ওয়াশিংটনে ইসরায়েলি কর্মী নিহতের ঘটনায় ইউরোপকে দোষারোপ ইসরায়েলের

ওয়াশিংটন ডিসিতে বুধবার (২১ মে) ইসরায়েলি দূতাবাসের দুই কর্মী নিহতের ঘটনায় ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদেওন ইউরোপীয় নেতাদের উপর দোষ দিয়েছেন। ইউরোপীয় নেতাদের অভিযুক্ত করে তিনি বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ইহুদি বিদ্বেষী ও ইসরায়েল-বিরোধী উসকানির সরাসরি সম্পর্ক আছে। এই উসকানি এসেছে মূলত ইউরোপ থেকে।’

তার মতে, ইউরোপের সমালোচনাগুলোই এমন এক পরিবেশ তৈরি করেছে, যেখানে ইসরায়েলবিরোধী ঘৃণা ছড়াচ্ছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এমন মন্তব্যের সাথে একমত হয়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুও ফ্রান্স, কানাডা ও যুক্তরাজ্যের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, এই দেশগুলো গাজায় ইসরায়েলের অভিযান বন্ধ করার ও সেখানে মানবিক সাহায্য পাঠানোর আহ্বান জানিয়ে হামাসকে আরও উৎসাহ দিচ্ছে। এর আগে এক যৌথ বিবৃতিতে ফ্রান্স, কানাডা ও যুক্তরাজ্য গাজার উপর নৃশংসতার নিন্দা করে এবং পশ্চিম তীরের অবৈধ ইসরায়েলি বসতিগুলোর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়েছিলো।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এই বিবৃতির তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, ‘তিন দেশের এই নেতারা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়ে আসলে হামাসকেই ক্ষমতায় রাখার বার্তা দিয়েছেন।’

তবে নেতানিয়াহুর এই মন্তব্য প্রত্যাখ্যান করে ওই তিন দেশের কর্মকর্তারা বলেন, এই বক্তব্য ‘অযৌক্তিক ও মানহানিকর’। ইসরায়েলের সঙ্গে ইউরোপের ক্রমবর্ধমান কূটনৈতিক টানাপড়েন ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, ইসরায়েল ও ইউরোপসহ পশ্চিমা বিশ্বের কিছু পুরনো মিত্রদের মধ্যে সম্পর্ক দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। এই সপ্তাহে ইউরোপীয় ইউনিয়ন জানিয়েছে, গাজায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ায় তারা ইসরায়েলের সঙ্গে থাকা সকল চুক্তি পুনর্বিবেচনা করবে।

একইভাবে যুক্তরাজ্যও ইসরায়েলের সঙ্গে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে চলমান আলোচনা আপাতত স্থগিত করেছে। অন্যদিকে, ইসরায়েলের প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্র এখনো প্রকাশ্যে তেমন কোনো সমালোচনায় না গেলেও, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনও স্পষ্টভাবে সমর্থন জানাতে পিছিয়ে আছে। বিশেষজ্ঞ ইয়াইর ওয়ালাচ বলেন, মধ্যপ্রাচ্য সফরের সময় ট্রাম্পের নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ না করার সিদ্ধান্ত থেকেই বোঝা যায় যে, ওয়াশিংটনে ইসরায়েল সরকারের একগুঁয়ে মনোভাব নিয়ে বিরক্তি বাড়ছে।বিশেষজ্ঞ ইয়াইর ওয়ালাচ বলেন,‘আমেরিকার মাটিতে দুই তরুণ ইসরায়েলি দূতাবাস কর্মীর হত্যাকাণ্ড ইসরায়েলের সমালোচকদের অবস্থানে খুব একটা পরিবর্তন আনবে বলে মনে করি না।’

ওয়ালাচের মতে, ‘যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান বদলাবে কি না এ নিয়ে প্রশাসনের ভেতর কেউ কেউ চিন্তা করতেই পারেন। কিন্তু আমার মনে হয় না সেটা ঘটবে। কারণ, বর্তমান প্রশাসন মনে করে, তাদের স্বার্থ হলো পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণে আনা।’

গাজায় চলমান সামরিক অভিযানের কারণে ইসরায়েল আজ এমন এক অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে, যেখানে তার দীর্ঘদিনের মিত্ররাও প্রকাশ্যে সমালোচনা করছে। ইউরোপের অনেক দেশ, যারা একসময় ইসরায়েলের নিরাপত্তার বিষয়ে জোরালো অবস্থান নিত, এখন মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে তাদের সম্পর্ক পুনর্বিবেচনা করছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইসরায়েলের সঙ্গে থাকা একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি পর্যালোচনা করছে। যুক্তরাজ্য মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্থগিত করেছে। এমনকি ইসরায়েলের সবচেয়ে শক্তিশালী মিত্র যুক্তরাষ্ট্রও এখন অনেক বিষয়ে সরাসরি সমর্থন না দিয়ে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।

এই প্রেক্ষাপটে দেখা যাচ্ছে, ইসরায়েল এক ধরনের কূটনৈতিক নিঃসঙ্গতার দিকে এগোচ্ছে। যেখানে সমালোচনা ও চাপের মুখে তার পুরনো বন্ধুরাও ধীরে ধীরে দূরে সরে যাচ্ছে।