ফেলে আসা দিন গুলো-৫৭

— এবাদত আলী–
বলতে গেলে প্রায় তিন যুগ ধরে সংবাদপত্রের সঙ্গে যুক্ত আছি। সে সময় ১৯৭৮ সালের ৭ মে পাবনার আটঘরিয়া প্রেসক্লাব গঠন ও সভাপতির দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে পাঠক সমাজের কাছে পরিচিতি ঘটে সাংবাদিক এবং কলাম লেখক হিসেবে। পরবর্তীকালে ঐতিহ্যবাহি পাবনা প্রেসক্লাবের সদস্য পদ লাভের ও সৌভাগ্য হয়েছে। এই দীর্ঘ সময়ে বিভিন্ন আঙ্গিকের সংবাদ সম্মেলনে যোগদানের সুযোগ লাভ করেছি। কিন্তু গত ৮ জানুয়ারি- ২০১৫,তে পাবনার বনমালী শিল্পকলা কেন্দ্রের সংবাদ সন্মেলনে যোগদানের জন্য আমন্ত্রণ পত্র পাবার পর থেকেই কেমন যেন মন উসখুস করছিলো। কারণ আমন্ত্রণ পত্রের ঠিকানায় লেখা ছিলো জনাব ও বেগম, এবাদত আলী ,সদস্য পাবনা প্রেসক্লাব, পাবনা। গতানুগতিকভাবে সংবাদ সম্মেলনে শুধু সাংবাদিকদেরকেই ডাকা হয়। কখনো সাংবাদিক-গিন্নীকে সংবাদ সন্মেলনে আহবান জানানো হয়েছে কিনা তা আমার জানা নেই। তবে ঐ আমন্ত্রণ পত্রে বনমালী শিল্পকলা কেন্দ্রের সভাপতি অঞ্জন চৌধুরী পিন্টু এবং সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ আবুল মাসুদ অবশ্য সংবাদ সম্মেলন এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজনের কথা উল্লেখ করেছিলেন। এতে দুজনেরই অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়েছিলো।
সে যাক সেদিন ৮ জানুয়ারি বিকাল ৩টায় নির্ধারিত সময়ে বনমালীতে গিয়ে হাজির হলাম। আমন্ত্রণ পত্রে বিশেষ দ্রষ্টব্যতে লেখা ছিলো অডিটোরিয়ামে প্রবেশের জন্য আমন্ত্রণ-পত্রটি অবশ্যই সঙ্গে আনবেন। গিন্নীকে সঙ্গে না আনলেও আমন্ত্রণ পত্রটি আনতে ভুল করিনি বটে তবে তা সহজে দেখাবো কেন? কারণ আমি বনমালী শিল্পকলা কেন্দ্রের জীবন সদস্য। তাছাড়া সাধরণ সম্পাদক মুহম্মদ আবুল মাসুদ লাল আমার সহপাঠি-বাল্য বন্ধু। কিন্তু অভ্যনর্থনাকারিরা নাছোড় বান্দা। কি আর করা। অগত্যা তা দেখিয়ে তবেই ভিতরে প্রবেশ। প্রবেশ করেই পাবনা বনমালী শিল্পকলার সভাপতি অঞ্জন চৌধুরী পিন্টু, সাধারণ সম্পাদক মুহম্মদ আবুল মাসুদ লাল, পাবনা জেলা পরিষদের প্রশাসক ও বনমালীর আজীবন সদস্য এম সাইদুল হক চুন্নু, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পাবনা জেলা ইউনিটের কমান্ডার হাবিুর রহমান হাবিব, পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সহকারি পরিচালক ডাঃ মনোয়ার উল আজিজ, আমার সহপাঠি ও বাল্য-বন্ধু বেবি ইসলাম, রবিউল ইসলাম চৌবে ডাব্লু, অ্যাডভোকেট আব্দুল মতিন মিয়া, অ্যাডভোকেট সনৎ কুমার সরকার, অ্যাডভোকেট আব্দুল হান্নান শেলী, এসএম রেজাউল করিম হেনা, আলী আহসান বক্তার, ফরিদুলইসলাম খোকন, শ্রী প্রলয় চাকী, শরিফা খাতুন, মোসাদ্দেক আলী, সাংবাদিকদের মধ্যে প্রবীণ সাংবাদিক আনোয়ারুল হক, পাবনা প্রেসক্লাবের সভাপতি রবিউল ইসলাম রবি, সাবেক সভাপতি শিবজিত নাগ, সাবেক সম্পাদক এবিএম ফজলুর রহমান এবং তাঁর সহধর্মিনী, সাবেক সভাপতি রুমি খন্দকার, পাবনা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আহমেদুল হক রানা, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও মাছরাঙা টেলিভিশনের পাবনা ব্যুরো চীফ উৎপল মির্জা, সহ সম্পাদক আখিনুর ইসলাম রেমন, বিটিভি পাবনা জেলা প্রতিনিধি ও দৈনিক জোড় বাংলা সম্পাদক আব্দুল মতীন খান, দৈনিক নতুন বিশ্ব বার্তা সম্পাদক শহিদুর রহমান শহীদ, দৈনিক পাবনার খবর এর সম্পাদক এমজি বিপ্লব চৌধুরী, দৈনিক স্বতকন্ঠ সম্পাদক নুরুদ্দিন শফি