সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অপসারণসংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের মামলার রিভিউ পিটিশনের ওপর আজ রবিবার শুনানির জন্য দিন ধার্য রয়েছে। আজকের আপিল বিভাগের দৈনন্দিন কার্যতালিকার এক নম্বর ক্রমিকে মামলাটি অন্তর্ভুক্ত রাখা হয়েছে। প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের ছয় বিচারপতির বেঞ্চে এ শুনানি হবে। সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পুনরুজ্জীবিত করে আপিল বিভাগ যে রায় দিয়েছিল তা বহালে শুনানিতে আবেদন জানাবে রাষ্ট্রপক্ষ।
সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পুনর্বহালের রায় বাতিল চেয়ে রিভিউ পিটিশন দাখিল করেছিল বিগত আওয়ামী লীগ সরকার। ঐ সরকার রিচারপতি অপসারণসংক্রান্ত সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পদ্ধতি বাতিল করে এই ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে নেয়, যা ষোড়শ সংশোধনী নামে পরিচিত। কিন্তু ১০ আইনজীবীর রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ষোড়শ সংশোধনীকে বাতিল ও সংবিধান পরিপন্থী ঘোষণা করে ২০১৪ সালে রায় দেয় হাইকোর্ট। আপিল করে আওয়ামী লীগ সরকার। সেই আপিল খারিজ করে দেন সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির বেঞ্চ।
২০১৬ সালে দেওয়া ঐ রায় স্থগিত চেয়ে রিভিউ পিটিশন দাখিল করে তৎকালীন সরকার। দীর্ঘ আট বছরেও সেই রিভিউ শুনানির উদ্যোগ না নেওয়ায় রায়দানকারী সাত বিচারপতি ছয় জন পর্যায়ক্রমে অবসরে যান। এর মধ্যে বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ছয় বছর প্রধান বিচারপতির পদে দায়িত্ব পালন করেন। প্রধান বিচারপতি পদে দায়িত্ব পালন করলেও কোনো এক অজানা কারণে এই রিভিউ পিটিশন নিষ্পত্তির কোনো তাগাদা রাষ্ট্রপক্ষকে দেননি।
২০১৬ সালে এই মামলায় রায় প্রদান নিয়ে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার সঙ্গে সরকারের টানাপড়েন সৃষ্টি হয়। পরে তিনি দেশত্যাগে বাধ্য হন। তখন বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দল ও আইনজীবী সংগঠনগুলো দাবি করেন, সরকারের মনমতো রায় না দেওয়ায় বিচারপতি এস কে সিনহাকে দেশ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। যার প্রমাণ পাওয়া যায় বিচারপতি সিনহার লেখা একটি বইতে। তিনি দাবি করেন, সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার হুমকি ও ভীতি প্রদর্শনের মুখে তিনি দেশ ছেড়েছিলেন। কারণ রায়টি যেন সরকারের পক্ষে যায়, সেজন্য তার ওপর সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে চাপ তৈরি করা হয়েছিল।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট পতন হয় আওয়ামী লীগ সরকারের। পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উচ্চ আদালতের বেশ কয়েক জন বিচারপতির বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অসদাচরণের অভিযোগ ওঠায় তার তদন্ত ও ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। ফলে রিভিউ নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেয় বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। রিভিউ নিষ্পত্তি হলেই বিচারপতি অপসারণের পথ উন্মুক্ত হবে বলে জানান আইনজ্ঞরা।