মানুষ কত কিছুই না করছেন। আল্লাহ তা’য়ালার আদেশ অমান্য করে বিপথগামী হচ্ছেন। এটা সন্দেহাতীত যে, মৃ’ত্যুপরবর্তী রোজ কিয়ামতে হাশরের ময়দানে শুধু হযরত ইব্রাহিম (রা.) ব্যতীত প্রতিটি মানুষকে খালি পাও, উল’ঙ্গ দেহ এবং খাতনাবিহীন অবস্থায় সমবেত করা হবে এবং বেহেশত ও দোযখের চূড়ান্ত ফায়সালা হবে।
হযরত আবু হোরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, আমি এক দাওয়াতে নবী করীম (সা.)-এর সাথে ছিলাম। তিনি এরশাদ করেন, আমি কিয়ামতের দিন সকলের সর্দার হব। সে কঠিন দিনে ক’ষ্ট সাইতে না পেরে মানুষ অস্থির হয়ে যাবে এবং কার দ্বারা সুপারিশ করলে আল্লাহ্ কবুল করবেন সে রূপ লোক তালা’শ করতে থাকবে।
অ’তপর অন্যান্য নবীগণের নিকট হতে ব্যর্থ হয়ে সর্বশেষে সমস্ত লোক হুজুর (সা.)-এর কাছে এসে বলবে আপনি সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী, আমাদের ক’ষ্ট তো আপনি দেখেছেন, এখন দরবারে এলাহীতে আমাদেও জন্য সুপারিশ করুন যাতে আমাদেরকে পরিত্রাণ দেয়া হয়।
নবীজী (সা.) বলেন, আমি তখন আল্লাহ্র আরশের নিচে এসে সিজদায় পড়ে কা’ন্নাকাটি করতে থাকব। অ’তপর আল্লাহ্ও তরফ থেকে বলা হবে, আপনি মাথা উঠান এবং ফরিয়াদ পেশ করুন। আপনার ফরিয়াদ কবুল করা হবে।
হুজুর (সা.) তখন মাথা উঠাবেন এবং বলবেন, হে প্রভু! তুমি আমা’র উম্মতগণকে ক্ষমা কর। আল্লাহ্ তায়ালা বলবেন, হে আমা’র প্রিয় নবী! আমা’র বেগোনাহ বান্দাদেরকে বেহেশতের ডান দিকের দরজা দিয়ে প্রবেশ করান। এতদ্ব্যতীত অন্য দরজা দিয়েও ইচ্ছে করলে ঢুকাতে পারেন।
সে বিচারে একমাত্র যিনি সুপারিশ করতে পারবেন তিনি আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)। হযরত আউফ বি মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত রয়েছে, নবী করীম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আমা’র কাছে আল্লাহ্ তা’য়ালার কাছে থেকে এক দূত এসে জানালেন যে, আল্লাহ্ তা’য়ালা আমাকে দুটি প্রস্তাব দিয়ে পাঠিয়েছেন। এ দুটির মধ্যে থেকে যেকোনো একটি গ্রহণ করতে হবে। প্রস্তাব দুটি হলো আমা’র অর্ধেক উম্মতকে বিনা হিসেবে বেহেশতে দেয়া হবে অথবা আমি যেকোনো উম্মতের জন্য আমা’র ইচ্ছেমত সুপারিশ করতে পারব। আমি সুপারিশ করার ক্ষমতাটাকেই গ্রহণ করেছি। কাজেই অমি মুশরিক ব্যতীত সকলের জন্য শাফায়াত করব।
হযরত আবু হোরায়রা (রা.) বলেন যে, নবী করীম (সা.) ইরশাদ করেন, আল্লাহ্ তা’য়ালা সকল নবীগণকেই একটি বিশেষ ক্ষামতা দিয়েছেন। তা এটাই যে, তাঁদের একটি দোয়া অবশ্যই কবুল করা হবে। সকল নবীই প্রয়োজন মোতাবেক এক একটি জিনিস চেয়ে নিয়েছেন এবং তারা সকলেই পার্থিব জিনিস চেয়েছেন। কিন্তু আমাদের নবীজী এরশাদ করেছেন, ‘আমি এ সুযোগ পৃথিবীতে গ্রহণ করিনি। রোজ হাশরে আমি আমা’র প্রাপ্য আদায় করব এবং তা হবে আমা’র উম্মতের নাজাতের জন্য সুপারিশ করা।’
১। হাশরের ময়দানে মানুষ অ’তিষ্ঠ হয়ে অ’তি শিগগিরই হিসাব-নিকাশের কাজ শুরু করার জন্য সকল নবীগণের কাছে যেতে শুরু করবে। কিন্তু সকলেই অ’পরাগতা প্রকাশ করার পর বিশ্বনবী হযরত মুহাম্ম’দ (সা.) কাছে উপস্থিত হবে এবং তিনি পৃথিবীর সমস্ত মানবজাতির জন্য সুপারিশ করবেন।
২। দ্বিতীয় সুপারিশ হবে প্রথম দরজার মু’মিনগণকে হিসাব-নিকাশ ছাড়াই বেহেশতে যাওয়ার অনুমতি দেয়ার জন্য। এটাও শেষ নবীই (সা.) করবেন।
৩। তৃতীয় সুপারিশ হবে যারা স্বীয় অ’পকর্মের জন্য জাহান্নামে যাওয়ার উপযুক্ত হয়ে পড়েছে তাদেরকে ক্ষামা করে দেয়ার জন্য। এ সুপারিশ নবীজী করবেন। এতদ্ব্যতীত ওলামা, শুহাদা এবং অন্যান্য মু’মুমিনগণও করবেন।
৪। চতুর্থ সুপারিশ হবে ঐ সকল গোনাহগারদের জন্য যাদেরকে জাহান্নামে দাখিল করা হয়েছে তাদেরকে জাহান্নামের আ’গুন থেকে মুক্তি দেয়ার জন্য আরজ পেশ করা হবে। আম্বিয়ায়ে কেরাম এবং ফেরেশতাগণ এজন্য সুপারিশ করবেন।
৫। পঞ্চম সুপারিশ করা হবে যাদেরকে বেহেশতে দাখিল করা হয়েছে তাদের ম’র্যাদা আরও বাড়িয়ে দেয়ার জন্য।