কাজল, দৈনিক ইছামতির নির্বাহী সম্পাদক মোসতাফা সতেজ, সাপ্তাহিক বিজয় দীপ্ত সম্পাদক তৌহিদুর রহমান পান্না, সাপ্তাহিক বাঁশপত্র সম্পাদক রাজিউর রহমান রুমি, সাংবাদিক কামাল আহমেদ সিদ্দিকী, আব্দুল মজিদ দুদু, নরেশ মধু, ছিফাত রহমান সনম, আব্দুল কুদ্দুস চাঁদু, তপু আহমেদ, কাজী মাহবুব মোর্শেদ বাবলা, সৈকত আফরোজ আসাদ, সরোয়ার মোর্শেদ, আরিফ আহমেদ সিদ্দিকী, শাহীনুর রহমান শাহীন, চ্যানেল আই এর পাবনা জেলা প্রতিনিধি আক্তারুজ্জামান আক্তার, দৈনিক বিপ্লবী সময় এর সম্পাদক সোহেল রানা, বার্তা সম্পাদক হাসান আলী, ঈশ্বরদীর আবুল হাসেম, আব্দুল কাদের, আটঘরিয়ার নুরুল ইসলাম নুরু, মাসুদ রানা সাথিয়ার অধ্যাপক দাইয়ান উদ্দিনসহ সুজানগর, বেড়া, ফরিদপুর, ভাঙ্গুড়া ও চাটমোহরের সাংবাদিকদের মধ্যে অনেকের সাথেই কুশল বিনিময় হলো। বিশেষতঃ এই যে, ইতোপূর্বে পাবনা জেলায় কখনো কোন সংবাদ সম্মেলনে এত সংখ্যক সাংবাদিকের উপ¯ি’িত ঘটেনি। তাই একে সাংবাদিকদের মিলন মেলা বল্লেও অত্যুক্তি হবেনা।
পাবনা জেলার শিল্প ও সাংস্কৃতির উন্নতি ও প্রসার বৃব্ধির উদ্দেশ্যে ১৯২৪ সালে শ্রী রায় বাহাদুর ক্ষিতীশ ভুষণ রায় ও শ্রী রায় বাহাদুর রাধিকা ভুষণ রায় তাঁদের শ্রদ্ধেয় পিতা তাড়াশের জমিদার শ্রী রায় বাহাদুর বনমালী রায় এর স্মরণে‘ বনমালী ইনস্টিটিউট’ নামে এই প্রতিষ্ঠান স্থাপনের জন্য ৪১ শতাংশ জমি এবং উল্লেখযোগ্য পরিমাণ আর্থিক অনুদান প্রদান করেন। সে সময় হতে পাবনা শহরের কতিপয় শিল্পানুরাগী বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সক্রিয় সহযোগীতায় প্রতিষ্ঠানটি পাবনার সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বিশেষ ভুমিকা পালন করে আসছে। তবে ২০১১ সাল হতে এই প্রতিষ্ঠানের কাঠামোর আমূল পরিবর্তনের লক্ষে নবযাত্রা শুরু হয়। বনমালীর সাধারণ সম্পাদক মুহম্মদ আবুল মাসুদ জানান, ষ্টিলের বেলকোনি নির্মানের লক্ষে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা দানের জন্য বনমালীর আজীবন সদস্য, স্কয়ার টয়লেট্রিজ ও স্কয়ার কনজুমার প্রোডাক্টস লিঃ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী পিন্টুর স্মরণাপন্ন হই। তিনি তার তত্বাবধানে দেশের খ্যাতনামা প্রকৌশলীকে দিয়ে বনমালী মিলনায়তনের অর্ধেক অংশে ষ্টিল দ্বারা একটি বেলকোনি নির্মাণের জন্য ডিজাইন ও এস্টিমেট তৈরি করে দেন। যার নির্মাণ মূল্য দাড়ায় ৭০ লাখ টাকা। অঞ্জন চৌধুরী পিন্টুর নেতৃত্বে পাবনা জেলা পরিষদের প্রশাসক এম সাইদুল হক চুন্নুকে ১০ লাখ টাকা অনুদান প্রদানের অনুরোধ জানালে তিনি তা প্রদান করেন। সে টাকা এবং বনমালীর নিজস্ব তহবিলের টাকা বাদে অবশিষ্ট টাকার পুরোটাই অঞ্জন চৌধৃুরী প্রদান করবেন বলে তিনি প্রতিশ্রুতি দেন এবং তাঁর নিজস্ব নির্মাণ প্রকৌশলী ও জনবল দিয়ে উক্ত নির্মাণ কাজ শুরু করেন। আবুল মাসুদ তার প্রতিবেদনে আরো বলেন, নতুন আঙ্গিকে বনমালীকে সাজাতে মঞ্চ ও মিলনায়তন নিখুতভাবে তৈরি করতে আমাদের আর্কিটেকচারাল ডিজাইনার ছাড়াও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সহকারি পরিচালক (মঞ্চ ও মিলনায়তন বিশেষজ্ঞ ) ডক্টর আইরিন পারভিন লোপাসহ বিভিন্ন বিভাগের ৪জন বিশেষজ্ঞের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা গ্রহণ করা হয়েছে।
