করোনার আতঙ্কে পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রহিমা খাতুন দীর্ঘ ১৮ দিন ধরে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তিনি একই সাথে পরিবার পরিকল্পনা অফিসের মেডিকেল অফিসারের দায়িত্বেও আছেন। ওই কর্মকর্তা অফিসে না আসায় করোনার দুর্যোগকালীন অবস্থায় অফিসের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। এছাড়া তার স্বাক্ষরের অভাবে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসের আওতাধীন ৩৪ জন কর্মচারী আজ পর্যন্ত মার্চ মাসের বেতন পায়নি। এনিয়ে কর্মচারীদের মধ্যে প্রচণ্ড ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে কর্মচারীদের পীড়াপীড়িতে ওই কর্মকর্তা রবিবার গাজীপুর থেকে ভাঙ্গুড়াতে এসেছেন। তবে তিনি হোম কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
সূত্র জানায়, গত ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। এতে ২৫ মার্চ দুপুরে অফিস করে রহিমা খাতুন গাজীপুরের জয়দেবপুরে তার বাসায় চলে যান। সেখানে তিনি সপরিবারে বসবাস করেন। অথচ সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক সাধারণ ছুটিতে সকল সরকারি কর্মকর্তাকে নিজ কর্মস্থলে থাকার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এরপর থেকে তিনি গাজীপুরের বাসায় অবস্থান করে মোবাইল ফোনে অফিসের কর্মচারীদের কাজের নির্দেশনা দিচ্ছেন। তার অনুপস্থিতির কারণে এই অফিসের ৩৪ জন কর্মচারীর গত মার্চ মাসের বেতন ব্যাংকে জমা হয়নি। বিষয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার হালিমা খাতুন জেনেও কোনো ব্যবস্থা নেননি অভিযোগ কর্মচারীদের। এ অবস্থায় অফিসের ক্ষুব্ধ কর্মচারীরা ওই কর্মকর্তার ভয়ে প্রতিবাদ করতেও সাহস পাচ্ছেন না। তবে কর্মচারীদের পীড়াপীড়িতে রবিবার রহিমা খাতুন সপরিবারে গাজীপুর থেকে ভাঙ্গুড়ায় এসেছেন। ভাঙ্গুড়া পৌঁছে তিনি হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অফিসের এক কর্মচারী বলেন, পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রহিমা খাতুন সপরিবারে ঢাকায় বসবাস করেন। সেখান থেকে তিনি সপ্তাহে একদিন বা দুইদিন ভাঙ্গুড়া এসে অফিস করেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানে। সম্প্রতি করোনা ভাইরাসের কারণে তিনি গত ১৮ দিন যাবৎ অফিসে আসেন না। এতে কর্মচারীরা মার্চ মাসের বেতন পাচ্ছে না। তাকে অনেক অনুরোধ করা হয়েছে অফিসে আসার জন্য। কিন্তু তিনি আসেননি। এরপরে রবিবার এসেও হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন।
অভিযোগের ব্যাপারে পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রহিমা খাতুন বলেন, তার দুইটি মেয়ে অসুস্থতার কারণে তিনি গত ১৮ দিন ঢাকায় অবস্থান করছিলেন। তবে তিনি রবিবার ভাঙ্গুড়াতে এসে হোম কোয়ারান্টিনে রয়েছেন বলে জানান। এছাড়া নিয়মিত অফিসে অনুপস্থিত থাকার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, ঢাকায় পরিবার-পরিজন থাকার কারণে মাসে দুয়েকদিন তিনি অফিসে অনুপস্থিত থাকেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার হালিমা খানম বলেন, পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা কারোর কথায় ভ্রুক্ষেপ করেন না। তিনি নিয়মিত অফিস না করায় আমরাও বিব্রত। তার অনুপস্থিতির কারণে কর্মচারীদের বেতন আটকে থাকার ঘটনা খুবই দুঃখজনক বিষয়। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করা হবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ আশরাফুজ্জামান বলেন, একজন কর্মকর্তার এমন দায়িত্ব অবহেলা কিছুতেই মেনে নেওয়া যাবে না। তার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।