বড় বোনের প্রতি- চার দিনের ইতালি সফরের দ্বিতীয় দিনে বুধবার সকালে রোমে বাংলাদেশ দূতাবাসের নতুন চ্যান্সেরি ভবন উদ্বোধন করতে কার্ডিগান ও কালো গাউন বা লং কোট পড়ে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় আসেন ছোট বোন শেখ রেহানা ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুলও। ছোট বোন শেখ রেহানা আসেন কার্ডিগান ও শাল পড়ে।
প্রধানমন্ত্রী সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে ইতালির রাজধানীর ভিয়া ডেল’ অ্যান্ট্রাটাইড এলাকায় ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে পাঁচ তলা চ্যান্সেরি ভবন উদ্বোধন করে ভবনটি পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি কালো গাউনটি খুলে রাখেন। পরে দূতাবাস প্রাঙ্গণে স্থাপন করা শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করতে যাবেন তখন বাইরে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার ঠান্ডা।মাঠে মিনিটখানেক দাঁড়ানো প্রধানমন্ত্রীর ঠান্ডা লাগছিল। এমন সময় দ্রুততার সঙ্গে ছোট বোন শেখ রেহানা তাঁর গায়ে থাকা শাল খুলে প্রধানমন্ত্রীকে পরিয়ে দেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছোট বোন শেখ রেহানাকে বলেন- তোমার তো ঠান্ডা লাগবে। ছোট বোন শেখ রেহানা বলেন কিছু হবে না।
বড় বোনের প্রতি ছোট বোনের এই নিঃস্বার্থ ভালোবাসা উপস্থিত সবাইকে মুগ্ধ করে তোলে।পরে প্রধানমন্ত্রী ভাষা আ’ন্দো’লনের শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে দূতাবাস প্রাঙ্গণে স্থাপন করা শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
এরপর তিনি চ্যান্সেরি ভবনের অভ্যন্তরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুল এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, রোমে নিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত আব্দুস সোবহান সিকদার, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহ্সানুল করিম ও দূতাবাসের সিনিয়র কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী চ্যান্সেরি ভবনের বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে দেখেন। এ সময় তিনি দর্শনার্থী বইয়েও স্বাক্ষর করেন।দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, তাঁর সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর যেসব দেশে বেশি বাংলাদেশি বসবাস করছে সেসব দেশে নিজস্ব চ্যান্সেরি ভবন এবং দূতাবাস নির্মাণের পদক্ষেপ নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে যেসব দেশে অনেক বেশি বাংলাদেশি বসবাস করছেন সেখানে বাংলাদেশের নিজস্ব চ্যান্সেরি ভবন নির্মাণ করতে বলেছি।’
তিনি বলেন, ‘আমি আজ খুব আনন্দিত যে, আমরা ইটালিতে আমাদের নিজস্ব চ্যান্সেরি ভবন খুলতে পেরেছি। ইউরোপে ব্রিটেনের পরে এখানেই সর্বাধিক সংখ্যক বাংলাদেশি বসবাস করছেন।’রোমে চ্যান্সেরি ভবন নির্মাণের মাধ্যমে বাংলাদেশ নিজস্ব বিল্ডিং এবং পরিচিতি পেয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি দূতাবাস বিদেশের মাটিতে একটি দেশের প্রতিনিধিত্ব করে এবং দেশটির ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার পাশাপাশি প্রবাসীদের সেবা প্রদান করে থাকে।শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার বঙ্গবন্ধু প্রবর্তিত পররাষ্ট্রনীতি ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়’- অনুসরণ করছে।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এ সময় প্রধানমন্ত্রীকে চ্যান্সেরি ভবনের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে অবহিত করেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে ৩১টি দেশে বাংলাদেশের নিজস্ব চ্যান্সেরি এবং দূতাবাস ভবন নির্মিত হবে।শেখ হাসিনা ইতালির প্রধানমন্ত্রী জিউসেপ কোঁতের আমন্ত্রণে মঙ্গলবার বিকেলে চার দিনের এক সরকারি সফরে ইতালি রয়েছেন।