মাছরাঙা টেলিভিশন ও স্কয়ার টয়লেট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং পাবনার ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান বনমালী শিল্পকলা কেন্দ্রের সভাপতি অঞ্জন চৌধুরী পিন্টু সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন। এসময় তিনি বলেন নবরূপে বনমালীর যাত্রা শুরু হলো। এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়েছে ২০১২ সালের ২ র্ফেরুয়ারি। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সেখ হাসিনা পাবনায় আগমণ করে এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। তিনি বলেন, পাবনার ঐতিহ্যবাহী শিল্পকলা কেন্দ্র হবে ঢাকার পর বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক বিকাশের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু। এখান থেকে শুধু জাতীয় মানের নয় আন্তর্জাতিক মানের সাংস্কৃতিক ও নাট্য কর্মি গড়ে তোলা হবে। ১৯২৪ সালে বনমালী রায়ের নামে প্রতিষ্ঠিত বনমালী ইনস্টিটিউিটকে গত ২৪ অক্টোবর, ২০১৪ এক জরুরী সাধারণ সভায় বনমালী শিল্পকলা নামকরণ করে নতুন আঙ্গিকে প্রতিষ্ঠার জন্য এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। বনমালী প্রকল্পে অনুদান প্রাপ্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তৎকালীন তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে অর্থ উপদেষ্টা মির্জা আজিজুল ইসলাম বড় অনুদান দেন। সেখান থেকে উন্নয়ন শুরু হয়। এয়ার ভাইস মার্শাল একে খন্দকার মন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে কিছু অনুদান দেন। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে সাহাবুদ্দিন চুপ্পু অনুদান জোগাড় করে দেন। তিনি বলেন এখনো অনেক কাজ বাঁকি রয়েছে। ঢাকার বাইরে আর এতবড় কোন প্রতিষ্ঠান নেই। সংবাদ সম্মেলনে অঞ্জন চৌধুরী পিন্টু আরও বলেন, বনমালী শিল্পকলা কেন্দ্রের সকল সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডকে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে দেয়া হবে। অন লাইন ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিশ্বের যে কোন প্রান্তের মানুষ এখানকার অনুষ্ঠান উপভোগ করতে পারবে।
উপস্থিত সাংবাদিকদের মধ্যে প্রশ্ন করেন এবং আলোচনায় অংশ নেন, পাবনা প্রেসক্লাবের সভাপতি রবিউল ইসলাম রবি, সাধারণ সম্পাদক আহমেদুল হক রানা, সহ-সম্পাদক আঁখিনুর ইসলাম রেমন, সাবেক সম্পাদক এবিএম ফজলুর রহমান, সাবেক সহ-সভাপতি আখতারুজ্জামান আখতার, নরেশ মধু, আব্দুল মজিদ দুদু, সৈকত আফরোজ আসাদ, তপু আহমেদ, সনম রহমান, তৌহিদ আখতার পান্না, অধ্যাপক দায়েন উদ্দিন প্রমুখ। বনমালী শিল্পকলা কেন্দ্রের সভাপতি অঞ্জন চৌধুরী পিন্টু সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
সংবাদ সন্মেলন শেষে ছিলো মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বধু কোন আলো লাগলো চোখে নেপথ্যের এ গানের তালে তালে এক কিশোরির নৃত্য দর্শকদের বিমোহিত করে। মঞ্চে চোখ ধাঁধানো আলোর ঝলকানিতে রোশনাই ছিলো গোটা মঞ্চ। নব প্রযুক্তির সব টুকু যেন উজাড় করে দিয়ে বিশ্বয়ের সৃষ্টি করছিলো সারা মিলনায়তন ঘিরে। নাচের পরে আব্দুল হান্নান শেলীর পরিচালনায় পরিবেশিত হয় নাটক ‘ রয়েল বেঙ্গল টাইগার।’
এর পর সঙ্গীত শিল্পী মনির খান , অভিনেতা ও সঙ্গীত শিল্পী ফজলুররহমান বাবু, মাছরাঙা টেলিভিশনের ম্যাজিক বাউলিয়ানার ৫জন কন্ঠ শিল্পী সঙ্গীত পরিবেশন করে দর্শক শ্রোতাদের মন ভরিয়ে তোলে। (লেখক: সাংবাদিকও কলামিস্ট)।
এবাদত আলী
সাংবাদিক ও কলামিস্ট
সদস্য পাবনা প্রেসক্লাব, তারিখ ঃ ০৮/ ০৬ /২০২৪.