মাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করে

এনামুল হক টগর

মাকে আমার খুব দেখতে ইচ্ছে করে মমতার ভালোবাসায় অশেষ।
সেই যে ছিলাম অচিনপুরে অচিন দেশে অচিন জগত গুপ্তজ্ঞানে মিশে!
মায়ের পেটে ফিরে এলাম মাটির দেশে স্বচ্ছ নূরে রবের হুকুম আদেশ!
নয়টি মাস দশটি দিন মাতৃগর্ভে স্নেহের প্রেম আদর সোহাগ বিশ্বাস।
অন্তহীন নীলিমার বুক প্রকৃতির ফুল সমুদ্র সৈকত নদীর তীরে শস্য মাঠ সজিব।
ঐশী জ্ঞানে ঐশী সত্তায় মৃত্তিকা রাজ্যে ভূমিষ্ঠ হলাম সময়ের দাবি সাহসী বিপ্লবী।
মায়ের কোলে পৃথিবীর বুকে সংগ্রামী প্রাণ অধিকার আদায় সাম্য বন্টন মর্যাদার গৌরব।
মা যেন ওই অনেক দূরে মাকে ডাকি মাকে খুঁজি কোথায় তুমি নিরিবিলি প্রশান্ত সৌরভ।
ব্যথিত মন ক্লান্ত জীবন মা যে ছিল সরল মনে শান্ত প্রেম সজিব!
মাকে আমার খুব দেখাতে ইচ্ছে করে হৃদয়ের গহীনে রহস্য আজব!
আমি যখন কিশোর ছিলাম ঘন্টা বাজে স্কুল রুমে গুরু ডাকে লেখাপড়া।
সারাদিন বৃষ্টি ঝরে ছেঁড়া ছাতা মাথায় নিয়ে পাঠশালা বেশ দূরে –
আমার মাথায় ছায়া দিয়ে মায়ের মাথায় বৃষ্টি পড়ে ভেজা কাপড় নীড়ে।
স্কুল শেষ বিকেল বেলায় খেলতে যেতাম ডাঙার মাঠে সেই যে ছিল ছেলেবেলা!
অসুখ বিসুখ দুঃখ কষ্টে ডাক্তার দেখায় ঔষধ খাওয়ায় মা যে বড় মহৎ জীবন নির্মল!
দেখতে দেখতে বেলা যেতো মাকে খুঁজি মাকে ডাকি আয়রে মা আয়রে মা মন সরল!
মাকে আমার খুব দেখতে ইচ্ছে করে প্রাণের স্পন্দন কৈশোর বেলা চঞ্চল।
রাত্রি হলে পেট ভরে ভাত খাওয়াতো মা বড় আশা জ্ঞানী হবে দেশ সমাজ সেবায়।
মায়ের মুখ মলিন অভুক্ত পেট বুঝিনি সেদিন মা যে ছিল অনাহারী ব্যথায়!
অবুঝ কিশোর হাসি মুখে খেতাম আমি মজা রসে মা যে ছিল মহান অভাবের সংসার।
মায়ের শরীর জীর্ণ শীর্ণ হাসতো তবু মলিন চোখে শরীর পোড়া হৃদয় পোড়া অঙ্গার।
মায়ের ভাত আমায় দিতো বোকা আমি খেতাম শুধু মনের সুখে আনন্দ বাহার।
জীবন আজ বহুদূরে বহু কথা স্মৃতিমাখা পৃথিবী জুড়ে মায়ের আলো দীপ্ত সূর্য সকাল।
মাকে খুঁজি মাকে ডাকি নীরব মনে তৃষিত প্রাণ ব্যথায় জীবন নীল।
মাকে আমার খুব দেখতে ইচ্ছে করে শিশু বেলা হাসিমাখা মুখটি নির্মল।
হিজল মাঠে পালা গান গভীর রাত সুনসান সবাই জাগে বাজনা বাজে রং ঢং রঙিন!
মা জেগে রয় গভীর রাত ভাই বোনদের গল্প শোনায় পিতার সৎ কর্ম জীবন মহান।
যুদ্ধ মিছিল রক্ত ঝরা স্বাধীনতা ভাষার দাবি আন্দোলন ভ্রাতৃত্বের মহাঐক্যে জীবন।
মুগ্ধ হতো ভাই বোনরা মুগ্ধ হতো স্বজন বন্ধু মুগ্ধ হতো প্রতিবেশী জীবন দেশপ্রেম।
মায়ের অন্তর গুপ্তধন গোপন রাখতো সবার কথা সবার চিন্তা ভাবনা আপন প্রেম!
সবার জন্য দোয়া করতো আর্দশ জীবন উন্নত জ্ঞান ফুলে ফলে সমৃদ্ধি রঙিন বাগান।
অনেক দিন আগের কথা আম বাগানে জাম বাগানে কাঁঠাল পলাশ শাপলা বিলে ধান।
ঘুড়ি উড়াই আকাশ পানে শ্যামল বনে আড্ডা কিশোর মাঝির কন্ঠে ভাটিয়ালী গান।
পুকুর পাড়ে বর্শি হাতে আকাশ মেঘলা মাছ ধরি রুই কাতলা পুঁটি লাফায় মৃগেল।
এখন সবার বয়স ক্লান্ত দুঃখ ভরা জীবন নয়ন কাজল গ্রাম বিরহে মন অনল!
