বাল্য বিবাহ ও ইভটিজিং প্রতিরোধে নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার অনন্য উদ্যোগ নিয়েছেন। ইউএনও’র বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ব্যতিক্রমী উদ্যোগে শিক্ষার্থীসহ উপজেলার নানা শ্রেণী পেশার মানুষ এখন বাল্যবিবাহ ও ইভটিজিং প্রতিরোধ করতে সূদৃঢ় ভ‚মিকা রাখছে।
বাল্যবিবাহ ও ইভটিজিং প্রতিরোধে উপজেলার জনগুরুত্বপূর্ন স্থানে দেওয়া হয়েছে বিলবোর্ড। দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লিফলেট, করা হচ্ছে বাল্য বিবাহ ও ইভটিজিং প্রতিরোধে শিক্ষার্থীদের নিয়ে পিঠা উৎসব এবং শিক্ষার্থীদের উপস্থাপনায় নাটিকা। ইতিমধ্যেই সারা ফেলেছে ইউএনও তমাল হোসেনের এসকল কার্যক্রম। যোগদানের ৭ মাসের মধ্যেই ৫৬ টি বাল্যবিয়ে বন্ধ করেছেন এবং ইভটিজারদের ধরে ভ্রাম্যমান আদালতরে মাধ্যমে জেল-জরিমানা করেছেন এই কর্মকর্তা। এ সবই সম্ভব হচ্ছে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভাবে নেওয়া ব্যতিক্রমী উদ্যোগ গুলোর ফলে। কখনও তিনি বরযাত্রী সেজে, কখনও তিনি কনে যাত্রী সেজে বাল্যবিয়ে পন্ড করেছেন। তাছাড়াও বিলবোর্ড এবং লিফলেটে দেওয়া নম্বরে ফোন কলের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত বন্ধ হচ্ছে বাল্যবিয়ে ও ইভটিজিং।
মঙ্গলবার সকালে উপজেলার পৌর সদরের বেগম রোকেয়া গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ ক্যাম্পাসে প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থীদের মাঝে দেওয়া হয় বাল্যবিয়ে ও ইভটিজিং প্রতিরোধে ইউএনও’র নম্বর সম্বলিত লিফলেট,তাছারাও স্কুলের সামনেই দেওয়া হয়েছে বিলবোর্ড। উপস্থিত সকল শিক্ষার্থীরা সেখানে সপথ নেয়, বাল্যবিবাহ ও ইভটিজিং প্রতিরোধে তারা কঠোর ভুমিকা পালন করবে। ওই বিদ্যালয়েই বাল্যবিয়ে ও ইভটিজিং প্রতিরোধ সভার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের হাতে দেওয়া হবে শীতের হরেক রকম পিঠা। সম্প্রতি গত সোমবার বিকেলে উপজেলার পৌর সদরের রোজি মোজাম্মেল মহিলা অনার্স কলেজ ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত হয়েছে বাল্যবিয়ে ও ইভটিজিং প্রতিরোধ করনীয় সভা। সভা চলাকালিন সময় কিছুক্ষণ পর পর শিক্ষার্থীদের হাতে দেওয়া হয়েছে শীতের হরেক রকম পিঠা এবং লিফলেট।
রোজী মোজাম্মেল মহিলা অনার্স কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সানজিদা ইয়াসমীনসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী তাদের অনুভুতি ব্যক্ত করে যায়যায়দিন কে বলেন, এক সময় আমরা স্কুল কলেজে যাওয়ার পথে বখাটে ছেলেরা উত্ত্যক্ত করতো। তারপরও আমাদের অনেক বান্ধবীর বাল্যবিয়ে হয়েগেছে। তবে এখন কলেজে প্রবেশের সামনেই দেখতে পাই বাল্যবিয়ে এবং ইভটিজিং প্রতিরোধ করনীয় নম্বর। সেই নম্বরে আমিও দুই দিন ফোন দিয়ে আমার দুই বান্ধবীর বিয়ে বন্ধ করেছি। ইউএনও স্যারের এমন অনন্য উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাই। তারপরও আরো বেশি সচেতন করার লক্ষে আমাদের শিক্ষার্থীদের নিয়ে করা হচ্ছে বাল্যবিয়ে ও ইভটিজিং প্রতিরোধ করনীয় সভা। সভার মধ্যেই থাকছে পিঠা ও বিনোদন। এসব আয়োজন আমাদের অনেক উৎসাহ দিচ্ছে এবং এই সময় গুলো আমাদের স্মৃতির পাতায় থাকবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ তমাল হোসেন বলেছেন, শিক্ষার্থীদের উৎসাহ করতেই আমার এই আয়োজন। প্রত্যেক শিক্ষার্থী যেন ঘটনা ঘটার সাথে সাথেই অভিযোগ করতে পারে তার জন্যে সকল জায়গায় লিফলেট, প্রচার মাইকিং, বিলবোর্ডসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সচেতনতামুলক সভা। ইতিমধ্যে উপজেলার সকল গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বাল্যবিবাহ এবং ইভটিজিং প্রতিরোধ বিষয়ক বিলবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে। বাল্য বিবাহ একটি অভিশাপ কারন এর ফলে একজন মেয়ের শিক্ষা যেমন বন্ধ হয়ে যায়, পাশাপাশি সুন্দর ভবিষ্যত নষ্ট হয়ে যায়। মেয়েরা যেন তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নির্বিঘেœ যেতে পারে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠাওে নিরাপদ থাকে সেই বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে। প্রতিটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ২০ জনের একটি গ্রæপ করে ক্যারাত প্রশিক্ষন দেওয়া হবে। যাতে করে শিক্ষার্থীরা নিজেদের আত্মরক্ষা করতে পারে।