ঈশ্বরদীতে হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলা বিএনপি’র মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ৯ জনসহ ৪৭ জন খালাস

ঈশ্বরদী (পাবনা) সংবাদদাতাঃ
ঈশ্বরদী রেলস্টেশনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলায় মৃত্যুদন্ডাদেশ পাওয়া বিএনপি’র ৯ জনসহ সকলকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট। বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি মুহাম্মদ মাহবুব উল ইসলাম ও বিচারপতি হামিদুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।

আদালতে আসামিপক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী কায়সার কামাল, আইনজীবী মো. মাকসুদ উল্লাহ, আইনজীবী জামিল আক্তার এলাহী এবং এ এইচ এম কামরুজ্জামান মামুন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ মুজিবুর রহমান।

এরআগে গত ৩০ জানুয়ারি ডেথ রেফারেন্স, আপিল ও জেল আপিলের ওপর শুনানি শেষে রায়ের জন্য আজ ৫ ফেব্রুয়ারী দিন ধার্য করেছেন হাইকোর্ট।

এ বিষয়ে আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, মামলায় আইনের অপপ্রয়োগ হয়েছে। অভিযোগ না থাকা সত্বেও ৯ জনকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়, যা বিদ্বেষপূর্ণ বিচার। তদন্ত ছিল ঔদ্ধত্যপূর্ণ দায়সারা গোছের ও কাল্পনিক। অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা মেটানো ও কাউকে খুশি করার জন্য বিচারিক আদালতে ওই রায় দেওয়া হয়েছিল। বিচারিক আদালতের রায়ে দন্ডিত ৪৭ জনের মধ্যে দু’জন মারা গেছেন। মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ৯ জন ছাড়া বাকিরা গত ৫ আগস্টের পর ২৭ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিজয়-৭১-এর ১১ আদালতের আদেশে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ মুজিবুর রহমান বলেন, ডেথ রেফারেন্স, আসামিদের আপিল ও জেল আপিলের ওপর শুনানি শেষে আদালত ৫ ফেব্রুয়ারি রায়ের জন্য দিন ধার্য করেন।

প্রসংগত: আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর উত্তরাঞ্চলে দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দিতে ট্রেনে খুলনা থেকে সৈয়দপুর যাচ্ছিলেন। ট্রেনটি ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন স্টেশনে ঢোকার সময় ট্রেনবহর লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ ও বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। ঈশ্বরদী জিআরপি (রেলওয়ে পুলিশ) থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম এঘটনায় বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলায় তৎকালীন ছাত্রদল নেতা ও ঈশ্বরদী পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক (স্থগিত কমিটি) জাকারিয়া পিন্টুসহ সাতজনকে আসামি করা হয়।

মামলা দায়েরের পরের বছর কোনো সাক্ষি না পেয়ে পুলিশ আদালতে চূড়ান্ত অভিযোগপত্র জমা দেয়। কিন্তু আদালত সে অভিযোগপত্র গ্রহণ না করে অধিক তদন্তের জন্য মামলাটি সিআইডিতে পাঠান। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর মামলাটির পুনঃতদন্ত হয়। ১৯৯৭ সালের ৩ এপ্রিল পুলিশ ঈশ্বরদীর বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীসহ ৫২ জনের নামে আদালতে আবার অভিযোগপত্র জমা দেয়।

২০১৯ সালের ৩ জুলাই এই মামলায় রায় দেন স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল-৩-এর ভারপ্রাপ্ত বিচারক ও পাবনার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. রুস্তম আলী। রায়ে ৯ জনকে মৃত্যুদন্ড, ২৫ জনকে যাবজ্জীবন এবং ১৩ জনকে ১০ বছর করে কারাদন্ডের আদেশ দেওয়া হয়। সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা সকলে বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদলের সাবেক ও বর্তমান নেতা-কর্মী।

নয়জন মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্তরা হলেন কেন্দ্রীয় বিএনপি’র নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক পৌর মেয়র মোকলেসুর রহমান ওরফে বাবলু, ঈশ্বরদী পৌর বিএনপি’র (স্থগিত কমিটি) সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টু, তৎকালীন জেলা বিএনপি’র মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক কে এম আখতারুজ্জামান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক নেতা মাহবুবুর রহমান ওরফে পলাশ, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আজিজুর রহমান ওরফে শাহীন, সাবেক ছাত্রদল নেতা রেজাউল করিম ওরফে শাহিন, ঈশ্বরদী পৌর যুবদলের সভাপতি নূরে মোস্তফা শ্যামল, বিএনপির নেতা ও সাবেক কমিশনার শামসুল আলম ও বিএনপি নেতা মো. অটল। ##