// এস.এম.রকি,খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধিঃ উত্তরের শস্য প্রধান জেলা দিনাজপুরের খানসামা উপজেলায় ভুট্টা চাষে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে। গ্রামীণ অর্থনীতিতে স্বচ্ছলতার স্বপ্ন নিয়ে ভুট্টা চাষে ঝুঁকেছে এই অঞ্চলের প্রান্তিক কৃষক। আবহাওয়া ও মাটি উপযোগী হওয়ায় ভুট্টা চাষ করে নিজেদের ভাগ্য ফেরাচ্ছেন চাষিরা। কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় দিন দিন এ উপজেলায় ভুট্টা চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। প্রতি বছরই ভুট্টা চাষে নতুন নতুন রেকর্ড গড়ছে চাষিরা।
খানসামা উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও আধুনিক কৃষি প্রযুক্তিতে কৃষকদের আগ্রহ সৃষ্টি হওয়ায় স্বল্প খরচে অধিক লাভের ফলে প্রতি বছর ভুট্টা চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত ২০২২-২৩ মৌসুমে এই উপজেলার ৬ টি ইউনিয়নে ভুট্টা চাষ হয়েছে ৮২৮৫ হেক্টর। এদিকে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ভুট্টা চাষ হয়েছে ৮৪৯০ হেক্টর। এরমধ্যে পপকর্ণ ভুট্টা ১৬৬০ হেক্টর ও হাইব্রিড ভুট্টা ৬৮৩০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে।
কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতি বিঘা (৫০ শতক) জমিতে চাষ,বীজ, সেচ, সার ও কীটনাশক এবং পরিচর্যা বাবদ পপকর্ণ ভুট্টা চাষে খরচ হয় প্রায় ৩০ হাজার টাকা ও হাইব্রিড ভুট্টা চাষে প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়। প্রতি বিঘায় হাইব্রিড ফলন হয় প্রায় ৬৫-৭০ মণ ও পপকর্ণ ভুট্টার ফলন হয় ৪০-৪৫ মণ। হাইব্রিড ভুট্টা প্রতি মণের বর্তমান বাজার মূল্য ১২-১৩শ টাকা এবং পপকর্ণ ভুট্টা ১৫০০-১৬০০ টাকা প্রতি মণ। এতে প্রায় খরচের সমপরিমাণ টাকা লাভ হয়।
বুধবার (২০ মার্চ) সকালে সরেজমিনে উপজেলার গোয়ালডিহি, কাচিনীয়া, হোসেনপুর ও টংগুয়া গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, প্রায় সব জায়গায় কৃষকের বিস্তির্ণ ফসলের মাঠ এখন ভুট্টার সবুজ ক্ষেতে ভরে গেছে। ভুট্টার ক্ষেতে লকলকে সবুজ পাতার ফাঁকে আসতে শুরু করেছে ফুল ও ভুট্টার মোচা। এই দেখে কৃষকের মুখে ফুটেছে হাসি। এখন ভুট্টা ক্ষেতগুলোর পরিচর্যা ও সেচ কাজসহ নানা কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষক-কৃষাণীরা। ভুট্টার সাথে বিভিন্ন সাথী ফসল চাষে বাড়তি লাভবান হচ্ছে কৃষকরা। তবে ভূট্টার ক্ষতিকর বালাইয়ের আক্রমণের আশংকা থাকলেও সেটি এখন কেটে গেছে।
বালাপাড়া গ্রামের ভুট্টা চাষী লিটন ইসলাম বলেন, ধান চাষে উৎপাদন খরচ অনেক বেশি ফলে অনেক ক্ষেত্রে উৎপাদন খরচই উঠে না। কিন্তু ভুট্টার উৎপাদন খরচ যেমন কম, দামও তেমন বেশি থাকে। চলতি বছর ১ বিঘা হাইব্রিড ভুট্টা চাষ করেছি। এতে প্রায় ৩০-৩৫ হাজার টাকা লাভ হবে।
পাকেরহাট গ্রামের মজনু আলম বলেন, ভুট্টা চাষে অন্যান্য ফসলের তুলনায় খরচ ও পরিশ্রম কম। দামও ভালো পাওয়া যায়। তাই প্রতি বছর ভুট্টা চাষ বৃদ্ধি করতেছি আমরা।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা যদুনাথ রায় বলেন, ভূট্টা একটি লাভজনক ফসল। তাছাড়াও কম সময়ে অধিক লাভ হওয়ায় কৃষকরা ভূট্টা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। এইজন্য কৃষকদের সব ধরনের সহায়তা প্রদান কাজ করছি। সেই সাথে ভূট্টার ক্ষতিকর বালাই সম্পর্কে কৃষকদের সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করার কথা জানান তিনি।
ভারপ্রাপ্ত উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাবিবা আক্তার বলেন, ‘চলতি মৌসুমে গতবারের চেয়ে ভুট্টার আবাদ বেশী হয়েছে। সব ধরনের ফসল উৎপাদনে আমরা কৃষকদের আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করছি। ভুট্টা চাষে খরচ অনেক কম, কিন্তু দাম অনেক ভালো। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে এবার ভুট্টার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। ভূট্টার পোল্ট্রি ফিড ব্যতীত এর বহুমুখী ব্যবহারে এগিয়ে আসতে হবে তাহলেই এই ফসলটির স্থায়িত্ব এবং চাষাবাদ আরো অনেকাংশে বেড়ে যাবে বলে তিনি জানিয়েছেন।