// নাটোর প্রতিনিধি
বড়াইগ্রামে নির্বাচনোত্তর সহিংসতায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের সাতটি বাড়ি ও দুটি দোকান ভাংচুর করা হয়েছে। এ সময় মহিলাসহ আটজন আহত হয়েছেন। নৌকার কর্মীরা এ হামলা চালিয়েছে বলে দাবি ক্ষতিগ্রস্থদের। শুক্রবার সকালে উপজেলার চান্দাই ইউনিয়নের দিয়াড়গাড়ফা গ্রামে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় আহতদের মধ্যে মৃত হেদায়েত উল্লাহর ছেলে এমদাদুল হক ইন্তাজ (৭০), তার স্ত্রী আছিয়া বেগম (৬০) ও পুত্রবধু মিনারা বেগম (৩৮), ইসমাইল হোসেনের ছেলে গুলজার হোসেন, আরিফুল ইসলামের স্ত্রী শিল্পী খাতুন (৩৫) ও চয়েন উদ্দিনের স্ত্রী মাহবুব আলম (৩৬) কে বড়াইগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্থরা জানান, শুক্রবার সকালে চান্দাই ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ড সদস্য সুজন আহম্মেদের নেতৃত্বে নৌকা সমর্থক শতাধিক নেতাকর্মী লাঠিসোটা ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে দিয়াড়গাড়ফা গ্রামের স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের বাড়িঘরে হামলা চালায়। এ সময় তারা এমদাদুল হক ইন্তাজ, তার ছেলে জুলফিকার আলী ভূট্টু, ইসমাইল হোসেনের ছেলে গুলজার হোসেন, শাহীন আলম, দেলোয়ার হোসেন ও গোলাম হোসেন এবং হাফিজুর রহমানের ছেলে সানোয়ার হোসেনের বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটপাট করে। এছাড়া মাহবুব আলমের মেকানিকের দোকান ও গুলজার হোসেনের সিমেন্টের দোকানও ভাংচুর করে তারা। এ সময় হামলাকারীরা এসব বাড়ি থেকে মোট সাড়ে ৯ লাখ টাকা ও দুই ভরি স্বর্ণের গহনা লুটে নিয়েছে বলে দাবি ক্ষতিগ্রস্থদের।
দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তিনটি আধা-পাকা বাড়ির ৯টি কক্ষের দরজা-জানালা এবং চারটি টিনশেড বাড়ির ১০টি কক্ষের বেড়ার টিন ও দরজা-জানালা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে বিনষ্ট করেছে। বাড়ির বৈদ্যুতিক মিটার ও পানি উঠানোর পাম্পও ভেঙ্গে ফেলেছে। ঘরের ভেতরে ভাঙ্গা টিভি, ফ্রিজ, আলমিরাসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে। হামলাকারীরা ঘরের ভেতরে ঢুকে নগদ টাকাসহ স্বর্ণালঙ্কার লুটে নিয়ে গেছে বলে দাবি ক্ষতিগ্রস্থদের।
ক্ষতিগ্রস্থ গোলাম হোসন জানান, ভাংচুরের সময় তার বাড়ি থেকে দেড় লাখ টাকা ও দেড় ভরি স্বর্ণের গহনা, জুলফিকার আলী ভূট্টুর গরু কেনার জন্য জমানো দুই লাখ ৪০ হাজার টাকাসহ দুটির সোনার চেইন, গুলজার হোসেনের বাড়ি থেকে তিন লাখ, শাহীনের এক লাখ এবং এবং ছাগল ব্যবসায়ী সানোয়ার হোসেনের এক লাখ ৬০ হাজার টাকা লুট করা হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্থ সানোয়ার হোসেন কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, আমি খাসজমিতে থাকি। আমি রাজনীতি করিনা, এমনকি এখানকার ভোটারও না। তারপরও তারা আমার বাড়ির টিনশেড দুটি কক্ষের বেড়ার টিনসহ চালও কুপিয়ে শেষ করে দিয়েছে। হাতপায়ে ধরেও ঘর দুটি বাঁচাতে পারিনি। আমি এ বাড়ি কিভাবে সারাবো আর এতো শীতে এ ঘরে কিভাবে থাকবো।
ইউপি সদস্য সুজন আহম্মেদ জানান, স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকরাই প্রথমে হামলার প্রস্তুতি নিয়ে জড়ো হয়। খবর পেয়ে নৌকার লোকজন পালটা হামলা করেছে। তবে আমি এ ঘটনার সাথে জড়িত নয়।
বড়াইগ্রাম থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সরল মুরমু জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। আর যেন কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সেজন্য সেখানে এখনও পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।