হোসেনপুর সরকারি মডেল পাইলট স্কুল এন্ড কলেজের প্রধান শিক্ষকের ভুয়া সনদে পদোন্নতির অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক :

কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুর উপজেলার স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান হোসেনপুর সরকারি মডেল পাইলট স্কুল এন্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক জহির রায়হানের বিরুদ্ধে নকল সার্টিফিকেট থাকার সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে ।
অভিযোগ রয়েছে যে নকল সার্টিফিকেট দিয়ে পদোন্নতি নিয়েছেন তা ২০২০ সালে ইসলামিক হিস্টোরি নিয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স কমপ্লিট করেছেন। এরকম একটি নকল সার্টিফিকেট পাওয়া গেছে তার নামে। যার ফলে এ ঘটনা নিয়ে চলছে তোলপাড় । অভিযোগে ২০০৮ সাল থেকে এই প্রতিষ্ঠানে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে চাকরি করে যাচ্ছিলেন তিনি ।
ফলে জনমনে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে যে কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে চাকরি করা শিক্ষক কিভাবে কুলিল্লা ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্সের সনদ পেল। এতে হোসেনপুরজুড়ে ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হয়েছে যে স্বৈরাচার পরবর্তী সময়েও কিভাবে এত বড় অনিয়ম চলমান রয়েছে । বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়েও কথা উঠছে নানানরকম ।
শুধু এই একটি অভিযোগই নয় বরং টাকা নিয়ে শোয়েব মো: রাকিবুল হাকিম তানিম নামের আরেক শিক্ষককেও ভুয়া সার্টিফিকেটের মাধ্যমে নিযুক্ত করার বিষয়েও নানান গল্প সেইসাথে দুই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার সুযোগও দিয়েছিলেন জহির রায়হান। জাল সনদধারী এই প্রধান শিক্ষক এবং রাকিবুল হাকিম তানিমের পরিবারের ৬ জন সদস্যকে স্বনামধন্য এই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার সুযোগ করে দিয়েছেন তিনি অদৃশ্য ক্ষমতার বলে। শোয়েব মো: রাকিবুল হাকিম তানিম ৫ ই আগষ্টের পর থেকে পলাতক কারণ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে সাবেক এমপি জাকিয়া নূর লিপির পরিচয় ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে বড় বড় দুর্নীতি করেছেন । তবে প্রধান শিক্ষক জহির রায়হান পুন:তবিয়তে বহাল রয়েছেন ।
স্বৈরাচারের আমলে জহির রায়হান ও শোয়েব মো: হাকিম তানিমের বিরুদ্ধে মো: শহীদ মিয়া নামের এক লোক দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু ক্ষমতার প্রভাবে তাদের কোনো কিছুই হয়নি বরং যারা তাদের অনিয়মের বিরুদ্ধে ছিলো তাদের উল্টো ভয় ভীতি দেখাতো পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব মশিউর রহমান হুমায়ুনের নাম দিয়ে ।
এছাড়া সরকারি এই প্রতিষ্ঠানে তাদের ইচ্ছানুযায়ী মর্নিং শিফট চালু করে ঐখান থেকেও ৫০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে জহির রায়হানসহ আরো কয়েকজনের বিরুদ্ধে । শুধু এই দুটি অভিযোগই নয় বরং এ যেন দুর্নীতির পসরা নিয়ে বসেছে মোহাম্মদ জহির রায়হান । বিভিন্ন শিক্ষকদের কাছ থেকে তাদের চাকরি স্থায়ীকরণের নামেও লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে তার নামে । এত অভিযোগের প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও স্বনামধন্য এই প্রতিষ্ঠানে বহাল তবিয়তে প্রধান শিক্ষক হিসেবে টিকে আছেন এই ভুয়া সনদধারী প্রধান শিক্ষক । এতে যোগ্য শিক্ষকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে । নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভিন্ন শিক্ষকগণ এ বিষয়ে হতাশা প্রকাশ করে বলেছেন স্বৈরাচার পরবর্তী সময়ে এসেও আমরা বৈষম্য ও অনিয়মের শিকার হচ্ছি। এটা আমরা বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছ থেকে আশা করিনি।
তিনি বর্তমানে চাকরি শেষ করে চলে যাবেন কিন্তু সরকারের কোটি টাকা হরিলুট করে পার পেয়ে যাচ্ছে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা যদি দৃষ্টি না দেয় তবে অপরাধী অপরাধ করে পার পেয়ে যাবে। আর প্রকৃত ঘটনা আড়ালে থেকে গেলে অপরাধ বেড়ে যাবে।
জাল সনদ ও টাকা হরিলুটের বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জহির রায়হান বলেন, দারুল ইহসান বৈধ ছিল যখন, তখন আমি সনদ এনেছি। তবে সরকারী নিয়ম অনুযায়ী সহকারী প্রধান শিক্ষক হলে ২য় শ্রেণীর নিচে হবে না এমন নিয়ম রয়েছে আপনার কি এমন যোগ্যতা রয়েছে এবং প্রতিষ্ঠানের ৫০ লাখ টাকা হরিলুট করে নিয়েছেন এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি কোন সঠিক উত্তর না দিয়ে ফোন কেটে দেন।
কয়েকবার ফোনে ও হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করেও তাকে আর পাওয়া যায়নি।
উল্টো তিনি সুপারিশ করার জন্য তদবির করেন বিভিন্ন মহলে।
উল্লেখ যে, হোসেনপুর এলাকার ইমতাজ উদ্দিনের ছেলে, চেয়ারম্যান দুর্নীতি দমন কমিশন, মহাপরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, চেয়ারম্যান শিক্ষা মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, যুগ্ম সচিব, মো:শফিকুল ইসলামের স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে স্কুল বেসরকারি থেকে সরকারি করার সময় শিক্ষকদের বিভিন্ন তথ্য চাইলে সেখানেও জহির রায়হান শেখ হাসিনার একান্ত সচিব মশিউর রহমান হুমায়ুনকে দিয়ে দায়মুক্ত তদন্ত করে অনিয়মকে কাজে লাগিয়েছেন বলে জানান হোসেনপুরের কয়েকজন শিক্ষক।

এ বিষয়ে স্কুল কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী নাহিদ ইভা বলেন আমি গত ৪ মাস হলো দায়িত্ব পেয়েছি। এমন অভিযোগ আমার কাছে আসেনি, পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।