পরিষেবা বিল প্রত্যাহারের দাবীতে মৌলভীবাজারে বিক্ষোভ মিছিল ও স্বারকলিপি প্রদান

// মশাহিদ আহমদ, মৌলভীবাজার ঃ অত্যাবশ্যক পরিষেবা বিল-২০২৩ইং প্রত্যাহারের দাবীতে মৌলভীবাজারে বিক্ষোভ মিছিল ও স্বারকলিপি প্রদান করেছে মৌলভীবাজার জেলা ট্রাক ট্যাংকলরী, পিকআপ, কভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়ন (রেজি নং- চট্র-২৫০৩) আজ ১৩ জুন সকালে। জেলা ট্রাক ট্যাংকলরী, পিকআপ, কভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়ন এর কার্যালয়ের সামন থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু করে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে স্বারকলিপি প্রদানের মাধ্যমে শেষ হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- মৌলভীবাজার জেলা ট্রাক ট্যাংকলরী, পিকআপ, কভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়ন (রেজি নং- চট্র-২৫০৩) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোঃ আব্দুল বাজিদ, সহ-সভাপতি শাবলু মিয়া, সাধারণ সম্পাদক মোঃ আজাদুর রহমান, যুগ্ম সম্পাদক নুরুল মিয়া,সাংগঠনিক শাজাহান মিয়া,দপ্তর সম্পাদক বাবলু আচার্য, কোষাধ্যক্ষ ইলিয়াছ মিয়াসহ বড়লেখা শাখা, জুড়ী শাখা,কুলাউড়া শাখা, কমলগঞ্জ শাখা, শ্রীমঙ্গল শাখা, মৌলভীবাজার সদর শাখা ও শেরপুর শাখার নেতৃবৃন্দসহ অন্যান্যরা। নেতৃবৃন্দরা স্বারকলিপিতে উল্লেখ করেন- গত ৬ এপ্রিল-২০২৩ বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে বা. জা.স- বিল নং ১২/২০২৩ উথ্যাপিত হয়েছে। এই বিলে অত্যাবশ্যক পরিষেবা বলতে ১৮টি সেক্টরকে উল্লেখ করা হয়েছে কিন্তু প্রধানত লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে পরিবহন খাতকে। ফলে পরিবহন খাতের শ্রমিকদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে যে তাদের উপর কাজের চাপ, নিপীড়ন ও বঞ্চনা আরও বাড়বে কিন্তু প্রতিবাদ করার কোন সুযোগ বা অধিকার থাকবে না। এই বিল আইনে পরিণত হলে শ্রম আইনের উপর এই আইন প্রাধান্য পাবে। অথচ শ্রম আইনে বলা হয়েছে এই আইনের অন্যত্র ভিন্নরূপ কিছু নির্ধারিত না থাকিলে, এই আইন সমগ্র বাংলাদেশে প্রযোজ্য হইবে। সে কারণে আমাদের আশংকা যে, এই অত্যাবশ্যক পরিষেবা বিল আইনে পরিণত হলে তা শ্রম আইনকে অকার্যকর করে ফেলবে। কারণ শ্রম আইনের ২০৯ ধারায় শিল্প বিরোধ উত্থাপ ২১০ ধারায় শিল্প বিরোধ নিষ্পত্তির বিধান আছে। বিরোধ নিষ্পত্তির সকল পথ বন্ধ হয়ে গেলে ২১১ ধারায় ধর্মঘটের বিধান এবং পদ্ধতির উল্লেখ করা আছে। ফলে এই বিল আইনে পরিণত হলে শ্রম আইনে ধর্মঘটের যতটুকু আইনসংগত অধিকার আছে সেটাও বাস্তবে কেড়ে নেয়া হবে। এই বিলের প্রারম্ভেই উল্লেখ করা হয়েছে ১৯৫২ সালের অ্যাক্ট এবং ১৯৫৮ সালের অর্ডিন্যান্সকে সময়োপযোগী করিয়া কতিপয় চাকরি বা শ্রেণীর চাকরি বা সেবাকে অত্যাবশ্যক পরিষেবা হিসাবে ঘোষণা, এতদসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অনুমতি অন্যান্য বিষয়ে প্রয়োজনীয় বিধান প্রণয়নকল্পে আনীত বিল হিসেবে এই বিল উত্থাপন করা হচ্ছে। আমরা মনে করি পাকিস্তানি পরাধীন আমলে যে আইনের বিরুদ্ধে আমাদের পূর্বসূরিরা আন্দোলন করেছেন আজ স্বাধীন দেশে সেই আইন কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। দেশের সকল পরিবহণ শ্রমিকের পক্ষ থেকে আমরা (এক) এই বিল ট্রেড ইউনিয়নের গণতান্ত্রিক কর্ম পরিচালনার সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ এবং এই ভূখ-ের শ্রমিকদের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের ফসল কেড়ে নেয়ার সামিল। এই বিল আইনে পরিণত হলে তা হবে আইএলও কনভেনশনের স্বীকৃত ধর্মঘটের মৌলিক অধিকার এবং আন্তর্জাতিক সুপারিশের পরিপন্থী। আমাদের অভিজ্ঞতা বলে, একান্ত বাধ্য না হলে ধর্মঘট শ্রমিকরা সাধারণত করে করতে চাইলে শ্রম আইনের বিধান মেনে করতে হয় এবং বেআইনি ধর্মঘটের বিরুদ্ধে শ্রম আইনেই ধর্মঘট শাস্তির ব্যবস্থা আছে তা সত্ত্বেও অত্যাবশকপরিষেবা বিল উত্থাপন সচেতন শ্রমিকদের কাছে বিস্ময়ের উদ্রেক করেছে এবং শ্রমিক অঙ্গনে অসন্তোষের বীজ বপন করেছে। (দুই) বর্তমানে শ্রম আইন সংশোধন প্রক্রিয়া চলমান আছে। শ্রমিক সংগঠন, মালিক সংগঠন, শ্রম অধিদপ্তর, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর নানা ধরনের সংশোধন প্রস্তাবনা দিয়েছে। আইএলও কমিটি অফ এক্সপার্ট এর পর্যবেক্ষণকেও বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। সেই সময় এই বিল উত্থাপন শ্রম আইন সংশোধন প্রক্রিয়াকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। (তিন) ত্রিপক্ষীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াকে উপেক্ষা করে এই বিল উত্থাপিত হয়েছে। শ্রম সংক্রান্ত যে কোন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত টিসিসি মিটিং এর মাধ্যমে অনুমোদিত হওয়ার কথা। কিন্তু ৎৰি পক্ষীয় কোন সভায় এই বিলের ব্যাপারে কোন আলোচনা হয় নাই। (চার) এই আইন আন্তর্জাতিক পরিবহণ সংস্থার নীতিমালা, সুপারিশ এর সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ। ফলে এই আইন প্রণীত হলে তা আন্তর্জাতিক পর্যায়েও আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করবে। সামগ্রিক বিবেচনায় আমরা মনে করি পরিবহণ শ্রমিকদেরকে ভীতি ও আতংকের মধ্যে রেখে তাদের কাছ থেকে মানসম্পন্ন সেবা আশা করা যায় না। বরং তা অসন্তোষ ও উত্তেজনার বীজ বপন করবে।