মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি ইলন মাস্কের অকুণ্ঠ সমর্থনের পুরস্কার হিসেবে তাকে প্রশাসনের এক গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তবে মাস্কের মতো ব্যক্তির রাজনীতিতে প্রভাব রাখার সুযোগের বিষয়টি গণতন্ত্রের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিশ্লেষকেরা।
গাড়ি নির্মাতা টেসলা, সামাজিক মাধ্যম এক্স (সাবেক টুইটার) ও মহাকাশ সংস্থা স্পেসএক্স-সহ বিশ্বের কয়েকটি বিশিষ্ট প্রযুক্তি সংস্থার মালিক ইলন মাস্ক।
মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) বিকেলে ট্রাম্প মাস্ককে একটি বিভাগের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া প্রসঙ্গে এক ঘোষণায় বলেন, ‘সরকারি ব্যয়, আমলাতন্ত্র ও নিয়ন্ত্রণ কমানোর উদ্দেশে একটি নতুন ‘সরকারি দক্ষতা বিভাগ’ (ডিওজিই)-গঠন করা হবে। তবে এই নতুন সংস্থার সঠিক অবস্থান এখনো স্পষ্ট নয়। কারণ এটি স্পষ্টতই একটি সরকারি বিভাগ হবে না।’
তবে স্বাভাবিকভাবেই এই নিয়োগ ইলন মাস্ককে সরকারি নীতির উপর প্রভাব বিস্তার করতে পর্যাপ্ত ক্ষমতা দিয়েছে। যদিও ডিওজিই-এর কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে খুব কম জানা গেছে।
রাজনীতিতে ৫৩ বছর বয়সি মাস্কের মতো অন্যান্য বেসরকারি সংস্থার মালিকদের হস্তক্ষেপ ও উপস্থিতি নিয়ে সতর্ক করে দিয়েছেন ডিজিটাল অধিকার বিশেষজ্ঞরা।
স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির সাইবার পলিসি সেন্টারের ফেলো এবং ‘দ্য টেক কুপ : হাউ টু সেভ ডেমোক্রেসি ফ্রম সিলিকন ভ্যালি’র লেখক মারিয়েটজে শ্যাক বলেন, ‘মাস্ক যে ধরনের প্রযুক্তি পরিচালনা করেন তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তার মালিকানাধীন সংস্থাগুলো অসম্ভবরকম প্রভাবশালী এবং তথ্য ও ভূ-রাজনীতিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে।’
স্বঘোষিত ‘মধ্যপন্থি’ থেকে কট্টর ডানপন্থি
১৯৯০ এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে নিজের প্রথম সংস্থা প্রতিষ্ঠার পর থেকে দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্মগ্রহণকারী মাস্ক সফল ব্যবসার একটি স্ট্রিং তৈরি করেছেন। বর্তমানে আনুমানিক ২২৪ বিলিয়ন ইউরোরও বেশি সম্পদের মালিক তিনি। তার ব্যবসায়িক সাফল্য ধীরে ধীরে তার রাজনৈতিক প্রভাব প্রসারিত করতে সহায়তা করেছে।
বর্তমানে মার্কিন মহাকাশ কর্মসূচি উপগ্রহ উৎক্ষেপণের জন্য মাস্কের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা স্পেসএক্স-এর উপর নির্ভরশীল। স্পেসএক্সের সহায়ক সংস্থা স্টারলিঙ্ক বিশ্বের কয়েকটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সরবরাহ করছে। ইউক্রেন থেকে গাজা, সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে সামরিক বাহিনীর যোগাযোগ স্থাপনের জন্য এটি একটি অপরিহার্য মাধ্যম হয়ে উঠেছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে ইলন মাস্কের সম্পৃক্ততা একটি নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে ট্রাম্পকে হত্যার চেষ্টার পরপরই মাস্ক প্রকাশ্যে ট্রাম্পকে সমর্থন করেছিলেন। এ বছরের জুলাই থেকে অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে মাস্ক ট্রাম্পের নির্বাচনি প্রচারণায় সমর্থনকারী একটি সুপার পিএসি-তে প্রায় ১১.১ কোটি ডলার অনুদান দিয়েছিলেন তিনি।
এরপর কী হতে পারে?
সাইবার নীতি বিশেষজ্ঞ শ্যাক সতর্ক করে বলেছেন, গুরুত্বপূর্ণ ডিজিটাল পরিকাঠামোর উপর ক্ষমতার এই কেন্দ্রীকরণ গণতন্ত্রের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ এই সম্ভাব্য প্রভাবের প্রথম আভাস দেয়া হয়েছিল। ট্রাম্পের রানিং মেট জেডি ভ্যান্স পরামর্শ দিয়েছিলেন যে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) যদি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোকে, বিশেষত মাস্কের এক্সকে লক্ষ্য করে কঠোর নিয়মনীতি প্রণয়ন করে তাহলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ন্যাটোর প্রতি তার সমর্থন পুনর্বিবেচনা করতে পারে। ইইউ বর্তমানে তাদের নতুন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম নীতি সম্ভাব্য লঙ্ঘনের জন্য এক্স-এর বিরুদ্ধে তদন্ত করছে। অপরাধ প্রমাণিত হলে ইলন মাস্ককে বড় অংকের জরিমানা গুনতে হতে পারে।
শ্যাক বলেন, মাস্ক এর বিষয়ে কিছু অনুমান করা যায় না; তার অবস্থান রাতারাতি পরিবর্তিত হতে পারে। যখন উল্লেখযোগ্য পণ্য ও পরিকাঠামো নিয়ন্ত্রণকারী কেউ তার মন পরিবর্তন করে, তখন প্রভাবও বেশ তাৎপর্যপূর্ণ হয়।