মুক্তিযোদ্ধার চিঠি

// এনামুল হক টগর

হে প্রিয়তমা সখি হে প্রিয়তম বন্ধু হে পরাণের সাথী জীবন যৌবন।
হে বিপ্লবী জীবনের একমাত্র বিশ্বাসী ও সংগ্ৰামী চেতনার দীপ্ত নয়ন।
হে প্রত্যাশার স্বপ্নভরা সবুজ ফসলের মাঠ ও পুষ্প উদ্যানে যৌথ আন্দোলনে বিবেক।
জাতির এই প্রিয় ভূখণ্ড স্বাধীনতার ঐক্যে আমি যুদ্ধের পথে যাত্রী বীরযোদ্ধা সৈনিক।
রণাঙ্গানে মৃত্যুর কথা ভেবে ভেবে তোমাকে চিঠি লিখলাম দীর্ঘ ভালোবাসার ইতিহাস।
কতো গভীর চিন্তা কতো বিষণ্ণ যন্ত্রণা কথা
কতো বিপ্লবী জীবনের অতন্দ্র প্রেম বিশ্বাস।
কঠিন আনন্দের ভেতর প্রাণের কোলাহল বিদ্রোহী চেতনায় মৃত্যুর আসন্ন ডাক।
এমনই দেশপ্রেম জীবন থেকে তোমার কাছে শোক বার্তা পাঠালাম অবাক।
এই মায়াময় এই স্নেহভরা এই বৈচিত্রময় পৃথিবীতে কতো মমতার ভালোবাসা।
আমি আরও কিছু দিন আমি আরও কিছু রাত জীবন বাসনায় অশেষ,
বেঁচে থাকাতে চেয়েছিলাম সুন্দর পৃথিবীতে সভ্যতা ও মানবতার বিশ্বাস।
তোমার সাথে সংসার বন্ধনের কতো ইচ্ছে ছিল আকাঙ্ক্ষার দীর্ঘ জীবন আশা।
আসন্ন মৃত্যু আমাকে বিষাদ স্বপ্ন দেখায় মহান স্বাধীনতার দীপ্তি চেতনায়।
মৃত্তিকার গভীর আর্দশ আমাকে দেশপ্রেমে জাগ্রত করে বিপুল সংস্কারে উদয়।
এই সময় এই ইতিহাস এই মহাকাল আমাকে যুদ্ধে ভাকে স্বাধীনতা দীপ্তকর।
আগামী মুক্তির নতুন চৈতন্য মুক্তিযুদ্ধের জাগরণ ধ্বনি তোলে যুদ্ধের তরবারি।
আমি তোমাকে পরাণের অনেক কথা বলতে গিয়ে বলতে পারিনা,
শুধু এই সৌন্দর্যভরা প্রিয়তম জন্মভূমির জন্যে সাবিরা চন্দনা!
প্রিয়তমা বন্ধু তুমি প্রিয়তমা প্রেম তুমি আমার যাত্রা পথে তাকিয়ে ছিলে মমতায়।
গুপ্তধন ও তত্ত্বজ্ঞানের আলোতে মৃদু হেসে বলেছিলে হে বিদগ্ধ বন্ধু জীবন উৎসর্গ আলো।
হে মুক্তিযোদ্ধা হে দেশপ্রেমিক হে সাহসী বীর হে মহাবীর চেতনায় জীবন নির্মল।
হে অনাগত যুদ্ধের ন্যায়-পরায়ণ বন্ধু হে দীর্ঘ সভ্যতার আর্দশ যোদ্ধা প্রিয়তমা।
তোমাকে রেখে আমি যুদ্ধের পথে নিরন্তর বিপ্লবী মৃত্যুর অভয় দেশপ্রেম।
আমাদের দাবি আমাদের অধিকার আমাদের ভূখণ্ডের জন্য নতুন সকাল।
আমি যুদ্ধের রণাঙ্গন থেকে হয়তো ফিরে আসতে নাও পারি কঠিন যুদ্ধে মৃত্যু সরল।
প্রিয়তম সাথী আমার মৃত্যুর বিনিময়ে তুমি পাবে দাসত্ব মুক্ত নতুন ভূমির আবাদ আকাঙ্ক্ষা।
হে প্রিয়তম বন্ধু যুদ্ধে আমার মন শুধুই তোমার প্রত্যাশায় ক্ষতবিক্ষত প্রতিক্ষা।
প্রিয়তম বধু যদি আমি ফিরে না আসি তবে বুঝে নিও যুদ্ধের রণাঙ্গনে শেষ ইতিহাস।
পরাণের সখি তুমি তো জানো যুদ্ধ মানেই মৃত্যু যুদ্ধ মানেই বলিদান।
যুদ্ধ মানেই ফিরে না আসা যুদ্ধ মানেই জীবন উৎসর্গ অমর ইতিহাস স্মরণ।
শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়াই যুদ্ধ শহীদ চেতনায় মহাকালে জাগরণ ধ্বনি অমর গৌরব!
এই সুন্দর মৃত্তিকার মাঠে ফসলের সু-ষমবন্টন ভালোবাসার সৌরভ।
আমি শান্তি ও প্রশান্তির মাটিতে চির নিদ্রায় জেগে থাকবো মানুষের ভালোবাসা হৃদয়!
প্রিয়তমা প্রেম আমার তুমি বেঁচে থাকলে মানবতার জন্য লড়াই করো শান্তির মহাজীবন!
আমি ইতিহাসে মৃঞ্জজয়ী আমি অনির্বাণ শিখা আলোত বাংলার তৃতীয় নয়ন!
