যে ব্যক্তি আল্লাহ রব্বুল আলামিনের একাত্মবাদ ও রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রিসালাত পূর্ণ আন্তরিকতার সঙ্গে বিশ্বাস করে এবং তাঁর প্রতিটি হুকুম-আহকাম মেনে চলে তাকেই মুমিন বলে। অন্যভাবে বলা যায়, মহান আল্লাহ, তাঁর প্রেরিত সব নবী, রসুল, ফেরেশতা, আসমানি কিতাব, পরকাল ও তাকদিরের ওপর পূর্ণ আন্তরিকতার সঙ্গে বিশ্বাস স্থাপন করে আর ইমান গ্রহণের পর যে ব্যক্তি ইমান থেকে বিন্দুমাত্র বিচ্যুত হয়নি সে-ই প্রকৃত মুমিন। মহাগ্রন্থ আল কোরআন ও হাদিসে মুমিনের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হয়েছে। সংক্ষেপে মুমিন বান্দার কিছু গুণ ও বৈশিষ্ট্য জেনে নিই। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘প্রকৃত ইমানদার তো তারাই আল্লাহর জিকির হলে যাদের অন্তর কেঁপে ওঠে। আর আল্লাহর আয়াত যখন তাদের সামনে পড়া হয়, তাদের ইমান বেড়ে যায়।’ সূরা আনফাল, আয়াত ২। একজন মুমিন আল্লাহর ওপর ইমান আনার পর আর কখনো সন্দেহে পড়ে না। সে পূর্ণতার সঙ্গে আল্লাহর ওপর আস্থাশীল হয়। যেমন আল্লাহ নিজেই বলেছেন, ‘মুমিন তারাই যারা আল্লাহ ও তাঁর রসুলের প্রতি ইমান আনার পর আর সন্দেহে পড়ে না এবং নিজেদের মাল ও জান দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করে, এরাই সত্যবাদী।’ সূরা হুজুরাত, আয়অত ১৫। ‘তারা আল্লাহ ছাড়া আর কোনো প্রভুকে ডাকে না।’ সূরা ফুরকান, আয়াত ৬৮। মুমিনরা যে কোনো সংবাদকে যাচাই-বাছাই করে গ্রহণ করে। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! যদি কোনো পাপাচারী তোমাদের কাছে কোনো সংবাদ নিয়ে আসে, তবে তোমরা তা পরীক্ষা করে দেখবে, যাতে অজ্ঞতাবশত তোমরা কোনো সম্প্রদায়ের ক্ষতিসাধনে প্রবৃত্ত না হও। এরপর নিজেদের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত না হও।’ সূরা হুজুরাত, আয়াত ৬। অহেতুক ও অপ্রয়োজনীয় বিষয়কে মুমিন বান্দারা এড়িয়ে চলে। ইরশাদ হচ্ছে, ‘দয়াময় আল্লাহর প্রকৃত বান্দা তারাই, যারা মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় না আর অহেতুক বিষয়ের পাশ দিয়ে যখন তারা গমন করে, তখন তারা ভদ্রভাবে পাশ কাটিয়ে যায়।’ সূরা ফুরকান, আয়াত ৭২।
সফল মুমিন কারা? এ প্রশ্নের জবাবে বলা হয়েছে, ‘মুমিনগণ সফলকাম হয়ে গেছে, যারা নিজেদের নামাজে বিনয়ী-নম্র, যারা অনর্থক কথা বলে না, যারা জাকাত আদায় করে এবং নিজেদের লজ্জাস্থানকে সংযত রাখে। সূরা মুমিনুন, আয়াত ১-৪। অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আর ইমানদার পুরুষ ও ইমানদার নারী একে অন্যের সহায়ক। তারা সৎ কাজের আদেশ দেয় এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে। নামাজ প্রতিষ্ঠা করে, জাকাত আদায় করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রসুলের নির্দেশ অনুযায়ী জীবনযাপন করে। এদের ওপর আল্লাহ দয়া করবেন।’ সূরা তাওবা, আয়াত ৭১। মুমিন জিন্দেগির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো মহব্বত ও দয়া। এজন্য মুমিনকে মহব্বত ও দয়ার প্রতীক বলা হয়। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই সৎকর্মশীল মুমিনদের জন্য দয়াময় আল্লাহ তাদের (মানুষের) অন্তরে মহব্বত পয়দা করে দেন।’ সূরা মরিয়ম, আয়াত ৯৬। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘মুমিন মহব্বত ও দয়ার প্রতীক। ওই ব্যক্তির মধ্যে কোনো কল্যাণ নেই, যে কারও সঙ্গে মহব্বত রাখে না এবং মহব্বতপ্রাপ্ত হয় না।’ মুসনাদে আহমাদ।