বগুড়ায় ৩ শতাধিক বন্যার্ত পরিবারের পাশে দাঁড়ালো জেলা পুলিশ

// সঞ্জু রায়, বগুড়া:

উজানের ঢল এবং টানা বর্ষণে গত কয়েকদিনের ব্যবধানে বগুড়াতে খরস্রোতা যমুনায় বর্তমানে পানি প্রবাহিত হচ্ছে বিপদ সীমার ৫৯ সেন্টিমিটার উপরে। ইতিমধ্যেই সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন প্রায় ৮৫ হাজার মানুষ যার মাঝে শুধুমাত্র সারিয়াকান্দি উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় পানিবন্দী হয়ে আছেন প্রায় ৬৮ হাজার মানুষ।

এমন পরিস্থিতিতে শনিবার দুপুরে সারিয়াকান্দি উপজেলার কুতুবপুর, ঘুঘুমারি ও কামালপুর ইউনিয়নের বন্যা রক্ষা বাঁধের তিনটি পয়েন্টে ৩ শতাধিক বন্যার্ত পরিবারকে খাদ্য সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে পাশে দাঁড়িয়েছে জেলা পুলিশ।

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনের পর বন্যার্ত মানুষদের শান্তনা দেয়ার পাশাপাশি প্রত্যেকের হাতে খাদ্য সামগ্রী তুলে দেন জেলা পুলিশ সুপার (পদোন্নতিপ্রাপ্ত অতিরিক্ত ডিআইজি) সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী। এ সময় তিনি বলেন, হঠাৎ করেই যমুনার পানি বৃদ্ধিতে যমুনাপাড়ের হাজার হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যাদের অনেকেরই এখন মাথা গোজার ঠাঁইটুকুও নেই। এমন পরিস্থিতিতে জেলা পুলিশ পরিবার মানবিক সহযোগিতা নিয়ে শুধুমাত্র তাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন এত কষ্টের মাঝেও বন্যার্ত এই মানুষগুলো সামান্য একটু সহযোগিতা পেয়েই তাদের মুখে ফুটেছে প্রাণবন্ত হাসি যা সত্যিই মনকে প্রশান্ত করে। তারা হতাশ না হয়ে এই পরিস্থিতিকে তাদের জীবনের সংগ্রাম হিসেবে নিয়েছেন যাকে তিনি শ্রদ্ধা জানান। পুলিশের এই কর্মকর্তা আরো বলেন, বন্যার্ত মানুষদের পুনর্বাসন করতে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের পাশাপাশি জেলা পুলিশ পরিবার তাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চটুকু করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন এবং যাবেন। শুধু তাই নয় বিপর্যয়ের এই মুহূর্তে বন্যা দুর্গত এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেন সুষ্ঠু থাকে তাও তারা কঠোরভাবে মনিটরিং করছেন। মানবতার স্বার্থে জেলা পুলিশ সুপার সমাজের সকল বিত্তবান মানুষদেরও ক্ষতিগ্রস্ত এই মানুষগুলোকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়ার মানবিক আহবান জানান।

উপকারভোগীদের মাঝে ইদ্রিস আলী ও নবীতন বেওয়া জানান, যে যমুনা তাদের এক সময় জীবিকা দিয়েছে সেই যমুনায় রাক্ষসী রূপে কেড়ে নিয়েছে তাদের সর্বস্ব। আজ তাদের মাথা গোজার ঠাঁইটুকুও নেই। বাড়িতে যখন বুক পর্যন্ত পানি তখন তারা আশ্রয় নিয়েছে বাঁধের ওপরে কিংবা কেউ স্কুলের বারান্দায়। এমন পরিস্থিতিতে জেলা পুলিশের উপহারস্বরূপ এই খাদ্য সামগ্রী পেয়ে অন্তত আগামী এক সপ্তাহের জন্য তারা কিছুটা হলেও চিন্তামুক্ত হয়েছেন। আবেগাপ্লুত হয়ে তারা জেলা পুলিশ পরিবারকে ধন্যবাদ জানান।

আয়োজন প্রসঙ্গে কামালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদউজ্জামান রাসেল জানান, প্রতিটি দুর্যোগেই মানবিক কর্মকর্তা হিসেবে জেলা পুলিশ সুপার তাদের পাশে থেকেছেন। বন্যার্ত মানুষের এই দুঃখ দুর্দশা দেখে বগুড়া থেকে বদলীসূত্রে বিদায়ের আগেও মাত্র একদিনের মধ্যেই জেলা পুলিশ সুপার এই উদ্যোগ নিয়েছেন যা সত্যিই প্রশংসনীয়। এই সহায়তা পেয়ে তার ইউনিয়নের উপকারভোগীরা এই বিপদের দিনে  অনেক উপকৃত হলেন। এলাকার জনপ্রতিনিধি হিসেবে জেলা পুলিশ পরিবারের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা জানান। পাশাপাশি তিনি বলেন, প্রতিদিন যেভাবে যমুনার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে মূল বাঁধ রক্ষার বিষয়ে তারা শঙ্কিত হয়ে আছেন। প্রতিবছর সাধারণ মানুষের এই দুঃখ দুর্দশা লাঘবে যমুনার তীরে স্থায়ীভাবে বাঁধ সংরক্ষণের লক্ষে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর প্রতি অনুরোধ জানান তিনি। 

বিতরণকালে এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন পদোন্নতিপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মোতাহার হোসেন, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার নিয়ে নিয়াজ মেহেদী, সারিয়াকান্দি থানার অফিসার ইনচার্জ রবিউল ইসলাম, চন্দনবাইশা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর মুস্তাফিজুর রহমান, কামালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদউজ্জামান রাসেল প্রমুখ। খাদ্য সামগ্রী স্বরূপ প্রতিটি পরিবারকে প্রদান করা হয়েছে শুকনো খাবার চিড়া, মুড়ি, গুড়, বিস্কুট, চাল, লবণ, সাবান ইত্যাদি।