যদি রাতের কালো অন্ধকারে ঘাতকরা আমাকে হঠাৎ আঘাত করে নিশ্চিত,
যদি দীর্ঘ মৃত্যুর দিকে আমাকে হেঁটে যেতে হয় জীবনের কঠিন রক্তপাত,
তবুও আমি বীর বেশে হেঁটে যাবো স্বাধীনতার পতাকা হাতে আজন্ম বিজয়।
মুক্তিযোদ্ধার দেশপ্রেম রক্তে লিখা যাবো স্বাধীনতার লাল সবুজ পতাকার পরিচয়।
এমন সুন্দর আলোকিত স্বাধীনতার জন্য যদি আমার মৃত্যু হয় সুন্দর।
তবে তুমি হবে আমার উত্তরসূরীর জননী প্রথম আলো মুক্তির নতুন সূর্য সুদূর!
মনে রেখো আমার মৃত্যুর পর তুমিই হবে শান্তির প্রতীক জীবন অধিকার গৌরব।
তোমার হাতেই থাকবে সম্মান ও মর্যাদার পরিপূর্ণ কল্যাণ উৎপাদনের মাঠ সজিব।
অনাগত উত্তরসূরীদের হাতে তুমিই তুলে দেবে সম্পদ বন্টনের ন্যায়টরায়ণ আদব।
আমাদের সেই বিপ্লবী জীবনের অভিজ্ঞ দিনগুলো হবে অনাগত আধুনিক নিপুণ!
সেই নব নব চেতনায় তুমি আবার স্বদেশকে জাগিয়ে তুলবে সুষম বণ্টন।
তোমার কর্মপ্রচেষ্টায় শ্রমজীবী মানুষ আবার জেগে উঠবে অধিকার সমান।
বিপ্লবী জীবনগুলো স্বনির্ভর শান্তির শ্লোগান দেবে সময় কতো তাৎপর্যপূর্ণ।
আমাদের বিজয় ও স্বাধীনতার পুষ্প উদ্যানে নতুন বসন্ত আসবে নির্মল চেতনা।
তুমি জন্মভূমির গান গাইবে অনাদি চিরন্তন প্রেমে অপরূপ অনন্ত জীবন!
সেই সদ্য সুরে সুরে আমি জেগে উঠবো নিরন্তর ভালোবাসার দেশপ্রেম জ্ঞান।
এই স্বদেশের মাটিতেই হবে তোমার কর্মজীবী প্রেমের পূণজাগরণ ধ্বনি!
তোমার তৃতীয় নয়নের আমি দেখবো সদ্য নতুন প্রাণের স্পন্দন।
বাংলার প্রথম মুক্ত ভোর সোনালী সূর্য কিরণের রৌদ্রময় পুষ্প সকাল উদ্যান।
আরও দেখবো প্রেম ও ভালোবাসার মধুময় দিনগুলো কতো সুন্দর প্রীতি।
কতো অসমপ্ত অসহ্য বেদনা ব্যথার ক্ষত-বিক্ষত অতীত বিরহ স্মৃতি।
প্রিয়তমা প্রেম ও ভালোবাসার অন্তরঙ্গ বন্ধু আমার দীর্ঘ জীবন দীর্ঘ ইতিহাস!
যদিও বেদনার গভীরে আমার দুঃখ ও কষ্টগুলো জমা আছে ব্যথার ক্রন্দন!
তুমি সুন্দর মন ও মমতার সংসার আশায় আমার জন্য প্রতিক্ষায় থেকো সর্বক্ষণ।
মৃত্যুর চিঠি নিয়ে তুমি কখনো কষ্ট করো না শহীদের মৃত্যু চিরজীবি অব্যয়।
যদিও ঘাতকরা বহুদিন ধরে আমার পেছনে পেছনে ঘুরছে চক্রান্ত বিস্ময়।
ওরা অনেক মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করেছে নির্মম নিষ্ঠুর ষড়যন্ত্র।
ওরা আমাকেও হত্যা করতে চেয়েছিল ক্রোধ বিদ্বেষ হিংসার আমিত্ব।
আমিতো ইতিহাস আমিতো মহাকালের যাত্রায় মৃত্যুঞ্জয়ী!
তুমি আমার বেদনার গভীরে দীর্ঘ দেশপ্রেমের চেতনা।
আমার ভালোবাসাটুকো উপলব্ধি করো মাতৃভূমির মতো বিদগ্ধ পরিচয়।
আমি দূর থেকে প্রতিক্ষা করবো আর তোমাকে দেখবো নতুন আলোয়।
তুমি সামনে ও পেছনের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ আমাকে ভুলে যেও না প্রিয়তম।
কারণ তুমি হচ্ছো আমার দীর্ঘ জীবনের একমাত্র বিশ্বাসী জীবন সংগ্রাম।
তুমি হচ্ছো সাম্য আলোর পথে পথে লড়াইয়ে লড়াইয়ে অনাগত বিপ্লবী।
যুদ্ধের ময়দান থেকে তোমার কাছে চিঠি লিখলাম মৃত্যু কতো সুন্দর গৌরব।
জীবন্ত মরণের স্বাদ নিয়ে ঘুমাবো বাংলাদেশের মাটিতে বিভোর।
হয়তো বিদগ্ধ ভালোবাসায় অমরত্ব হবো নতুন আলোর শিখায় প্রজ্বলিত নূর।
তুমি বেঁচে থেকো বন্ধু তুমি বেঁচে থেকো প্রিয়তমা মানবতার সরল বিবেক।
আরও বেঁচে থাক বাংলাদেশ আরও দীর্ঘজীবী হোক আগামী বংশধর দিকবিদিক।
আরও চিরজীবী হোক এই মহান জাতি আরও চিরন্তন হোক এই মহান স্বাধীনতার বিজয় পতাকা।।