গ্যামোফোবিয়া: বিয়েতে ভয়

বিয়ে একটি সামাজিক চুক্তি, যার দ্বারা একটি পরিবারের সৃষ্টি হয়। আর ছোট থেকে বড় হতে হতে মানুষ বিয়ের মাধ্যমে পরিবারের সঙ্গে পরিচিত হয়। আর সেখানে তৈরি হয় প্রেম, ভালবাসা, মায়া-মমতা, স্নেহ। কিন্তু অনেকেই আছেন যারা পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির কারণে বৈবাহিক জীবনের প্রতি ভীতি বোধ করেন।

বিয়ের মাধ্যমে যেহেতু দুটি মানুষ একই ছাদের নীচে থাকা শুরু করেন সেহেতু কখনোও মন কষাকষি হবে না, ঝগড়া হবে না এমনটি আশা করা ভুল। ঝগড়াঝাঁটি হওয়া খুব স্বাভাবিক। আর এসব থেকেই অনেকেরই বিয়ের প্রতি অনীহা চলে আসে।

আমাদের সমাজের এরকম অনেক মানুষ আছে যাদের বিয়ের নামেই অ্যালার্জি রয়েছে। তারা মনে করেন বিয়ে মানেই একটি সম্পর্কে আবদ্ধ হয়ে যাওয়া, আর সেখান থেকে বের না হতে পারার একটি ভয়ও কাজ করে।

তবে এই বিয়ে ভীতি বা অনীহা এক ধরনের মানসিক রোগ- যাকে আমরা গ্যামোফোবিয়া নামে পরিচিত।

এই শব্দের উৎপত্তি গ্রিক ভাষা থেকে। যেখানে গ্যামো মানে বিয়ে, আর ফোবিয়া মনে ভয়। এটি দুশ্চিন্তাজনিত ব্যাধির পর্যায়ে পড়ে। যা আক্রান্ত ব্যক্তিকে তীব্রমাত্রায় ভয় অনুভব করায় অথবা ভয়জনিত চিন্তায় আচ্ছন্ন করে রাখে। গ্যামোফোবিয়াতে আক্রান্ত ব্যক্তিরা বিয়ে বা যেকোনো স্থায়ী সম্পর্কে জড়াতে বা কমিটমেন্ট করতে ভয় পান। সহজ ভাষায় রোমান্টিক বা বৈবাহিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে প্রতিশ্রুতি-ভীতি কাজ করে।

১৯৮৭ সালে ‘মেন হু কান্ট লাভ’ নামের একটি বইতে প্রথম কমিটমেন্ট ফোবিয়া (প্রতিশ্রুতি ভীতি) শব্দটি উল্লিখিত হয়। পরবর্তীতে শুধু পুরুষের মধ্যে প্রতিশ্রুতিভীতির কথা ইঙ্গিত করায় এই বইয়ের ব্যাপক সমালোচনা হয়। ফলে ১৯৯৫ সালে ‘হি ইজ স্কেয়ারড, শি ইজ স্কেয়ারড’ নামে একই লেখক লিঙ্গ নিরপেক্ষ দ্বিতীয় বইটি লেখেন।

গ্যামোফোবিয়া হলো, বিয়ে কিংবা কোনও ধরনের স্থায়ী সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার ভয়। যারা মানসিকভাবে এই ফোবিয়ায় আক্রান্ত তারা আসলে নতুন সম্পর্ক নিয়ে আতঙ্কে থাকেন, বিবাহিত জীবন নিয়ে একটা ভয় কাজ করে, নিজের ব্যক্তি স্বাধীনতার জায়গাটুকু খর্ব হতে পারে কিংবা মানিয়ে চলা যাবে কি না এধরনের একটা চিন্তায় থাকেন এই ফোবিয়ায় আক্রান্ত মানুষরা।

গ্যামোফোবিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের শারীরিকভাবে যে লক্ষণগুলি দেখা দেয়:

অস্থিরতা, বুকে ব্যথা।
নিশ্বাস নিতে না পারার অনুভূতি।
ঘন ঘন শ্বাস নেওয়া।
হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া।
আতঙ্কে, ভয়ে পরিষ্কারভাবে চিন্তা করতে না পারা।
ঠিকভাবে কথা বলতে না পারা।
মাথাব্যথা।
হুট করে রেগে যাওয়া।
ঘামা, পানির পিপাসা লাগা।
কাঁপুনি।

গ্যামোফোবিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য

দীর্ঘমেয়াদি ঘনিষ্ঠ রোমান্টিক সম্পর্ক বজায় রাখতে না পারা।
হাসিখুশি যুগলকে দেখলে দুশ্চিন্তা অনুভব করা।
হঠাৎ করে সম্পর্কে বিচ্ছেদ টানা।
কেউ কাছে আসতে চাইলে তাকে দূরে চলে যেতে বলেন।
যেকোনো রোমান্টিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লে প্রচণ্ড দুশ্চিন্তাবোধ করেন এবং সব সময় ভীত হয়ে ভাবতে থাকেন, এই সম্পর্ক শেষ হয়ে যাচ্ছে।

গ্যামোফোবিয়া বিভিন্ন কারণে হতে পারে। বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ, পরিবারের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ বা সত্যিকারের প্রেম ভেঙ্গে যাওয়ার পর অনেকেই মানসিকভাবে এতোটাই ভেঙ্গে পড়েন যে, কাউকে আর তার আপন মনে হয় না। এরকম যাদের পরিবারে রয়েছে তারাই বেশিরভাগ এই রোগে ভোগেন।

এই রোগ থেকে উত্তরণের জন্য অবশ্যই সাইকোলজিস্টদের কাউন্সেলিং এর প্রয়োজন। এরকম লক্ষণ যাদের মাঝে থাকবে তাদের সঙ্গে অবশ্যই ধীরস্থিরভাবে চলতে হবে। কোন কিছু নিয়ে প্রেশার না দিয়ে সম্পর্কের মহত্ব ও গভীরতাকে সামনে নিয়ে আসতে হবে। তাহলেই এক সময় সে মানুষটাও বিয়ের মত সুন্দর সম্পর্কের বিষয়টা বুঝতে পারবে।