার, হাই কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইড বা ধূমপানের অভ্যাস থাকে তাতে বিপদ বাড়ে বহু গুণ।
ওবেসিটি ও বিএমআই: আপনার ওজন স্বাভাবিক আছে না তার চেয়ে বেশি, তা মাপার সূচক হল বিএমআই। এমনিতে মোটা কি না, কতটা মোটা, সে সব তো চোখে দেখেই বোঝা যায়, তবে তার সঙ্গে রোগশোকের সম্পর্ক বার করতে গেলে বিজ্ঞানসম্মত একটা সূচকও দরকার। বিএমআই হল সেই সূচক। কীভাবে হিসেব করবেন? কঠিন কিছুই নয়। ওজন কেজিতে মেপে নিন। উচ্চতা মাপুন মিটারে। এবার ওজনকে ভাগ করুন উচ্চতার বর্গ দিয়ে। ভাগফল ১৮.৫-২৫-এর মধ্যে এলে ওজন একদম ঠিকঠাক। ২৫-৩০-এর মধ্যে এলে হালকা একটু মোটার দিকে হলেও সমস্যা নেই। উপরে যে সমস্ত অসুখ-বিসুখের কথা বলা আছে, তা না থাকলে তো আরও সুবিধা ৩০-৩৫ হলে স্থুল । তবে বডিবিল্ডার হলে আলাদা কথা। কারণ তাদের ওজন চর্বির জন্য হয় না, পেশি সুগঠিত থাকে বলে বিএমআই একটু বেশি আসে। তবে উপরের সমস্যাগুলির মধ্যে কিছু থাকলে তাকেও সাবধান হতে হবে। ৩৫-৪০ বেজায় ওজন। তখন কিন্তু ২ ডিগ্রি ওবেস। আর ৪০-এর উপর হওয়া মানে মরবিড ওবেসিটির পর্যায়ে।
কেন বিপদ: বিজ্ঞানীদের মতে ওজন বাড়ার সঙ্গে যদি ডায়াবেটিস-হাইপ্রেশার বা হাইকোলেস্টেরল-ট্রাইগ্লিসারাইডের মধ্যে এক বা একাধিক অসুখ থাকে, তা হলে শরীরে প্রদাহের প্রবণতা বেড়ে যায়, দুর্বল হয় শরীরের রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থা। বাড়ে যে কোনও সংক্রমণের শঙ্কা ও জটিলতা। ‘সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রল অ্যান্ড প্রিভেনশন’-এর তরফ থেকে জানানো হয়েছে, যাঁদের ওজন খুব বেশি থাকে, বিএমআই প্রায় ৪০-এর কাছাকাছি বা বেশি, তাদের বেশির ভাগের মধ্যেই মেটাবলিক সিনড্রোম থাকে বলে কোভিড ১৯ হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। জটিলতার আশঙ্কাও থাকে অনেক বেশি।
সমাধানের উপায়: ঘরে বসে থেকে ওজন যাতে আরও না বাড়ে সে দিকে খেয়াল রাখুন। খাওয়ার নিয়মের সঙ্গে এক-আধটু ব্যায়াম করা যায় কি না দেখুন। না হলে ছাদে কিছু ক্ষণ অন্তত হাঁটাহাটি। ধূমপান করবেন না। আশপাশে কেউ করলে সেখান থেকে সরে যান। ব্যায়াম যেমন করবেন, বিশ্রামও নেবেন পর্যাপ্ত। ভালো করে ঘুমোবেন। কোনও অসুখ থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ মতো ওষুধপত্র খান নিয়ম করে। সাধারণ জ্বর-সর্দি-কাশিও যাতে না হয়, সে দিকে সচেষ্ট থাকুন। হাতে সময় আছে। কাজেই এই সুযোগে ফোনে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে ডায়েটিং শুরু করতে পারেন। রাতারাতি কিছু হবে না ঠিকই। তবে অতিরিক্ত ওজনের ৫ শতাংশও যদি কমিয়ে ফেলা যায়, প্রেশার-সুগার-কোলেস্টেরল সবই কমতে শুরু করবে। কমবে প্রদাহের প্রবণতাও।