মাকে খুঁজি আসমান জমিন ও-ই যে দূরে বহুদূরে শেষ ঠিকানা শান্তি আসল।
মাকে আমার খুব দেখাতে ইচ্ছে করে ইছামতির বেলাভূমি ভৈরব মেঘনা বড়াল।
যৌবনকালে ছবি আঁকি লেখাপড়া স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা মায়ের নীতি।
যমুনার বুকে ফেরি পাড়ি চিকিৎসার জন্য ঢাকার পথে চিন্তাগ্রস্থ দূর নগর স্মৃতি।
ডাক্তার সাহেব ঔষধ লেখে মায়ের বুকে আশা জাগে সুখ শান্তির প্রাচীন সংসার।
আসতে যেতে কতো কথা মনে পড়ে জীবন নদী মধুমাখা বেদনা দিন ব্যথার।
মাতৃভাষা বাংলা ভাষা জন্মভূমি স্বাধীনতা কতো কথা স্বপ্ন আশা জ্বলে দীপ্তকর।
মা যে এখন বহুদূরে আসমান চাঁদ তারকা নীলে আলোর জগত নূরে নূরে প্রশান্তময়!
হাজার রাজ্য হাজার নদী অচিন সাগর নীল ছল ছল জল শস্য মাঠে শরৎ স্মৃতিময়।
আমি ডাকি স্বপ্ন দেখি মা যে জেগে আরশ দেশে শান্তির চেতনায়?
মাকে আমার খুব দেখতে ইচ্ছে করে অনাদি প্রেম অনন্ত জ্ঞান জীবন অক্ষয়!
মধ্যরাতে কোকিল ডাকে ঘুমহীন রাত সজাগ কর্ণে সেদিন বিরহ সাধ।
ওই যে আকাশ ওই যে বাতাস ওই যে আঁধার ওই যে আলো ছোট নদীর বাঁক।
চাকরি জীবন সন্তান গেছে দূর দেশে বুক ধরফর কি যে খবর কখন আসে দুঃখ বেদনা!
ছেলে কখন কোন কর্মে নদী পথে সাগর পথে ট্রেনগাড়ীতে হুইসিল বাজে চলন্ত জীবন।
আকাশ পথে উড়জাহাজ নীলিমার মেঘ মুক্ত বাতাস কখন বিপদ অশনি দহন ডাক।
মা হিয়ায় তালাস করে ছেলে আমার কেমন আছে দূর পৃথিবীর দেশ বিদেশে অবাক।
মাকে আমার খুব দেখার ইচ্ছে করে প্রর্থনাতে দোয়া করে রবের কাছে হাত তুলে বিশেষ।
হেদায়েত নূর দয়ায় ক্ষমায় জান্নাত প্রেম শান্তি বাণী মায়ের জীবন মহান মহৎ অশেষ।
অনন্তকাল অনাদি প্রেম মায়ের কবর জিয়ারত করি নবীর রহমত স্রাষ্টার ক্ষমা দান।
সুফির দেশ ভ্রমণ করি উরশ শরীফ জিকির স্মরণ অলি আল্লাহর উছিলা ধরি জ্ঞান।
বরযখের ইল্ল্যীয়ানে শান্তির দেশ মায়ের বসত নবীর সুপারিশ অনন্ত অক্ষয়।
মায়ের হৃদয় প্রেমের সাগর সাধক জীবন তৃতীয় নয়ন আলোকপ্রাপ্ত হৃদয় জ্যোতির্ময়।
মায়ের মহৎ আর্দশ প্রেম সমাজ গড়ে কর্মে জাতির সংস্কার আলো উদয়।
আমি ডাকি মা সারা দেয় বেহেস্ত শান্তি অন্তর জুড়ে স্বর্গ অন্তরপুর!
মাকে আমার খুব দেখতে ইচ্ছে করে পরাণ জুড়ে ফুল বাগিচা জ্ঞান মহাসাগর!
এখন আমার বয়স ভারী সবাই ঘুমায় আমি জাগি বিজন নিশি বিরহে একাকার।
মা হয়তো জেগে আছে বেহেস্ত জগত অতন্দ্র নিশীথ নক্ষত্র জ্বলে মধুর দীপ্তকর।
মা বুঝি ধ্যান নামাজরত দোয়া করে ধৈর্যশীল সৎকর্ম স্মরণ শান্তি আলোর আহবান!
স্নেহ মমতায় তত্ত্বজ্ঞানে মহাজীবন উত্তীর্ণ দ্বীন গভীর ধ্যানে দীপ্ত মহান জীবন।
আমি ডাকি আমি ডাকি মাকে খুঁজি মাকে খুঁজি আয়রে মা আয়।
মাকে আমার খুব দেখার ইচ্ছে করে অনন্ত প্রেম অনাদি জ্ঞান হৃদয়ে অব্যয়।
১৫/১১/২০২৪