শিশু আকলিমা হত্যা রহস্য উদঘাটন গ্রেফতার-৫

খালেদ আহমেদ :

নাটোর জেলার বড়াইগ্রাম থানাধীন চাঁন্দাই ইউপির গাড়ফা উত্তরপাড়া গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা বর্তমানে মালয়েশিয়া প্রবাসি জাহিদুল ইসলামের মেঝ মেয়ে ঐ এলাকার আজেদা নুরাইয়া ক্যাডেট মাদ্রাসার শিশু শ্রেণীর শিক্ষার্থী আকলিমা খাতুন জুঁই (৭) কে একটি কলাবাগানে পাশবিক অত্যাচার, শ্বাসরোধ, ঘার মট*কে ও মুখে এসিড নিক্ষেপ করে হ*ত্যা করা হয়েছে।

১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ বিকাল অনুমান ৫ টায় এ ঘটনা ঘটে। এরপর ভিকটিম এর মা মোমেনা খাতুন বাদী হয়ে চাটমোহর থানায় একটি মামলা রুজু করেন।

মামলার পর পাবনা পুলিশ সুপার মোরতোজা আলী খাঁন এর নির্দেশনায়ন পাবনা চাটমোহর থানার অফিসার ইনচার্জ মনজুরুল আলম’র নেতৃত্বে মামলার তদন্তকারী অফিসার এসআই (নিঃ) আওলাদ হোসাইন সহ সঙ্গীয় অফিসার ফোর্স ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটনের জন্য ব্যাপক তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেন।

এরই ধারাবাহিকতায় পাবনা চাটমোহর থানা পুলিশ, নাটোর বড়াইগ্রাম থানা ও ডিবি পুলিশ এর যৌথ অভিযানে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে চাঞ্চল্যকর এ হ*ত্যার রহস্য উদঘাটন করে অভিযুক্ত ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে।

এজাহার সূত্রে জানা যায় গাড়ফা উত্তরপাড়ায় জুঁই এর দাদি (বাবার খালা) সবুরা খাতুন (৫০) এর বাড়ি। ভুক্তভোগী জুঁই মাঝে মধ্যে সেখানে যাওয়া আসা করতো এবং রাত্রি যাপন করতো।

প্রতিবারের ন্যায় ১৪ এপ্রিলেও সে বিকাল অনুমান সাড়ে ৪ টার দিকে দাদীর বাড়ীতে সেমাই খাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়। পরের দিন সকাল সাড়ে ৭ টার দিকে মেয়েকে আনতে তার মা সবুরার বাড়ীতে যান।

জুঁই এসেছিলো কিন্তু কিছুক্ষণ থাকে গতকালই চলে গেছে জানালে তার মা ও আত্মীয় স্বজনরা খোঁজাখুঁজি শুরু করেন।

খোজাখুজির এক পর্যায়ে ঐ এলাকার মৃত কিরাম হাজীর ছেলে আফজাল হোসেন (৭০) ভুট্টা ক্ষেতের মধ্যে জুঁই এর মৃ*তদেহ পড়ে থাকতে দেখে চাটমোহর থানা পুলিশকে খবর দেন।

পুলিশ সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে মৃ*তদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত পূর্বক হ*ত্যার রহস্য ও কারণ উদঘাটনের জন্য ময়না তদন্তের জন্য পাবনা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে দেহটি প্রেরণ করে ও অভিযুক্ত ৫জনকে আটক করে।

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জুঁই হ*ত্যা কান্ডে সরাসরি জড়িত গ্রেফতারকৃতরা হলেন পাবনা জেলার চাটমোহর থানাধীন হরিপুর ইউপির রামপুর গ্রামের অস্থায়ী বাসিন্দা আয়নাল হকের ছেলে শেখ সাদী (১৬ বছর ০৩ মাস), গাফড়া গ্রামের শফিকুল ইসলামের ছেলে মোঃ আব্দুল্লাহ (১৬ বছর ৫ মাস), নাটোর জেলার বড়াইগ্রাম থানাধীন চাঁন্দাই ইউপির দিয়ার গাড়ফা গড়মাটি গ্রামের শাহিন আলমের ছেলে সিয়াম আলম (১৩ বছর ০৪ মাস), দুলাল হোসেনের ছেলে মোঃ সাকিব (১৬ বছর ০৫ মাস) ও সুলতান হোসেনের ছেলে সোহেল রানা (২৫ বছর ৫ মাস ১০ দিন)।

আটক অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, অভিযুক্ত শেখ সাদী, সোহেল, আব্দুল্লাহ এবং সাকিব পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে দেহ ব্যবসা করা মেয়ে এনে আনন্দ ফুর্তি করবে বলে আগে থেকে পরিকল্পনা করে তারা নিজেরা চাঁদা দিয়ে গাঁজা কিনে নেশা করে।

তারপর সাদী ভিকটিমের বাড়ীর পাশে আম গাছের আড়ালে অপেক্ষায় থাকে। ঐদিন বাড়ি ফেরার সময় বিকাল অনুমান ৫ টায় শিশু জুঁই জনৈক নয়ন এর বাড়ীর পাশে আম বাগানে আম কুড়াতে ও খেলতে গেলে সাদী ভিকটিমের হাত ধরে জনৈক দুলাল হোসেন এর কলাবাগানে নিয়ে যায়। সেখানে লুকিয়ে থাকা সাকিব ও আব্দুল্লাহসহ মোট ৪ জন মিলে জুঁইকে ধর্ষ*ণ করে। এসময় জুঁই জ্ঞান হারালে তার আধ মরা দেহ ভুট্টা ক্ষেতে নিয়ে আসে। সেখানে আধ মরা দেহে আবার সিয়াম ধ*র্ষণ করে। ধ*র্ষণ শেষে জুঁই এর পরনে থাকা লাল রংয়ের হাফ প্যান্ট দিয়ে গলায় বেধে সাদী শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করে। সোহেল রানা ঘাড় মটকে দেয় এবং সাকিব ভিকটিমের পা ধরে রাখে। আব্দুল্লাহ ভিকটিম এর মুখে এসিড জাতীয় পদার্থ নিক্ষেপ করে।

পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক ৫ জন জুঁই হ*ত্যা কান্ডে সরাসরি জড়িত। অভিযুক্তদের আদালতে প্রেরণ কর্যক্রম প্রকৃয়াধীন। তাদের ফৌজদারী কার্যবিধি ১৬৪ ধারা মোতাবেক বিজ্ঞ আদালতে দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি, ডিএনএ সংরক্ষণ ও পরীক্ষা সহ অন্যান্য আনুসাঙ্গিক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।