সিলেটের নবনিযুক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন পিপিএম বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণার প্রেক্ষিতে মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশ জিরো টলারেন্স দেখাচ্ছে। মাদকাসক্তরাই সমাজে নানা অপরাধ-অপকর্ম ঘটাচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে সামাজিক ঐক্য ও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। এদেরকে পারিবারিক, সামাজিক ও সাংগঠনিকভাবে বয়কট করতে হবে। গরুচোর, ট্রান্সফরমার চোর ও ইভটিজারদের দমনে পুলিশ কোনো ছাড় দেবে না। দেশের মানুষ সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকে প্রত্যাখান করেছে। এই সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধেও পুলিশ জিরো টলারেন্স দেখাবে। যেকোনো ভাবে বিশ্বনাথ থানার ওসিকে সেগুলো বন্ধ করতে হবে। হয় চোরেরা, মাদকব্যবসায়ীরা, ইভটিজাররা থাকবে, নয় পুলিশ থাকবে। বিশ্বনাথের বাসিয়া ব্রীজ এলাকায় যারা ড্যান্ডি সেবন করে, তারা যাতে সেখানে বসতে না পারে পুলিশকে সে ব্যবস্থা নিতে হবে। উপজেলার যে সকল কিশোররা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে, তাদেরকে পারিবারিকভাবে সংশোধনের উদ্যোগ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে সামাজিক সচেতনতাও জরুরী। আজকের শিশু-কিশোররা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। এদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে হবে। যুবলীগ-ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর খাঁটি সৈনিক হিসেবে তোমাদেরকেই বিশ্বনাথের মাদকসেবী ও ইভটিজারদের প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে হবে। সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের যেসকল যানবাহন পারমিট ছাড়াই লামাকাজী-বিশ্বনাথ হয়ে রশীদপুর গিয়ে বের হয়, এইসব যানবাহনের ব্যাপারে আমি সুনামগঞ্জের এসপিসহ উচ্চপর্যায়ে কথা বলব। যেহেতু এটা আন্তঃজেলার বিষয়। তাছাড়া, লামাকাজীতে একটি পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপনের বিষয়ে আমি ভেবে দেখব। সেটা করা যায় কি না। তবে, আনিকা কমিউনিটি সেন্টার সংলগ্ন চৌরাস্তায় ট্রাফিক পুলিশের ব্যবস্থা করে দেয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, কোনো ভুক্তভোগী থানায় জিডি করতে এলে, পাঁচ মিনিটের মধ্যে জিডি নিতে হবে। কোনো অজুহাত দেখানো চলবে না। মামলার ক্ষেত্রেও থানা পুলিশের এমন ভূমিকা থাকতে হবে। থানা পুলিশ মামলা নেয় না-এটা আমি শুনতে চাই না। মামলা নেয়ার মত গ্রাউন্ড থাকলে মামলা নিতেই হবে। তবে, কেউ মিথ্যা মামলা করলে, তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। এখনকার পুলিশ প্রশাসন প্রবাসীবান্ধব। দেশে আসা প্রবাসীদেরকে সেবাদানে পুলিশ আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। একসময় লন্ডনের পুলিশের ন্যায় হবে বাংলাদেশের পুলিশ।
বৃহষ্পতিবার বিকেলে বিশ্বনাথ থানা পুলিশ আয়োজিত মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবিরোধী মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। উপজেলা সদরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে তিনি বিশ্বনাথ থানায় এসে পৌঁছলে তাকে থানা পুলিশের পক্ষ থেকে সশস্ত্র সালাম দেয়া হয়। তিনি সালাম গ্রহণ করেন।
থানার ওসি শামসুদ্দোহা পিপিএমের সভাপতিত্বে ও পরিদর্শক (তদন্ত) দুলাল আকন্দের পরিচালনায় মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার লুৎফুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গোলাপগঞ্জ সার্কেল) রাশেদুল হক চৌধুরী, বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম নুনু মিয়া, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অমিতাভ পরাগ তালুকদার, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা হাবিবুর রহমান, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ওয়াহিদ আলী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক ও দৌলতপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমির আলী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও রামপাশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলমগীর, বিশ্বনাথ সরকারী ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ সিরাজুল হক। শুরুতে ক্বোরআন তেলাওয়াত করেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের লামাকাজী ইউনিয়ন প্রতিনিধি মাওলানা বাহাউদ্দিন ও গীতা পাঠ করেন সাবেক শিক্ষক নিহার রঞ্জন চক্রবর্তী।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিশ্বনাথ প্রেসক্লাবের সভাপতি মোসাদ্দিক হোসেন সাজুল, সাংবাদিক কাজী মুহম্মদ জামাল উদ্দিন, সাইফুল ইসলাম বেগ, উপজেলা জাতীয়পার্টির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক জয়নাল আবেদীন, উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক আলতাব হোসেন, উপজেলা শ্রমিকলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব, উপজেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সমরেন্দ্র বৈদ্য সমর, উপজেলা পুরান বাজার বণিক কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন, নতুন বাজার বণিক কল্যাণ সমিতির কোষাধ্যক্ষ নবীন সোহেল, বাঁচাও বাসিয়া নদী ঐক্য পরিষদের আহবায়ক ফজল খান, জাতীয়পার্টি নেতা আবদুর রব, সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা সিতার মিয়া, যুবলীগ নেতা শাহ আলম খোকন, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শীতল বৈদ্য, সহ-সভাপতি পার্থ সারথী দাস পাপ্পু, সংগঠক মহিন চৌধুরী। অনুষ্ঠান শেষে উপজেলা সদরে থানা পুলিশের স্থাপিত ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন পিপিএম। এসময় তাকে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠন ও ব্যক্তি ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।