জুলাই হত্যাকাণ্ডে জড়িত যারা পালিয়ে গেছে তাদের ফিরিয়ে আনতে আদালতের মাধ্যমে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে। তারা ফিরে এসে বিচারের মুখোমুখি না হলে নিজেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
শনিবার রাজধানীর এফডিসিতে জুলাই হত্যাকাণ্ডের দায় নিয়ে আয়োজিত ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মো. আসাদুজ্জামান এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে ‘জুলাই হত্যাকাণ্ডে দলীয় স্বৈরতন্ত্র অপেক্ষা প্রশাসনিক স্বৈরতন্ত্রই বেশি দায়ী’ শীর্ষক ছায়া সংসদে ঢাকা কলেজের বিতার্কিকদের পরাজিত করে ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়। প্রতিযোগিতা শেষে চ্যাম্পিয়ন দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।
অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জামান বলেন, ‘শেখ হাসিনা এত মিথ্যা বলেছেন, এমনভাবে বলেছেন, এমন কৌশল করে বলেছেন, তিনি নিজেই বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলেন যে, তিনি যা বলেন সেটাই সত্য, সেটাই বেদবাক্য। শেখ হাসিনা মিথ্যা বলতে বলতে মিথ্যাকে সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেছেন। তার মিথ্যাচার গোয়েবলসকেও হার মানিয়েছে। গোয়েবলস বেঁচে থাকলে তিনি হয়তো শেখ হাসিনার ছাত্র হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করতেন।’
তিনি বলেন, ‘গত ১৫ বছরে দেশে কার্যত এক ব্যক্তির শাসন কায়েম হয়েছিল। জাতীয় সংসদও একক কর্তৃত্ববাদে পরিচালিত হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান সংক্রান্ত রায় পরিবর্তনের মাধ্যমে সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক অপরাধ করেছেন। যে অপরাধের সুবিধা নিয়েছে আওয়ামী লীগ। তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, যা নিয়ে তদন্ত চলছে।’
অ্যাডভোকেট মো. আসাদুজ্জামান আরও বলেন, ‘জুলাই হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার লক্ষ্যে একটি নির্দিষ্ট সিভিলিয়ান গোষ্ঠির মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যবহার করে যে হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে তা মানবতাবিরোধী অপরাধ আইন ১৯৭৩ এর মাধ্যমে বিচার করা হবে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হবে এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিতে বিচার প্রক্রিয়ার ট্রায়াল টেলিভিশনে দেখানোর ব্যাপারে আইনগত দিক পর্যালোচনা করা হচ্ছে। খুব শীঘ্রই জুলাই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্তদের মানবতাবিরোধী অপরাধে বিচার শুরু হবে। যারা বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা করেছিল তাদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা হবে।’
সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, ‘জুলাই-আগস্টের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালিয়ে নজিরবিহীন হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশে ইতিহাসে বড় কালো দাগ হয়ে থাকবে। পাঠ্যপুস্তকে রচিত হবে জুলাই বিপ্লবের এসব শহিদদের শোক গাঁথা। রক্তপিপাসু জুলুমবাজ সরকারের অন্যায়-অত্যাচারের নির্মম চিত্র। তারা চেয়েছিল রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকতে। কিন্তু মৃত্যুকে ভয় না পাওয়া ছাত্র-জনতা যখন রাজধানী ঘিরে ফেলল এক কাপড়ে পালিয়ে গেল সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফ্যাসিবাদের মুখপাত্র হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগসহ তাদের জোটভুক্ত রাজনৈতিক দলগুলো এ হত্যাকাণ্ডের জন্য প্রধানত দায়ী। তবে নির্বাচন কমিশন, র্যাব-পুলিশ, বিজিবিসহ রাষ্ট্রের বিভিন্ন বাহিনীর জনবিরোধী অবস্থানের কারণে জুলাই হত্যাকাণ্ডের ব্যাপকতা বেড়েছে। তাই জুলাই হত্যাকাণ্ডের দায় শেখ হাসিনাসহ দলীয় স্বৈরতন্ত্রের পাশাপাশি প্রশাসনিক স্বৈরতন্ত্র সমানভাবে দায়ী। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার প্রশাসনের বেশিরভাগ ব্যক্তিরাই এ হত্যাকাণ্ডের দায় এড়াতে পারে না।’