সুন্দরগঞ্জে দুর্যোগ সহনীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভাব

// হযরত বেল্লাল, সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধিঃ

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তিস্তার চরাঞ্চলে দুর্যোগ সহনীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কাম বন্যা আশ্রয়ন কেন্দ্রের অভাব। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং স্থানীয় জনগণকে সচেতন বা দক্ষ করে গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি। বন্যাকালিন সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু রাখা এবং শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকদের সচেতন করতে সরকার এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার সহযোগিতা কামনা করেছেন প্রতিষ্ঠান প্রধান ও চরবাসি।

উপজেলার তারাপুর, বেলকা, হরিপুর, চন্ডিপুর, শ্রীপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রবাহিত তিস্তার চরাঞ্চলে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের ৪১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যা চলাকালি সময়ে ওইসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। সে কারণে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। বিশেষ করে উপজেলার মহিষবান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বেলকা বটতলা দাখিল মাদ্রাসা, হরিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে, নাজিমাবাদ বিএল উচ্চ বিদ্যালয় ও কাশিমবাজার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় সমুহে বিশুদ্ধ পানি, ল্যাট্রিন, বিদ্যুৎ বা সোলার প্যানেলসহ অবকাঠামোগত অবস্থা ব্যবহারের অনুপযোগি।

সরেজমিন বিদ্যালয় সমুহে গিয়ে দেখা গেছে, পাঠদান উপযোগী শ্রেনি কক্ষ, অফিস কক্ষ, ল্যাট্রিন, নলকুপ, ওয়াশ রুম, বাউন্ডারি ওয়াল, স্কুলে যাওয়া আসার রাস্তা, বিদ্যুৎ বা সোলার প্যানেল ব্যবস্থা, অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের বসার, চেয়ার টেবিল, বেঞ্চ নেই বললেই চলে। 

মহিষবান্ধি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোসলিম আলীর ভাষ্য, চরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমুহ অত্যন্ত অবহেলিত। প্রতি বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যায় প্রতিষ্ঠান সমুহের ব্যাপক ক্ষতি সাধান হয়। সরকারি ভাবে যে টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়, তা দিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ অবকাঠামো ও উপকরণ সমুহ মেরামত বা সংস্কার সম্ভব হয় না। এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় চরের শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা অসচেতন। চরের প্রতিষ্ঠান সমুহ দুর্যোগ সহনীয় করে নির্মাণ ও শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং  স্কুল কমিউনিটিকে দুযোর্গ মোকাবেলায় প্রশিক্ষিত করে গড়ে তোলা একান্ত প্রয়োজন।

চরের বেশিরভাগ ছেলে মেয়েরা বন্যা আসার আগে, চলাকালিন এবং বন্যা পরবর্তী সময়ে কি করতে হবে তা জানে না দাবি করেন মহিষবান্ধি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভিভাবক আনোয়ারুল ইসলাম। তার ভাষ্য চরের স্কুল পড়ুয়া ছেলে মেয়েদের নৈতিক শিক্ষা, সাঁতার শেখানো, সাহসী মনোভাব গড়ে তোলা একান্ত প্রয়োজন। সেই সাথে অভিভাবকদের শিশু সুরক্ষা ও জেন্ডার বিষয়ে সচেতন একান্ত প্রয়োজন। 

হরিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাহিদ হাসান জানান, বন্যা চলাকালিন সময়ে স্কুলে পাঠদান বন্ধ থাকে। সে জন্য চরের স্কুলগুলোতে উচু ভবন নির্মাণ এবং শিক্ষার্থীদের বাড়ি থেকে নিয়ে আসার জন্য নৌকার ব্যবস্থা করা একান্ত প্রয়োজন। এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র, বজ্রনিরোধক যন্ত্র স্থাপন এবং তার ব্যবহার বিধি সংক্রান্ত বিষয়ে সচেতনা বৃদ্ধির দরকার।

নাজিমাবাদ বিএল উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেনির শিক্ষার্থী তাহসিন মিয়া জানান, বন্যা আসলে বিদ্যালয় মাঠে হাটু পানি ঢুকে পড়ে। তলিয়ে যায় নলকুপ, ল্যাট্রিন এবং ওয়াশ রুম। এমনকি শ্রেণি কক্ষে পানি ঢুকে যায়। যার জন্য পাঠদান ব্যাহত হয়। সে কারণে চরের প্রতিষ্ঠানগুলো বন্যা সহনীয় করে গড়ে তোলা দরকার।

কাশিমবাজার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল ওয়াহেদ জানান, এমনিতে চরের প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো অত্যন্ত দূর্বল। তার ওপর প্রতিবছর বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি সাধন হয়। বন্যা সহনীয় কাম আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে চরের প্রতিষ্ঠান সমুহে উচু ভবন নির্মাণ একান্ত প্রয়োজন।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুল মমিন মন্ডল জানান, বন্যার সময় চরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বন্যা পরবর্তী ওইসব প্রতিষ্ঠান পাঠদানের অনুপযোগি হয়ে য়ায়। সরকারি ভাবে মেরামতের জন্য তেমন কোন বরাদ্দ দেয়া হয় না। সরকারি বা বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার মাধ্যমে চরের প্রতিষ্ঠান সমুহ বন্যা সহনীয় করে নির্মাণ করা প্রয়োজন।