বীরত্ব বীরাঙ্গনা

১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস।
যেমন খুব ভালো লাগে পেলে দুখের পরে সুখ,
তেমনি বিজয় দিবসে পেয়েছিল সুখ; এই বাংলার বুক।

বিজয় দেখেনি.ৃআমি শুনেছি দাদীর মুখে,
শুনিয়েছিল সেদিন ছলছল অশ্রু ভরা চোখে।

তখন খুব ছোট ছিনু; থাপ থুপ চলা তুলতুলে পা’য়ে,
জোর করে ধরে শীতের কাপড় মা পরিয়ে দিতেন মোর গা’য়ে।

শীতের মৌসুম; চারিদিকে আপছা আলো; দেশে চলছে যুদ্ধ; গুড়ুমগাড়ুম,গুড়গুড় গুলির আওয়াজ,
এতোদিন পার হলো তবুও’রে দাদু…
সে সুর কানে বাজে আজ।

বাজান ছিল খুব সাহসী; চারিদিকে গুলির বিকট শব্দ শুনে বাজান হারায় বুকের বল,
মা’কে আর মুকে, জড়িয়ে ধরে বলেছিল; তোদের ছেড়ে কেমনে যুদ্ধে যাব বল ?

দাদা ছিল খুব ভয়কাতুরে; রাতের আঁন্ধে দাদীকে ছাড়া কখনো যায়নি ঘরের বাইরে,
গুলির আওয়া শুনে দাদার রক্ত গরম হলো;
মু’গো দেশ লুটবে শত্রু ? হাঁক ছেড়ে বলে কে কোথা আছিস আয় তোরা যুদ্ধে যাইরে।

দাদার চোখে মুখে হাত বুলিয়ে দাদী বলেছিল;যাও দেশের জন্য; দাদী সাহস যুগিয়েছিল; বাঁধা দায়নি,
দাদীর ললাটে লালা মাখা চুমু দিয়ে শেষ বিদায় নিয়েছিল দাদা; আর পেছন ফিরে চায়নি।

দাদার পেছন পেছন ছুটে গিয়েছিল দাদী; গাছের আড় থেকে দেখেছিল; তার নব বাহুবল।
একেই বলে বীরপুরুষ; অশ্রু ভরা নয়নে চাহি দাদী মনে মনে বলেছিল; হয়ে বিহ্বল।

ফিরে এসে ঘরে; সন্তানকে বুকে জড়িয়ে কেঁদে বলেছিল দাদী; বাছারে..প্রিয় মানুষটার সাথে আর হবে কি দেখা; সত্যি হয়নি দেখা ?
দাদার সেই সুঘ্রাণ মুখের চুম্বনের লালা দাদীর কপালে আজ নিশানের লাল টিপ আঁকা।

অতঃপর….
রেহায় পায়নি দাদী; পাক হানাদার শত্রুদলের বিষাক্ত চোখ থেকে; ছিনিয়ে নিয়েছিল তারা; ছেলের আক্ষেপের জর্জরিত কম্পিত হাত হতে,
খাবলে খামচে খেয়ে তারা; অবশিষ্ট ফেলে রেখেছিল বাংলার রাজপথে।

শুধু জীবনেই বেঁচে ছিল দাদি; তার দু’নয়ন উদাসীন হয়ে ঐ দূর আকাশে কী যেন দেখে,
আজ দাদীর মন ঘুরে; বাংলার এগাঁ’য়ে, ওগাঁ’য়ে, আকাশে বাতাসে; বীরঙ্গনার আবীর মেখে।

বিজয় আছে লুকে,দাদীর মাথা ভরা কুঁকড়ানো চুলে,
যখন তখন সে; উন্মাদ হয়ে খুঁজে ফিরে আপন খোঁপা খুলে।

আজও সাথী হারা দাদীর শোকের মাস্তুল উড়ে সারা বংলায় অদৃশ্য নিরাকার পবনে,
হারানোর শোকে; প্রলাপের বাঁশী বাজে বুকে, আজোও তার শূন্য বিছানায় শয়নে স্বপনে পড়ে থাকা একা নির্জনে।

অশ্রু ঝরে ঝরে নয়ন এখন ঝাপসা; কিছু দেখেনা; তবুও অনুভব গুলো এখনো দাদীকে পিছু ডাকে,
পতাকা বুকে জড়ে সুস্থী ফিরে পায়; দাদীর মতো বীরত্ব বীরাঙ্গনা লাখেলাখে।

স্বামীর বিনিময়ে দেশকে পেয়ে দাদী বারেক উল্লাসে প্রাণ খুলে হাসে,
বিজয় পেয়ে দাদীর মতো; অসংখ্য সম্মানহারা আপ্লুত প্রতি নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাসে।

দাদা-দাদির মতো….
লক্ষ প্রাণের রক্তে ভাসিয়ে; লাল-সবুজের নিশান এনেছে ছিনিয়ে,
ফিরে পাওয়া সোনার বাংলা; খুয়ানো হাজার হাজার সত্বীত্বের বিনিময়ে।

বাংলার হাজারো নারীর উপমা এই লক্ষী দিদা,
লক্ষ নরের প্রাণের উপমা অতুলনীয় এই দাদা।

তোমার আমার সোনার বাংলা; সোনা ফলা মৃত্তিকা;
সোনার মতোই খাঁটি মানুষ মোরা; মোরা সচেতন,
আর খর্ব হতে দেয়া যাবেন কখনো; দেশকে স্বযতেœ আগলে রাখবো মোরা আজীবন।

আজ আমার প্রাণের বাংলাদেশ।
সোনা ফলা প্রিয় মৃত্তিকায়; অধিকার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি।