পবিত্র শব-ই-বরাতের ফজিলত

পবিত্র শব-ই-বরাত হিজরি সালের অস্টম মাস শাবান এর চৌদ্দ তারিখ বা লাইলাতুম মিন নিছফে শাবান-কে বলা হয়।
শব-ই- বরাত “শব” শব্দটি ফারসি যার অর্থ রজনী বা রাত। আর ‘‘বরাত’’ শব্দটি আরবি যার অর্থ পবিত্রতা বা মুক্তি। সুতরাং শব-ই-বরাতের শাব্দিক অর্থ দাঁড়ায় মুক্তি লাভের রজনী। শব-ই- বরাতকে আরবি ভাষায় বলা হয় লাইলাতুল বরাত অর্থাৎ নিস্কৃতির বা মুক্তির রাত। পবিত্র কোরআনুল কারিম ও বিভিন্ন হাদিস শরীফে এ রাতের বর্ণনা ও ব্যাখ্যা করা হয়েছে। কোরআন মজিদে এ রাতকে “লাইলাতুল মুবারাকাতুন” অর্থাৎ শুভ রজনী বা মঙ্গলময় রাত বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

পবিত্র কোরআনে শব-ই-বরাত বা লাইলাতুল বরাত স্পর্কে প্রত্যক্ষ কোন আয়াত নেই। তবে কোন কোন উলামায়ে কেরামগণ সুরা দুখানের ১-৩ নং আয়াতকে এর স্বপক্ষে দালিলিক প্রমাণ হিসেবে দাঁড় করাবার প্রয়াস পেয়েছেন। এই আয়াতে কারিমায় মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, হা-মী-ম। শপথ সুস্পষ্ট কিতাবের। আমি একে নাজিল করেছি এক বরকতময় রাতে। নিশ্চয় আমি সতর্ককারি। এ রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় স্থিরকৃত হয়। (সুরা দুখান আয়াত ১ঃ৩)।

হাদিস শরিফে আছে প্রিয় নবী হজরত মোহাম্মদ (সা.) ফরমায়েছেন, মধ্য শাবানের রাত এলে সেই রাতে নামাজ আদায় করবে এবং দিবসে রোজা রাখবে। আল্লাহ তায়ালা এদিন সুর্য অস্ত যাবার পর থেকেই পৃথিবীর নিকটতম আসমানে অবতীর্ণ হন। ঘোষণা হতে থাকে ‘ কোন ক্ষমা প্রার্থী কি নেই যাকে আমি ক্ষমা করতে পারি। কোন বিপন্ন ব্যক্তি কি নেই যাকে আমি ত্রান করতে পারি। কোন জীবিকা প্রার্থী কি নেই যাকে আমি জীবিকা দান করতে পারি। এমন কি কেউ নেই? এমনকি কেউ নেই? এমন কি কেউ নেই? এভাবে ফজর পর্যন্ত ঘোষিত হতে থাকে।

হজরত আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, প্রিয় নবী (সা.) বলেছেন, ‘ তোমরা রমজানের আগমণের জন্য শা’বানের দিনগুলো গণনা করতে থাকো।’ হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত- প্রিয় নবী (সা.) এরশাদ করেছেন যে, তোমরা কি জান শা’বানের মধ্যবর্তী এ রাত কেমন? হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, হে রাসুল আপনিই ভালো জানেন, মেহেরবানী করে এরশাদ করুন এরাতে কি আছে। নবী করিম (সা.) এরশাদ করেন, এবছর যেসকল সন্তানাদি জন্মগ্রহণ করবে তাদের তালিকা প্রণয়ন করা হয়ে থাকে। যেসকল আদম সন্তান এবছর মারা যাবে তাদের নামও লেখা হয়ে থাকে। এ রাত্রিতেই আল্লাহ তায়ালার দরবারে বান্দার আমল পেশ করা হয়। আর তাদের রিয্কও নাজিল করা হয়।

মহানবী (সা.) বলেন, ‘‘ একদা জিবরাইল এসে আমাকে বলে গেলেন, হে আল্লাহর হাবিব, আপনি শয্যা ত্যাগ করে উঠুন এবং আল্লাহ তায়ালার দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। কেননা এরাতে আল্লাহ তায়ালা স্বীয় বান্দাদের জন্য একশ রহমতের দরজা খুলে রাখেন। হজরত আলী (রা.) বর্ণনা করেছেন, মহানবী (সা.) এরশাদ করেন, শা’বান মাসের মধ্যবর্তী রাত জাগরণ কর এবং পরদিন রোজা পালন কর কেননা আল্লাহ তায়ালা সুর্যাস্তের সাথে সাথে পৃথিবীর আকাশে তাজাল্লী ফরমান।’
অন্য এক হাদিস শরিফে হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করে বলেন, একদা রাতে আমি রাসুল (সা.) এর কাছে গেলাম। এসময় তিনি নামাজে রত। সেজদায় গিয়ে তিনি অঝোরে কাঁদছেন দেখে জিজ্ঞাসা করলাম আমার পিতা-মাতা উৎসর্গিত হোন- আপনি সেজদায় গিয়ে উম্মতের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছেন আর আমি দাঁড়িয়ে আছি। মহানবী (সা.) বললেন,তুমি কি জান আজ কোন রাত? এ রাত সম্পর্কে তুমি কিছু জানকি? জবাবে বল্লাম আল্লাহ এবং তাঁর রাছুল ভালো জানেন। তিনি বললেন এ রাত পাপ মুক্তির ও কল্যাণময়ী রাত। এ রাতে আল্লাহ পাক রহমতের দরজা খুলে দেন। বান্দাদের মধ্যে রহমত, বরকত এবং নিয়ামত সমূহ বিলিয়ে দেন।

নবীজি এরশাদ করেন, ‘‘আল্লাহ তায়ালা শা’বান মাসের মধ্যবর্তী রাতে বিশ্বের আকাশে উদিত হন এবং কলব গোত্রের বনি রাবি এবং মুদার এর সমস্ত ভেড়া ও বকরির গায়ের পশমের পরিমাণ আমার উম্মতের গোনাহ্ রাশি মাফ করেন। রমজান মাসের পুর্বের মাস শা’বান মাস। যাকে রমজান মাসের প্রস্তুতি মাস বলা হয়। এ মাসে নফল রোজা রেখে ফরজ রোজার জন্য দেহ ও মনকে পবিত্র করার জন্য তাগিদ এসেছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করে বলেন, আমি নবী করিম (সা.) কে বলতে শুনেছি তোমরা রমজানের রোজার উদ্দেশ্যে শা’বান মাসে রোজা রেখে দেহ মনকে পবিত্র কর।
তাই আত্মা সংশোধনের মধ্য দিয়ে যথাযথভাবে সৌভাগ্য রজনীতে আমাদের ভাগ্যকে মহিয়ান করে তুলতে হবে।
(লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট)।