রামিম হাসান,ঝিনাইদহ: ৬ থেকে ৭ দিন পর কৃষক শরিফুল ইসলাম ক্ষেতের ধান কাটবেন, এমনটি আশা ছিল তার। এরই মধ্যে ঘুর্ণিঝড় বুলবুল তার সেই ক্ষেতের ধানগাছ মাটিয়ে ফেলে দিয়েছে। ক্ষেতে দন্ডায়মান ধানগাছগুলো মাটিতে পড়ে গেছে। ফলে গাছে থাকা পাঁকা ধান নষ্ট হবার আশংকা দেখা দিয়েছে। কৃষকরা বলছেন, পাকা ধান এভাবে মাটিতে পড়ে যাওয়ায় ফলন অনেকটা কম হবে। যার কারনে তাদের উৎপাদন খরচ উঠবে কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
এই অবস্থা শরিফুল ইসলামের একার নয়, হাজার হাজার কৃষক তাদের ক্ষেতের ধানগাছ মাটিতে পড়ে যাওয়ায় উৎপাদন কম হবার আশংকা করছেন। কৃষকরা আমন ধান বিক্রি কিছু পয়সা পাবেন, এমনটি স্বপ্ন তারা দেখেছিলেন। তাদের সেই স্বপ্ন মাটিতে শুইয়ে দিয়েছে ঘুর্ণিঝড় বুলবুল। অবশ্য কৃষি বিভাগ বলছেন, ঘুর্ণিঝড় বুলবুলের কারনে ধানের তেমন একটা ক্ষতি হবে না। এই ঝড়ে কৃষকের ক্ষেতের ধান গাছগুলো মাটিতে পড়ে গেছে। এতে ধান উৎপাদন তেমন কমবে না, শুধু কৃষকদেরক ধান কাটায় কিছুটা সমস্যা হতে পারে।
কৃষি বিভাগ সুত্রে জানাগেছে, ঝিনাইদহ জেলায় এ বছর ১ লাখ ৪ হাজার ১২৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ হয়েছে। কৃষকরা গুটি স্বর্ণা, ব্রী-৪৯, ব্রী-৫১ সহ নানা জাতের ধান চাষ করে থাকেন। এবারও তারা নানা জাতের ধান চাষ করলেও বেশির ভাগ গুটি স্বর্ণার চাষ করেছেন। জুলাই মাসের মাঝামাঝি থেকে আমন ধান রোপন শুরু হয়। নভেম্বর মাসে ধান কাটা যাবে এমনটিই সম্ভবনা ছিল।
জেলার সদর উপজেলার বিষয়খালী, হরিপুর, তেতুলতলা, কালীগঞ্জ উপজেলার ফয়লা, শ্রীরামপুর, আলাইপুর, সিংদহ সহ বেশ কিছু এলাকা ঘুরে দেখা যায় মাঠের পর মাঠ কৃষকের ধান মাটিতে পড়ে আছে। মাত্র এক সপ্তাহ পূর্বে যে গাছগুলো ক্ষেতে দন্ডয়মান ছিল সেগুলো এখন মাটিতে পড়ে আছে। আবার অনেকে ধান কেটে জমিতে রেখে দিয়েছিলেন, সেগুলোও পানির উপর ভাষছে। কালীগঞ্জ উপজেলার আনান্দবাগ গ্রামের কৃষক হাফিজুর রহমান জানান, এবার তিনি দেড় বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছিলেন। ধানের গাছগুলোও দেখার মতো হয়েছিল। ধান গাছে যে শীষ এসেছিল তাতে ফলনও খুব ভালো হবে এটা আশা করেছিলেন। ধানও কাটার উপযোগি হয়ে পড়েছিল। কিন্তু ঘুর্ণিঝড় বুলবুল এর কারনে টানা বৃষ্টিতে তার সব ধান গাছ মাটিতে পড়ে গেছে। এখন জলাবদ্ধ মাটিতে পড়া যাওয়া ধান লেপটে আছে। এভাবে থাকলে ধানের চারা তৈরী হয়ে যাবে। তিনি বলেন এই মাটিতে লুটিয়ে পড়া গাছ থেকৈ কখনও সম্পূর্ণ ধান পাওয়া যাবে না। কিছু মাটিতে পড়ে থেকে নষ্ট হবে আর কিছু কাটার সময় ঝরে পড়বে। এতে তাদের ফলন অনেক কমে যাবে।
একই উপজেলার সিংদহ গ্রামের বাকী বিল্লাহ জানান, তিন বিঘা জমির সব ধান পড়ে গেছে। ধানের ফলনও ভাল হয়েছিল। এই ধান চাষ করেই সংসার চলে। তিনি বলেন, জমির ধানগাছ মাটিতে পড়ে যাওয়ায় কৃষি শ্রমিকরা কাটা ও মাড়াই করতে চাচ্ছেন না। অধিক টাকা দাবি করছেন তারা। একদিকে অধিক টাকার বিনিময়ে কৃষি শ্রমিক নিয়োগ অপরদিকে ধান নষ্ট হওয়ায় এবার আমন ধান চাষে তাদের লোকসান দিতে হবে।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার তেতুলতলা গ্রামের কৃষক আমিরুল ইসলাম জানান, একবিঘা জমিতে ধান চাষ করতে তাদের ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। জমির মুল্য ৫ হাজার যোগ করলে ১৪ থেকে ১৫ হাজার ব্যয়। মাঠে এবার যে ধান হয়েছিল তাতে বিঘা প্রতি ১৫ থেকে ১৬ মন ধান হবে। হিসাব অনুযায়ী কৃষক এই ধান বিক্রি করে উৎপাদন খরচ তুলবে। লাভ হবে পর্যায়ক্রমে খরচ করে একসঙ্গে টাকা পাওয়া। সেখানে ধানগাছ মাটিতে পড়ে যাওয়ায় তাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। এতে ফসল উৎপাদন অনেক কম হবে। ফলে কৃষক তার উৎপাদন খরচ তুলতে পারবে কি না তা নিয়ে সংশয় কেধা দিয়েছে।
এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক আব্দুর রউফ জানান, কৃষকের ক্ষেতের ধানগাছ এমন সময় মাটিতে পড়েছে যথন ধান পেকে গেছে। ফলে ফলনের তেমন কোনো ক্ষতি হবে না। তবে কৃষকের ধান কাটা ও মাড়াই করার ক্ষেত্রে কিছুটা সমস্যা হবে। তিনি বলেন, এক সপ্তাহ পূর্বে এভাবে ধানগাছ মাটিতে পড়লে উৎপাদন সমস্যা হতো।