// নাটোর প্রতিনিধি
ইমারত নির্মাণ আইন তোয়াক্কা না করে বহুতল বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে নাটোরের শহরের প্রানকেন্দ্র বলে পরিচিত আলাইপুরে । সরকারি বিধি-বিধান, আইন-কানুনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নাটোর শহরের আলাইপুরসহ বিভিন্ন স্থানে বহুতল ভবন নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। যত্রযত্র ভবন নির্মাণ করায় বিভিন্ন সড়কে ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্স চলাচলের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় বিপদে পড়ার আশঙ্কা পৌরবাসীর।তাদের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষের নজরদারী না থাকায় এসব অনিয়ম হচ্ছে।তবে অনিয়মের খবর পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানালেন পৌর কর্তৃপক্ষ।পৌরসভায় অভিযোগ দিয়ে উল্টো হয়রানীর শিকার হচ্ছেন কেউ কেউ। পৌরসভার নাম ভাঙ্গিয়ে তারা কাজ করে যাচ্ছেন নিজ ইচ্ছে মত।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শহরের আলাইপুরে একের পর এক ৪৮ লিং, ৫০ লিং এবং এক শতাংশ জায়গার উপর ৪/৫ তলা ভবনের কাজ চলছে। নির্মাণাধীন ভবনটির সাথেই রয়েছে নেসকোর বিদ্যুতের লাইন সংযুক্ত খুঁটি। ঝুঁকি নিয়ে ভবনটির নির্মাণ কাজ করছে শ্রমিকরা। যেভাবে সল্প জায়গায় হাইরাইজিং বিল্ডিং নির্মাণ করা হচ্ছে তাতে অন্যন্য বাড়িগুলো ধসে যাওয়াসহ বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।
জানা গেছে, পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের আলাইপুরে ৪৮ লিং জমির উপর পৌরসভার অনুমোদন ছাড়া ও বিল্ডিং কোড অমান্য করে ৫তলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণ কাজ শেষ সেলিম হোসেন নামের এক ব্যবসায়ী। তার দেখাদেখি আশে পাশে ব্যবসায়ীরা ৪৮ লিং, ৫০ লিং এবং এক শতাংশ জমির উপর বহুতল ভবন নির্মান করছে । পৌর কর্তৃপক্ষ বার বার ভবন নির্মাণ বন্ধ করতে নোটিশ দিলেও ভবন নির্মান কাজ বন্ধ করেননি তিনি।ভবন নির্মাণকারীকে লোক দেখানো নোটিশ দিলেও নির্মাণকাজ বন্ধ রাখতে তেমন কোন কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়নি পৌর কর্তৃপক্ষ। শুধু নোটিশ দিয়েই দায় এড়ানোর চেষ্টা করছে পৌর কর্তৃপক্ষ।
নাটোর পৌরসভায় ৯টি ওয়ার্ডে ইমারত আইনের তোয়াক্কা না করেই নির্মিত হচ্ছে বহুতল ভবন। পৌরসভা থেকে নকশা পাশ করিয়েই শুরু হয় ভবন নির্মাণের কাজ। কিন্তু ভবন তৈরির সময় তা মানা হচ্ছে না। পৌর কর্তৃপক্ষের নজরদারি না থাকায় এসব অনিয়ম হচ্ছে বলে দাবি ভুক্তভোগীদের।
সাম্প্রতিক সময়ে নীতিমালা লঙ্ঘন করে নাটোরে অনুমোদন ছাড়াই গড়ে উঠেছে অর্ধ শতাধিক ভবন। এর মধ্যে অনেক ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে পৌরসভার অনুমোদনের তোয়াক্কা করেননি ভবনের মালিকেরা। আর বহুতল ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে পৌরসভার পাশাপাশি পরিবেশ অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিসসহ অন্যান্য সংস্থার বিধি মানার কথা থাকলেও তা করা হয়নি।
