মোঃ নূরুল ইসলাম, চাটমোহর (পাবনা)
শহরের গলি দিয়ে হাতে টানা রিকশায় চড়ে যাচ্ছেন একজন মেয়ে। একহাতে বই, আরেক হাতে বীণা। গানের ক্লাস শেষে বাড়ি ফিরছেন তিনি। তার বাহনের প্রতিক রাজহাঁসও রয়েছে। যেন সরস্বতী দেবীর রূপ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে অত্যন্ত সুনিপুণভাবে।
কারুকার্য দেখে বোঝার উপায় নেই শুধুমাত্র কাগজ আর বাঁশের ব্যবহারে নির্মাণ করা হয়েছে এই সুন্দর প্রতিমা। শুধু তাই নয়, এটি নির্মাণে প্রায় ৮০ জন শিক্ষার্থী টানা ২১ দিন কাজ করেছেন। আর এটি নির্মাণে খরচ হয়েছে প্রায় এক লাখ টাকা। শিক্ষার্থী ও স্থানীয় যুবসমাজ নিজেরা চাঁদা দিয়ে নির্মাণ ব্যয় জুগিয়েছেন।
সোমবার (০৪ ফেব্রুয়ারি) পাবনার চাটমোহর উপজেলার বোঁথড় চড়কবাড়ি মাঠে দেখা গেছে ব্যতিক্রম ও নজরকাড়া সরস্বতী দেবীর এই প্রতিমাটি।
চাটমোহরের সন্তান যারা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তারা এবার ব্যতিক্রম কিছু করার চেষ্টায় এই প্রতিমা নির্মাণ করেছেন। যারাই দেখছেন তারা সবাই প্রশংসা করছেন।
বোঁথড় চড়কবাড়ি এলাকার জাগতিক সংঘের সাধারণ সম্পাদক সমীর বিশ্বাস বলেন, ‘বর্তমানে সচরাচর মানুষ ডিজে প্যান্ডেল সাজিয়ে অনুষ্ঠান করে। আমরা যুব সমাজ মনে করলাম গতানুগতিক ছেড়ে আলাদা বা ভিন্ন কিছু করবো। পুরোনো কিছু ভাল জিনিস আছে, যা পুরোনো বলেই সব শেষ হয়ে যায় তা নয়। আমরা সেই পুরোনো স্মৃতিগুলো মানুষের মাঝে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।’
সমীর বিশ্বাস জানান, গত ২১ দিন ধরে এই প্রতিমাটি নির্মাণ করা হয়েছে। সোমবার (০৩ ফেব্রুয়ারি) সকাল দশটায় নির্মাণকাজ শেষ হয়। চাটমোহরের সন্তানরা যারা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে তারা প্রায় ৮০ জন মিলে এটি নির্মাণ করেছে। আর এই ব্যতিক্রম প্রতিমা নির্মাণে খরচ হয়েছে প্রায় এক লাখ টাকা। আর নিজেরা চাঁদা দিয়ে ব্যয় বহন করেছে তারা।’
এই শিল্পকর্মের প্রধান ভাস্কর শিল্পী ইউডা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন অ্যাণ্ড আর্টস বিভাগের শিক্ষার্থী রতন বর্মণ ও আরেক ভাস্কর্য শিল্পী কৈলাশ চক্রবর্তী বলেন, ‘আমরা প্রতিবছরই সরস্বতী পূজায় সবাই কিছু না কিছু কাজ করি। এবার নতুন কিছু করতে চেয়েছি। তাই শুধুমাত্র খবরের কাগজ, কার্টুন বক্স, বাঁশপাতার কাগজ ও বাঁশের ব্যবহার করে এই অনিন্দ্য সুন্দর প্রতিমাটি নির্মাণ করেছি।’
রতন বর্মণ বলেন, আমাদের প্রাণের চাটমোহর শহরকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। চাটমোহরেরই একজন মেয়ে গানের ক্লাস শেষে হাতে টানা রিকশায় চড়ে পুরোনো চাটমোহর শহরের গলি দিয়ে বাড়ি ফিরছেন-এমন বিষয়টি তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। এটি মানুষকে আবেগ তাড়িত করবে, আলাদাভাবে নাড়া দেবে। সবাই প্রশংসা করছে দেখে ভাল লাগছে আমাদের।