কলমাকান্দা (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি
প্রায় ৩৫ বছর আগে মজলিশ খাঁ নামে এক দিনমুজুরের সাথে বিয়ে হয় কুলসুমার। বিয়ের পর থেকেই অভাব অনটনে চলে তাদের সংসার। বিয়ের দুই বছর পর এক কন্যা সন্তানের মা হয় কুলসুমা। কোনো রকমে তিনজনের সংসার চলছিল তাদের। কয়েক বছর পর আরো দুইটি ছেলে সন্তানের মা হন তিনি। কুলসুমা ও তার স্বামী দু’জনই দিন মুজুরের কাজ করতো। দু’জনে কাজ করে পাঁচজনের সংসার কোনো রকমে চলছিল। মেয়ে ও ছেলেদের ভর্তি করা হয় গ্রামের পাশের গাড়িগাতি নামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। বড় ছেলে মোফাজ্জল যখন তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে, হঠাৎ করে শুরু হয় তার দুই পায়ে ব্যথা। তখন স্থানীয় ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধপত্র খাওয়া শুরু হয়। কিছুদিন যেতে না যেতেই ছোট ছেলে মোখলেছ এরও একই রকম দুই পায়ে ব্যথা শুরু হয়। তিন থেকে চার মাস পর মোফাজ্জল ও মোখলেছ এর পা অবশ হয়ে যায়। এদিকে বয়সের ভারে কুলসুমার স্বামী মজলিশ খাঁ অসুস্থ হয়ে পড়ে। সেই থেকে শুরু হয় তাদের সংসারে অবর্ণনীয় দুঃখ-দুর্দশা। বেঁচে থাকার জীবনযুদ্ধে অবশ ছোট ছেলেকে নিয়ে কুলসুমা খাতুন শুরু করেন ভিক্ষা। দিনে কখনো ২০০ কখনো ৩০০ টাকা উপার্জন হতো। এই টাকা দিয়ে কোনো রকমে চলতো তার সংসার। পরিবারের অবশ দুই ছেলেসহ তারা থাকতেন মাটির ভাঙা ঘরে। বর্ষায় ঘরের চালের ফুটো দিয়ে পড়া পানিতে ভিজতে হতো পরিবারের সদস্যদের। তবে এখন আর এই কষ্ট করতে হবে না তাদের। প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের কল্যাণে টিনের ছাউনি দেওয়া পাকা ঘর পেয়েছেন তিনি।
কুলসুমা খাতুন যুগান্তরকে বলেন, ১২ বছর ধইরা ভিক্ষা কইরা আমি আমার প্রতিবন্ধী দুই পোলা লইয়া খেরের ভাঙ্গা ঘরে থাহি। সরকার আমারে বিনা টেহায় ঘর বানাইয়া দিছে। কুনুদিন স্বপ্নেও ভাবচি না এমন ঘরে থাকবাম। এই বলে ওই ভিক্ষুক নারী খুশিতে কাঁদতে শুরু করেন।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের উপসহকারী প্রকৌশলী বুলবুল হাসান জানান, ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর অধীনে উপজেলার আট ইউনিয়নের ১০১ দুস্থ মানুষকে সেমিপাকা ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়। রঙিন টিনের ছাউনি দ্বারা নির্মিত ১৯ দশমিক ৬ ফুট বাই ২২ ফুটের ওই সকল সেমিপাকা ঘরে রয়েছে দুইটি বেড রুম, বারান্দা, টয়লেট ও কিচেন।
কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সোহেল রানা বলেন, মুজিববর্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপহার হিসেবে উপজেলায় ১০১ পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ঘর তৈরি করে দেওয়া হয়। গত শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এসব ঘর বিতরণের শুভ উদ্বোধন করেন। এতে করে ওই পরিবারগুলোর জীবনের মান উন্নত হয়েছে।