নাটোর শহরের কানাইখালী এলাকায় পাশাপাশি গড়ে উঠেছে দুটি বহুতল ভবন। একটি ভবনের মালিক পৌরসভার সড়ক দখল করে গড়ে তুলেছে বাসায় ঢোকার রাস্তা এবং অপর ভবন মালিক সড়কের উপরে গড়ে তুলেছেন ব্যালকনি। একই অবস্থা শহরের বড়গাছা ছোট মোড় এলাকায়। এখানে এলাকাবাসীর বাঁধা সত্ত্বেও পৌর সড়ক দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে বহুতল ভবনে প্রবেশের রাস্তা। কোনও ধরনের আইনের তোয়াক্কা না করেই রাস্তার প্রান্ত সীমায় ভবন নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন বীরদর্পে! জনগণ ও যানবাহন চলাচলের রাস্তা থেকে কমপক্ষে ৫ ফুট জায়গা খালি রেখে পাঁকা স্থাপনা নির্মাণের বিধান থাকলেও তা অমান্য করে নিজের খেয়াল খুশি মত ভবন নির্মাণ কাজ চালানোয় সচেতন মহল পৌরসভা থেকে এসব কাজের তদারকি কর্মকর্তাদের এক প্রকার উদাসী মনোভাব খুঁজে পাচ্ছেন।
অভিযোগ রয়েছে প্লান পাসের আবেদন করেই তা পাসের পূর্বেই পৌরসভার বিভিন্ন স্থানে প্রভাবশালীরা সব ধরনের নিয়ম নীতিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নিজেদের ইচ্ছেমত একের পর এক ভবন নির্মাণ করে যাচ্ছে ।
ভবন নির্মাণের আগে পৌরসভা থেকে নকশা অনুমোদনের প্রয়োজন পড়লেও নাটোর পৌরসভায় এসব নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই যেন অপরিকল্পিত শহর তৈরির প্রতিযোগিতায় মত্ত অনেকেই। আর এ কারণে অনেক সময়ই পাড়া মহল্লায় সৃষ্টি হচ্ছে ঘিঞ্জি গলি, প্রতিবেশীর সাথে একে অন্যের বিরোধ থেকে মামলা পাল্টা মামলার ঘটনা। তবে পৌরসভার উদ্যোগে এ বিষয়ে নিয়মিত সচেতনামূলক কার্যক্রম চালালে ও নিয়মিত তদারকি করলে নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে।
পৌরসভার চিহিৃত কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ম্যানেজ করেই এসব অবৈধ স্থাপনা নির্মিত হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। নাটোর শহর পরিকল্পনাবিদ রফিকুল ইসলাম বলেন, অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা এবং পৌরসভার অনুমোদনহীন এসব বহুতল ভবন মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ ও শহরবাসীর প্রাণহানির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কারণ, আবাসিক এলাকায় বহুতল ভবন নির্মাণ করতে হলে ভবনের সামনে ন্যূনতম ৩০ ফুট প্রশস্ত রাস্তা থাকতে হবে। নাটোরে গড়ে ওঠা অধিকাংশ ভবনের সামনে ওই পরিমাণ রাস্তা নেই। পৌরবাসী জানান, এভাবে অপরিকল্পিতভাবে ভবন নির্মাণ কাজ চলতে থাকলে হুমকির মুখে পড়বে এই শহর ও এর বাসিন্দারা। সড়কে ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্স চলাচলে হবে বাধাগ্রস্ত। থাকে ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কাও।
পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী শাহিন আলম জানালেন, ইমারত আইন লঙ্ঘন করে ভবনের নির্মাণ করা হলে অভিযোগ পাওয়ামাত্র কাজ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে । অনুমোদন ছাড়া ভবন নির্মাণ করার অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে, পৌর মেয়র উমা চৌধুরী জানালেন, ভবন নির্মাণে অনিয়মের খবর পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ভবন নির্মাণে অনিয়ম ঠেকাতে পৌর কর্তৃপক্ষের কঠোর হস্তক্ষেপ চাইছেন নাটোর শহরের বাসিন্দারা। এর মধ্য দিয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম একটি পরিকল্পিত নগর উপহার পাবে বলে আশাবাদী ।