দিনাজপুরে আরো একজন করোনা রোগি শনাক্ত হয়েছে। এই নিয়ে দিনাজপুর জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ৮
জনে দাড়ালো। পার্বতীপুর পৌর এলাকায় একজন করোনা আক্রান্ত রোগী সনাক্ত হওয়ার
রেলওয়ে ষ্টেশন সহ ২০ টি বাড়ী লক ডাউন ।
দিনাজপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. আব্দুল কুদ্দুস বুধবার সন্ধ্যা ৭টায় জেলায়
নতুন একজন আক্রান্তের খবরটি নিশ্চিত করেন। এর আগে গত মঙ্গলবার প্রথমবারের মত ৭
জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগি শনাক্ত হয়। নতুন আক্রান্ত ব্যক্তির নাম মানিক
শাহ। সে পার্বতীপুর পৌরসভার নামাপাড়া এলাকার বাসিন্দা এবং নারায়নগঞ্জ ফেরত বলে
জানান তিনি।
এদিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় দিনাজপুর জেলা লকডাউন ঘোষণা
করেছে জেলা প্রশাসন। বুধবার (১৫ এপ্রিল) সন্ধ্যায় করোনা মনিটরিং কমিটির সভা
শেষে এই ঘোষণা দেয়া হয়।
দিনাজপুর জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ৮ জনের মধ্যে ৭ জন পুরুষ ও একজন মহিলা।
আক্রান্তদের মধ্যে সদর উপজেলায় ৩ জন, নবাবগঞ্জে ৩ জন, ফলবাড়ীতে একজন ও
পার্বতীপুরে একজন।
দিনাজপুর সদর উপজেলার আক্রান্ত ৩ জন হলেন সোহাগ (২৫) ও লাকি আক্তার (১৮)
দম্পত্তি। তারা শহরের সুইহারী সরকারি কলেজের মোড় আদিবাসী কালচারাল সেন্টারের
এলাকার বাসিন্দা, আরেক জন বিক্রম রায় (২৩)। তার বাড়ি নয়নপুর গ্রামে।
নবাবগঞ্জ উপজেলার ৩ জনের মধ্যে সামিউল ইসলাম (২৪), শাহাবুদ্দিন (৫০) ও ইমানুর।
ফুলবাড়ী উপজেলার একজন হলেন উপজেলা খয়েবাড়ি মধ্যমপাড়া এলাকা গ্রামের বাসিন্দা
এনামুল হক (৩০)। পার্বতীপুরের একজন হলেন পার্বতীপুর পৌরসভার নামাপাড়া এলাকার
বাসিন্দা নারায়নগঞ্জ ফেরত মানিক শাহ।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের এলাকাগুলো ইতোমধ্যে ই লকডাউন করা হয়েছে।
তারা সবাই আগে থেকে হোম কোয়ারেন্টাইলে থাকলেও বুধবার তাদেরকে হাসপাতালের
আইসোলেশন বিভাগে নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা. মো. আব্দুল
কুদ্দুস।
দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. নির্মল চন্দ্র
দাস জানান, হাসপাতালে করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য স্থাপিত পিসিআর মেশিনে
পরীক্ষা কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি। এ মেশিনের কার্যক্রম চালু হতে আরো ১০ থেকে
১৫ দিন সময় লাগতে পারে বলে জানান তিনি।
এদিকে দিনাজপুরে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় দিনাজপুর জেলাকে
লকডাউন ঘোষণা করেছেন জেলা প্রশাসক মো. মাহমুদুল আলম। বুধবার সন্ধ্যা ৭টায়
করোনা মনিটরিং কমিটির এক সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
দিনাজপুর জেলা লকডাউনের ফলে দিনাজপুরের সাথে অন্য জেলার মধ্যে সব ধরনের
যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হবে। পাশাপাশি সামাজিক দুরত্ব রক্ষায় কঠোর ব্যবস্থা
নেবে প্রশাসন। তবে জরুরী সেবাসহ কাঁচা বাজার, ঔষধের দোকান ও খাদ্য পরিবহন
স্বাভাবিক থাকবে। অতি জরুরী প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হলে আর্থিক জরিমানাসহ
অন্য কোন শাস্তি দেয়া হবে।
লকডাউন ঘোষণার সাথে সাথে সেনা, পুলিশ ও র্যাব সদস্যদের টহল বাড়ানো হয়েছে।
সন্ধ্যার মধ্যে দিনাজপুর শহর ফাঁকা হয়ে গেছে। ঘরে ফিরে গেছে সাধারণ মানুষ।
অপরদিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের সার্বিক অবস্থা তদারকি করছেন স্বাস্থ্য
বিভাগের কর্মীরা।
আজ ১৬ এপ্রিল সকালে পার্বতীপুর রেলওয়ে প্লাটফরম ও থানা এলাকা লক ডাউন করে দেন
রেলওয়ে থানার ওসি এমদাদুল হক। গতকাল পার্বতীপুর পৌর এলাকায় একজন করোনা
আক্রান্ত রোগী সনাক্ত হওয়ার কারণে রেল এলাকায় অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে এ
ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
অদ্য ১৬ এপ্রিল তারিখে পার্বতীপুর উপজেলায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির
পরিবারসহ লকড ডাউনকৃত ২০টি পরিবারের মধ্যে পার্বতীপুর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ
থেকে ত্রান সামগ্রী বিতরন করা হয়।
পার্বতীপুরের নামা পাড়ায় করোনা রুগী সনাক্তের পর তার চারপাশের ২০ বাড়ীকে
লকডাউন করা হয়েছে। ত্রান সহায়তা পৌছে দিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন। সেই সাথে মানিক
শাহ এর সাথে যারা সঙ্গ দিয়েছেন তাদের নিজ দায়িত্ব হোমকোয়ারেন্টাইনে যাওয়ার
জন্য বলা হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের নজরদারী জোরদার করা হয়েছে।