নাটোর প্রতিনিধি.
নাটোরের গুরুদাসপুরে তীব্র শীতের মধ্যেও চাহিদার তুলনায় অন্তত ৭ মেগাওয়াট কম বিদ্যুৎ পাওয়ায় লোডশেডিং হচ্ছে। বিদ্যুতের অভাবে সেচ কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন কৃষকেরা। এতে বিপাকে পড়েছেন ইরি-বোরো চাষিসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। দিন-রাত মিলে প্রায় ৫-৬ বার লোডশেডিংয়ের কবলে পড়তে হচ্ছে। অব্যাহত লোডশেডিংয়ের ফলে ব্যাহত হচ্ছে বোরোর মাঠ তৈরির কাজ। এর ফলে বোরোর জমি তৈরি করতে একই জমিতে দুইবার করে সেচ দিতে হচ্ছে। এ কারণে অতিরিক্ত খরচ গুনতে হচেছ চাষিদের। এমন পরিস্থিতিতে বোরোর আবাদ নিয়ে কিছুটা উৎকণ্ঠায় চাষিরা।
বোরো আবাদে ব্যস্ত সময় পার করছেন এখানকার চাষীরা। এ বছর মৌসুমের শুরুতে প্রচন্ড শীত ও কুয়াশা সত্ত্বেও ধানের বাজার ভালো থাকায় কৃষকের মাঝে কিছুটা উচ্ছ্বাস দেখা গেছে। তবে এক সপ্তাহ ধরে চলনবিল অধ্যুাষিত গুরুদাসপুরে বিদ্যুৎ বিভ্রাটে (লোডশেডিং) সেচ কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় চাষীদের সেই উচ্ছ্বাস হারাতে বসেছে। এতে চলতি মৌসুমে বোরো আবাদে কৃষি বিভাগের লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে সংশিল্ষ্ট হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন চাষীরা।
গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবছর উপজেলায় বোরোর আবাদের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৫ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে। তবে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েও বোরো আবাদ হবে বলে আশা করছেন তারা।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা গেলো, কৃষকরা মাঠ তৈরির কাজ শুরু করেছেন। প্রাচীন পদ্ধতি ও যান্ত্রিক পদ্ধতি কেউ কেউ হাল চাষ দিচ্ছেন। কিছু কিছু কৃষক তাদের জমিতে ধানের চারাও রোপন শুরু করেছেন।রাত থেকেই সেচপা¤প চালু রেখে ড্রেন দিয়ে ফসলের মাঠে পানি সরবরাহের চেষ্টা করছেন পা¤প অপারেটররা। শীতের কুয়াশা মোড়ানো ভোরে বরফ ঠান্ডা পানিতে দলবেঁধে নেমে বোরো ধানের চারা রোপণ করছেন শ্রমিকরা। এভাবে চুক্তি অনুযায়ী এক জমি থেকে দ্রুত চারা রোপণ শেষ করে অন্য জমিতে পার হয়ে যাওয়ার কথা এসব কৃষি শ্রমিকের। তবে এক সপ্তাহ ধরে এসব শ্রমিক তাদের কাজে গতি বাড়াতে পারছেন না। বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে সেচ কার্যক্রম। দফায় দফায় বিদ্যুৎ বিভ্রাটে সেচ কার্যক্রম বিঘিœত হওয়ায় পিছিয়ে পড়ছে ধান রোপণ।
অপরদিকে ঘন ঘন বিদ্যুৎ যাওয়া আসার ফলে সেচ কাজে ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক মোটরগুলো রয়েছে ব্যাপক ঝুঁকিতে। তবে বেশিদিন এমন পরিস্থিতি থাকবে না বলে জানান পল্লী বিদ্যুতের সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ গুরুদাসপুর জোনাল অফিস সূত্রে জানাযায়, গুরুদাসপুরে রয়েছে পল্লী বিদ্যুতের ৬২ হাজার ১৯০ জন গ্রাহক। এর মধ্যে বাণিজ্যিক গ্রাহক রয়েছে ৩ হাজার ৪৮৩ জন। সেচ কাজে ব্যবহৃত গভীর অগভীর মিলে রয়েছে ১ হাজার ৩১১টি সেচ পাম্প। গুরুদাসপুরে পিক টাইম (সন্ধায়) ১৩ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা থাকলেও পাওয়া যাচ্ছে ৭ মেগাওয়াট। দিনের বেলা ১০ মেগাওয়াটের চাহিদা থাকলেও পাওয়া যাচ্ছে ৬ মেগাওয়াট।
বিলশা মাঠের কৃষক মনিরুল ইসলাম জানান, শীতের মধ্যে পানিতে পা রাখলে মনে হয় বরফের ওপর দাঁড়িয়ে আছি। যেহেতু ধানের বাজার ভালো তাই কষ্ট হলেও চারজন শ্রমিক সঙ্গে নিয়েদুই বিঘা জমি প্রস্তুত করার সময় তিন বার লোডশেডিং হয়েছে। এ কারণে সেচ মোটর ঝুঁকিতে রয়েছে। ঘন ঘন বিদ্যুৎ যাওয়ার ফলে যে কোন সময় মোটর পুড়ে যেতে পারে।
এ বিষয়ে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বড়াইগ্রাম জোনের (বিএমডিএ) সহকারী প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ মুঠোফনে বলেন,‘বোরো মৌসুম শুরু হওয়ায় নলকূপগুলো চালু রয়েছে। কিন্তু লোডশেডিংয়ে ব্যহৃত হচ্ছে সেচ কার্যক্রম। ঘন ঘন বিদ্যুৎ যাওয়া আসার ফলে গভীর নলকূপের মোটর পুড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হারুনর রশিদ জানান,‘ এ বছর বোরোর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে। তবে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারে। ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত বোরো ধান লাগানো যাবে। লোডশেডিংয়ের কারনে সময়মত সেচ দিতে না পারলে বোরোর ফসল উৎপাদন ব্যাহৃত হতে পারে।
নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ গুরুদাসপুর জোনাল অফিসের (ডিজিএম) মোঃ আব্দুর রশিদ জানান, ‘চলতি বোরো মৌসুমে গুরুদাসপুরে পিক টাইম (সন্ধায়) ১৩ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা থাকলেও পাওয়া যাচ্ছে ৭ মেগাওয়াট। দিনের বেলা ১০ মেগাওয়াটের চাহিদা থাকলেও পাওয়া যাচ্ছে ৬ মেগাওয়াট। এতে করে বোরো চাষিরা কিছুটা সমস্যায় পড়েছেন। তবে এতে উৎকণ্ঠার কিছু নেই। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে অতি দ্রুত এ সমস্যার সমাধান করা হবে।#