অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের স্বার্থে নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে তত্ত্বাবধায়ক বা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল করার দাবি জানিয়েছেন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা। কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা সংসদে আনুপাতিক হারে প্রতিনিধিত্ব, না ভোটের বিধান যুক্ত ও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচনের সুযোগ বাতিল চেয়েছেন।
আজ শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসি (আরএফইডি) আয়োজিত ‘নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কেমন চাই?’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব সুপারিশ করেন।
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করা হয়েছে। সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, সততা, পেশাদারির সঙ্গে প্রস্তাব দেব যাতে এত প্রাণের রক্তের সঙ্গে কোনো বিশ্বাসঘাতকতা না হয়।
বস্ত্র, পাট ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘রাজনীতিবিদেরাই দেশ পরিচালনা করবেন, আজকে হোক, কালকে হোক। কাজেই দায়দায়িত্ব তাঁদের আজ থেকেই শুরু করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘রিটার্নিং অফিসার ডিসিদের দিতে হবে—এমন কোনো কথা নেই। তিন ধাপে ইসি নিয়োগ করা যেতে পারে।’
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, বাস্তবতার নিরিখে যা সংস্কার করা দরকার তা–ই করা হবে। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ভোট হওয়া উচিত না। প্রয়োজনে সেখানে পুনরায় ভোট করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের স্কাউটদের, গার্লস গাইডদের ব্যবহার করতে পারি। সরকারি চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে তিন বছরের বাধ্যবাধকতা বাড়িয়ে পাঁচ বছর করা উচিত।’ দলীয় প্রার্থী হতে হলে কমপক্ষে তিন বছর সদস্য থাকার বিষয়ে মত দেন তিনি।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ঐকমত্য শব্দটা আপেক্ষিক। বড় দল হিসেবে বিএনপির ওপরে অনেক দায়িত্ব। সংস্কারের বিষয়ে বিএনপি অভিভাবকের পরিচয় দিয়েছে।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্য থাকতে হবে। নির্বাচন চলাকালীন সময়ে উচ্চ আদালতে নির্বাচন কমিশনের মতামত না নিয়ে কোনো রিট গ্রহণ করা ঠিক না বলেও মত দেন তিনি।
অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সুস্পষ্ট কথা শোনার আগ্রহ প্রকাশ করে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘প্রথমে ওনারা (অন্তর্বর্তী সরকার) এসে বললেন অনেকগুলো সংস্কার কাজ করবেন। সংস্কার কমিশন গঠন করা হলো। তিন মাস পরে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলবে। তাহলে তাদের তিন মাস সময় লাগার কথা না।’
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারে জামায়াতের পক্ষ থেকে ৯টি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট তুলে ধরা হয়েছে বলে জানান জামায়াতে ইসলামীর কর্মপরিষদ সদস্য শফিকুল ইসলাম মাসুদ। তিনি বলেন, ‘নাগরিকের তথ্য বিক্রি করা মানে দেশকে বিক্রি করে দেওয়া। যারা এই কাজটি করেছে, অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত সব কাজের আগে এদের চিহ্নিত করে, বিচার করা।’
সভা–সেমিনারে জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলের কাউকে ডাকার সুযোগ নেই জানিয়ে গণ অধিকার পরিষদের (জিওপি) সভাপতি নুরুল হক নূর বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী ও এমপি সাবের হোসেন চৌধুরীকে বিদেশিদের চাপে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। যদি মুক্তিই দেবেন তাহলে গ্রেপ্তার কেন করেছিলেন? ওবায়দুল কাদেরকে কেন গ্রেপ্তার করতে পারলেন না? প্রশ্ন রাখেন তিনি।’
এ ছাড়া সেমিনারে এবি পার্টি সদস্যসচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু, প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী, জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য আরিফুর রহমান আদিব, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী প্রমুখ বক্তব্য দেন।