বড়লেখায় ১১টি গ্রামের নয়শত পরিবারকে উচ্ছেদের ষড়যন্ত

মশাহিদ আহমদ, মৌলভীবাজার ঃ বড়লেখায় পাহাড়ি জনপদ ‘বোবারথল’ ১১টি গ্রামের, ৯শত পরিবারের প্রায় ১৮ হাজার স্থানীয় বাসিন্দাদের উচ্ছেদের ষড়যন্ত করার কারণে মানবেতর জীবন করতে হচ্ছে এলাকার বাসিন্দাদের। শাহবাজপুর চা-বাগান কর্তৃপক্ষ বে-আইনীভাবে স্থানীয় বাসিন্দাদের উচ্ছেদের ষড়যন্ত করার অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে- জেলার বড়লেখা উপজেলার ৫নং দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী একটি পাহাড়ি জনপদ ‘বোবারথল’ গ্রামে “নয়শত” পরিবারে প্রায় ১৮ হাজার লোকের মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। অভিযোগ উঠেছে শাহবাজপুর চা-বাগান কর্তৃপক্ষ অন্যায় ও বে-আইনীভাবে “বোবারথল” খাস খতিয়ানের জমি আতœসাৎ করার উদ্দেশ্যে এলাকার নিরীহ ও শান্তিপ্রিয় লোকজনদের উপর একাধিক মামলা দিয়ে হয়রানী করে আসছেন। ভেঙে ফেলা হয়েছে অনেক স্থাপনা।

প্রচন্ড হাঁড় কাঁপানো শীতে খোলা আকাশের নীচে মানবেতর জীবন নিয়ে বসবাস করছে অনেক পরিবার। এলাকার শান্তিপ্রিয় জনগনের উপর চালানো হচ্ছে নির্যাতন। মিথ্যা বানোয়াট মামলা দিয়ে এলাকা ছাড়াসহ বিভিন্ন ভাবে হয়রানী করা হচ্ছে। সর্বশেষ প্রাপ্ত সংবাদে জানা গেছে- বিজ্ঞ এ্যাডভোকেট পাপ্পু ভট্রাচার্য্যসহ অন্যান্য আইনজীবিগণ আদালতের নির্দেশে গত ১৯ জানুয়ারী কমিশনার হিসাবে “বোবারথল” সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন। শাহবাজপুর চা-বাগান কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ভূমিহীন, অসহায় মুক্তিযোদ্ধাদের, গরীব, দিনমজুরদের বসত ভিটাহীন ভূমিহীনদের বসতবাড়ী বেআইনীভাবে উচ্ছেদের চেষ্টা ও মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী বন্ধের আবেদন জানিয়েছেন স্থানীয় জনগণ। মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর দপ্তর, ভূমি মন্ত্রনালয়ের সচিব, মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক, সিলেট ডি.আই.জি, অধিনায়ক র‌্যাব-৯, সদর দপ্তর, সিলেট বরাবর ১৭৫জন বসত ভিটাহীন ও ভূমিহীন ভোটার এ আবেদন করেছেন। লিখিত আবেদন ও সরেজমিনে জানা গেছে- তামাদি মোদ্দতের বহু উর্দ্ধকাল যাবত প্রায় ৫ যুগ ধরে (৬০ বছর) এলাকায় বসতবাড়ী তৈরি করে ভোগদখল ও শাসন সংরক্ষণ করে আসতেছেন।

এখানে ১টি ভোট কেন্দ্র, বিজিপি কেন্দ্র ১টি, এমপিও ভুক্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১টি, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৩টি, ২টি দাখিল মাদরাসা, ৫টি হাট হাট বাজার, ২টি খ্রিস্টান মিশনারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১০টি জামে মসজিদ, ৪টি খাসিয়া গির্জাসহ ৪হাজার ভোটার রয়েছে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযোদ্ধে সীমান্ত এলাকা হিসেবে বোবারথল ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় কেন্দ্র। একটু অবস্থা বেগতিক হলেই ভারতে চলে যেতেন যোদ্ধারা। বিশেষ করে বাংলাদেশ লিবারেশন ফ্রন্ট (বিএলএফ) এর যোদ্ধারা যারা দেরাদন চাকরাতায় প্রশিক্ষণ নিয়ে বাংলাদেশে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন তাদের একটা অংশ এই সার্কেলে আশ্রয় নিয়েছিলেন। এ সময় তাদের খাবারদাবারের সার্বিক সহায়তা করতেন সেখানকার বাসিন্দারা। বোবারথল পাহাড়ের সবচেয়ে উচু গগণটিলা (হরতকি) টিলার ওপরে পাকিস্তান ইপিআর ক্যাম্প ছিল। ইপিআর সদস্যদের শাস্তিমূলক বদলি করা হতো সড়ক যোগাযোগবিহীন বোবারথলে। এই সীমান্ত দিয়ে ভারত পাকিস্তানের ছোটখাট যুদ্ধও সংগঠিত হয়েছিল। পুরোনো ইতিহাস আর ঐতিহ্য ধারণ করে আধুনিক সমাজ থেকে পিছিয়ে পড়া একটি জনপদ এটি। এই এলাকাটিতে জীবনযাত্রার ছোঁয়া এখনো লাগেনি। তথ্য প্রযুক্তির কল্যাণে এলাকার গুটিকয়েক মানুষ উন্নত জীবনের ছোঁয়া পেলেও বৃহত একটি অংশ এখনো বর্তমান আধুনিক জীবন ব্যবস্থা থেকে পিছিয়ে রয়েছে। অনেকেই এলাকা ছেড়ে দীর্ঘদিনের মানবেতর জীবনের লড়াইয়ে ক্লান্ত। এই জনপদের যোগাযোগ ব্যবস্থা নিয়ে ভাবতে কষ্ট হয়। কাঁচা রাস্থা দিয়ে জিপ গাড়ী এর মধ্যেমে একটু ভালো যাতায়াত করতে পারলেও বর্ষা মৌসুমে তা হয়ে ওঠে দূরহ। বৃষ্টির পানি থেকে সৃষ্ট ঢলে রাস্থা ভেঙে ফেলে, পাহাড় ধ্বসে রাস্থা বন্ধ হয়ে যায়। বিপাকে পড়েন মানুষ। এ ব্যপারে জানতে বড়লেখা থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ ইয়ারদৌস হাসান বলেন- বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে বাগানের লীজপ্রাপ্ত ভূমিতে অবৈধ ভাবে জবরদখল করে বসবাসকারীদের উচ্ছেদ অভিযানে অংশ গ্রহণ করেছি। বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী উচ্ছেদ অভিযানের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এসব বিষয় একটু জঠিল। তাই সময় করে বলতে হবে।