বধ্যভূমির প্রতিবাদ

এনামুল হক টগর

সেদিন বাংলার বিস্তীর্ণ বধ্যভূমির পাশ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে কবি দূর বহুদূর-
বুদ্ধিজীবীর ধ্বনি প্রতিধ্বনি শুনতে পেলো বিপ্লবী জীবনের প্রতিবাদ অঙ্গীকার।
গভীর চৈতন্যে কবির মনে পড়লো মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে বিষাদ রক্ত ক্রন্দন।
একাত্তরের দিনগুলো মিছিলে মুক্তির শ্লোগান সংগ্ৰাম আন্দোলন।
শোকাবহ বদ্ধভূমির স্মৃতিসৌধ শহীদ মিনার ও স্বাধীনতার অর্জন।
এক সময় এখানে সবুজ মাঠ ছিল কাঁদা মাটিতে ভরা ফসলের দীপ্ত চেতনা!
রাত্রির আঁধার ভেঙে প্রতিনিয়ত জেগে উঠতো সূর্য দীপ্ত সকালের রৌদ্রোজ্জ্বল কিরণ।
অথচ আজ এখানে বদ্ধভূমি মানবতা কেঁদে ফিরে প্রাণের কতো দহন জ্বালা যন্ত্রণা।
রক্তাক্ত দেশপ্রেমে শহীদ বুদ্ধিজীবীরা এখানে ঘুমিয়ে আছে চৈতন্যে অক্ষয়!
তাদের নিঃশব্দ শ্লোগান থেকে সুষমবণ্টন আহ্বান আসে বাংলার আগামী সংস্কার বিজয়।
তাঁরা বলে এই জীবন এই অতিন্দ্রীয় যৌবন প্রশ্নে প্রশ্নে ক্ষত বিক্ষত দীর্ঘ প্রতিক্ষায়।
কতো-দিন কতো-রাত এই প্রিয় জাতির কাছে অধিকারের কথা বলতে চেয়েছি প্রতিবাদ!
আগামী বংশধররা যেন সভ্যতার কল্যাণে জেগে ওঠে স্বনির্ভর ফসলের চাষাবাদ।
বদ্ধভূমি থেকে বুদ্ধিজীবীরা অতিন্দ্রীয় চেতনায় বলে হে কবি শোন হে প্রিয় দেশবাসী প্রবাহমান নদী।
তোমরা কেমন আছো কেমন আছে তোমাদের প্রিয়তম সন্তানেরা?
কেমন আছে আমাদের প্রিয়তম সন্তানেরা?
কেমন আছে বাঙালি জাতি কেমন আছে আমাদের প্রতিবেশী স্বজনরা?
আর্দশ নীতিবান ও সভ্যতার সৌন্দর্যভরা রমণীরা এখন কোথায়?
আমি লজ্জায় মুখ ফিরাই আমি চিৎকার করে বলি বিপন্ন বিষণ্ণ সর্বদায়।
আমি বলতে পারবো না আমি বলতে পারবো না সমাজ সংস্কৃতি বড় অসহায়!
প্রিয় শহীদ বুদ্ধিজীবী তোমারা কি মানুষের আর্তনাদ শুনতে পাও-না সময় নিরুপায়!
তোমাদের উত্তরসূরীদের ব্যথাভরা জীবনের ক্রন্দন শ্লোগান ধ্বনি প্রতিধ্বনি আহ্বান।
ক্ষত-বিক্ষত মানুষের কতো আর্তনাদ আহত ক্লান্ত যৌবনের কতো অকাল বেদনা।
আমাদের স্বাধীনতার নীতিগুলো জাতির পিতাকে হত্যার পর ছিল ঘাতকের কবলে দিশেহারা।
গ্ৰাম ও নগরের রাস্তায় রাস্তায় মানুষের জীবনগুলো ছিল নিরাপত্তাহীন কঠিন আঁধার।
গভীর বিরহের নিশিথে দেশপ্রেমিকদের জীবন ছিল দুঃখ ও কষ্টে দেহ অঙ্গার।
কবি তোমার কানে কানে ও গোপনে বুদ্ধিজীবীদের হত্যার কথা বলে যাই কঠিন প্রতিবাদ।
তারাই আজ সবচেয়ে বেশি ধনী তারাই আজ অধিক অর্থের মালিক অশনি সময়ের বিবাদ।
যারা বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছিল নির্মম,যারা মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করেছিল নিষ্ঠুর।
যারা হত্যা করেছিল ত্রিশ লক্ষ বাঙালি,যারা হত্যা করেছিল প্রজ্ঞাবান দেশপ্রেমিক তত্ত্বজ্ঞানীদের!
অপমান লাঞ্চিত ও ধর্ষণ করেছিল দুই লক্ষ নারী যুবতী ও মধ্যবয়সীদের জীবন ব্যথাতুর ।
যারা এদেশের মুক্তি চায়নি,যারা এদেশের স্বাধীনতা চায়নি,
যারা এদেশের শান্তি চাইনি,যারা এদেশের উন্নতি ও সমৃদ্ধি চাইনি,
তাদের গাড়ির চাকায় পিষ্ট মানুষগুলো মানবতায় দিশেহারা ইতিহাস ক্লান্ত!
অনাগত সময় ও জাতির কাছে কি জবাব দেবে হে কবি হে প্রিয় দেশপ্রেমিক প্রশ্ন জীবন্ত?
স্বাধীনতা বিরোধী দানবরা মাঝে মাঝে ক্ষমতাধর হয় গাড়ীতে পতাকা উড়ায়।
হায়রে অংশ বিশেষ দুর্বোধ্য মূর্খের নির্বাচনের ফলাফল ধ্বংস অবক্ষয়।
না বুঝা চেতনাহীন ফসলের মাঠ যেন ব্যর্থ বিফল সময়ের সন্ত্রাস সমাজ নিরুপায়।
আহত প্রাণের সভ্যতাগুলো লোকে লোকান্তরে ঘোরে ফিরে বেদনাবিধুর যন্ত্রণায়।
অঘুম অনাহারী ক্ষুধার্ত মানুষগুলো কেঁদে ফিরে বিত্তবানদের দ্বারে দ্বারে রিক্ত অসহায়।
তোমরা চিন্তা করো না হে কবি একদিন এই দেশপ্রেমের মানুষগুলোই জেগে উঠবে সার্বজনীন বিপ্লব।
বুদ্ধিজীবীদের বাণী তাঁরা দিকে দিকে পৌঁছে দেবে আগে পিছে দূর দিগন্ত সজিব।
সেদিন সত্য ইতিহাস জানবে দেশ সমাজ ও পৃথিবীর মহান জাতি বাঙালির বিবেক।
বধ্যভূমির নিঃশব্দ প্রতিরোধ আওয়াজে প্রতিবাদ প্রতিধ্বনি হবে দিকবিদিক।
সেদিন জেগে উঠবে দেশপ্রেম সেদিন জেগে উঠবে সু-ষমবন্টন বঙ্গবন্ধুর সুনীতি।
সমগ্র জন্মভূমির পথে পথে ফুল ফুঁটবে গুণবান মানুষের নির্মল হাসি প্রজ্ঞা দ্যুতি।
মৌসুমী বাতাস চলমান বাস্তবতায় শস্য প্রস্ফুটিত হবে সবুজ সোনালী জমিন।
কৃষাণ কৃষাণি বালক বালিকা আর্দশ কল্যাণে হেঁটে যাবে আগামীর পথে নতুন।
আসন্ন উজ্জ্বল ক্ষুধামুক্তির সংস্কার কর্মকৌশল ও মানবতার সেবায়।
সুন্দর অনুভূতির স্পর্শে মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে যাবে মহাপ্রেমের আলোতে সূর্য উদয়।
জীবনের সব সৌন্দর্য ও সত্য মুহূর্তগুলো আলোকিত হবে মুক্তিযুদ্ধের প্রেম হৃদয়।
পরাজিত শত্রুদের বর্বর আঁধার ভেঙে সভ্যতা প্রজ্বলিত হবে বিশোধন আগামী।
শত যুগের চন্দ্র সূর্য ও নক্ষত্রগুলো হাসবে নতুন রৌদ্রময় দিন ও রাত্রি সমুজ্জল কর্মে।
বিদগ্ধ চেতনায় মহান জাতিকে প্রেরণা দেবে শ্রমজীবী ও কর্মজীবী সাম্য অভেদ।
প্রিয় জন্মভূমিতে বৈচিত্র্যময় পণ্য ও শস্য উৎপাদন হবে বিকশিত সার্বজনীন আবাদ।

১৪/১২/২০২৩