মৌলভীবাজার শহর ও শহরতলীর গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও পয়েন্টে প্রায় শতাধিক ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার আওতায় আনা হলেও অধিকাংশ স্থানে সিসিটিভি ক্যামেরা অকেজো রয়েছে এমন অভিযোগ উঠেছে। ফলে অপরাধী সনাক্ত করতে ব্যর্থ হচ্ছে পুলিশ। সচেতন মহল থেকে প্রশ্ন উঠেছে ডাক-ঢোঁল বাজিয়ে লাগানো ক্যামেরা জনগনের কি কাজে আসবে নাকি এভাবেই চলবে? সিসিটিভি ক্যামেরা অকেজো হওয়ায় ফায়দা কারা পাচ্ছে ? মৌলভীবাজারের সচেতন নাগরিকরা সিসিটিভি ক্যমেরা নষ্ট থাকায় শুধু মাত্র অপরাধিরা ফায়দা পাচ্ছে এমনটা মনে করছেন না। একটি বিশেষ মহলেরও ফায়দা রয়েছে বলে মন্তব্য করেন অনেকে। আর যদি জনগনের সেবায় জন্য হয়ে থাকে তাহলে সিসিটিভি অকেজো ক্যামেরা গুলোর মেরামত করা হচ্ছেনা কেন ? এই প্রশ্ন গুলোর সঠিক উত্তর কোন পাওয়া যাচ্ছেনা। সিসিটিভি ক্যামেরা গুলো নষ্ট থাকায় মুখোশধারী অপরাধীদের মনে ফিরে এসেছে স্বস্থি। তারা একের পর এক ছোট-বড় ঘটনায় অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছে? হাতে গোনা দু একটি ঘটনার অপরাধী ধরা পড়লেও বেশী ভাগ অপরাধীরা অধরা থেকে যাচ্ছে। শহরের সাইফুর রহমান রোড,শমসের নগর রোড,কোর্ট রোড,বেজবারী, পশ্চিম বাজার,কুসুমবাগ,শ্রীমঙ্গল রোড,চাঁদনীঘাটসহ বিভিন্ন স্থানে চুরি ছিনতাই,সন্ত্রসী হামলা,খুনের ঘটনা ঘটলেও অনেকে থানায় গিয়ে বিভিন্ন ভাবে হয়রানির শিকার হওয়ার ভয়ে মামলা দিতে যান না বলে অভিযোগ রয়েছে। শহরের প্রবীন মুরব্বী,যুব সমাজ, প্রবাসী, সাংবাদিক, আইনজীবি, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, শিক্ষক, শিক্ষাথীসহ একাধিক সচেতন জনগন দু:খ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন- সকলের সহযোগীতায় ঐতিহ্যবাহি মৌলভীবাজারে পুলিশের জোড়ালো ভুমিকায় জনগন নিরাপত্তা ও সাদা মাঠা জীবনে সুষ্টু সুন্দর পরিবেশে বসব্সা করতে পারবে। সাধুবাদ জানিয়ে দেশ ও বিদেশ থেকে অনেকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। কিন্তুু বর্তমান সময়ে এ শতভাগ সুফল পাচ্ছেনা জনগন। জানা গেছে- গত ২৬জানুয়ারি রবিবার সকালে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন,বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী পিপিএম (বার)। একই সাথে থানার কার্যক্রমে স্বচছতা ও জবাবদিহিতার লক্ষ্যে সিসি টিভি স্থাপন কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়। সিসি ক্যামেরা নিয়ন্ত্রণের জন্য বেশ কয়েকটি মনিটর রাখা হয়েছে। যাহা দিবা রাত্রি চালু থাকবে। এবং নানা ধরনের অপরাধ দমন ও অপরাধীদের শনাক্ত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে জানিয়েছিলেন মৌলভীবাজার জেলা পুলিশ সুপার। প্রথম ধাপে বিগত ২০১৫সালের ১৪মে থেকে আইনশৃংখলা নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়নে মৌলভীবাজার শহরকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছিল,এমন খবরে জনগনের মধ্যে একটা নিরাপত্তা ও সুরা পাওয়ার আনন্দ কাজ করেছিল। কিন্তু এসব কিছুই প্রচারণার মধ্যেই সীমাবদ্ধ বর্তমানে মন্তব্য করে একাধিক ঘটনার কোন সুরাহ হয়নি বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনা: ভুক্তভোগী মৌলভীবাজার শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শেখ জহির মটরসের স্বত্তাধিকারী শেখ জহির আহমদ‘র উপর গত ৩০নভেম্বর সোমবার রাত অনুমানিক ১০টার দিকে (ওয়াবদা পয়েন্টের) গুরুত্বপুর্ন স্থানে ৬জন হেলমেট পরিহিত লোক অস্ত্র-সস্ত্রসহ তার উপর হামলা। এ ঘটনায় মৌলভীবাজার মডেল থানায় ভুক্তভোগী বাদী হয়ে মামলা দায়ের করলেও ঘটনাস্থলের সিসিটিভি কাজ করছে না বলেই শেষ। এর আগে একই ভাবে,ব্যবসায়ী শেখ জহির আহমদ এর উপর বিগত ২০১৯সালের ২১জুন বেরীরপাড় ধরকাপন রাস্তার সম্মুখে সুমন হেয়ার ড্রেসার সেলুনে অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসীরা আক্রমণ করেছিল। থানায় সাধারণ ডায়রী নং-১৩১৬/১৯,তারিখঃ ২৩/০৯/২০১৯ইং)। সেই ঘটনারও তথ্যসুত্র ও অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসীদের সনাক্ত করতে আজ পারেনি পুলিশ। গত ২৭নভেম্বর রাত্র অনুমান ১২ঘটিকায় মৌলভীবাজারে পুরাতন হাসপাতাল সড়কে আল-হামরা (প্রাঃ) হাসপাতালে ডেলিভারী রোগী মৌলভীবাজার জজ কোর্ট এর শিানবীশ আইনজীবি সাজবিন দেওয়ান (২৮)সহ স্বজনদের হাসপাতালে জোর পূর্বক আটক করে প্রকাশ্য পিস্তল শুট করিয়া হত্যার হুমকি দেয়ার ঘটনায় ভুক্তভোগীর স্বামী বাদী হয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও সেই সংশ্লিষ্ট আল-হামরা (প্রাঃ) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও অজ্ঞাতনামা অস্ত্রধারীকে অজ্ঞাত কারণে সনাক্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পুলিশ। একই ভাবে ঘটনাস্থলের সিসিটিভি কাজ করছে না বলে জানা গেছে। গত ২৮নভেম্বর রাত সাড়ে ১০টার দিকে শহরের চাঁদনীঘাট ব্রীজের কাছে অঞ্জনা (আলমগীর আহমদ) নামে তৃতীয় লিঙ্গের এক ব্যক্তি মারা গেলেও প্রকৃত ঘটনা সনাক্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে আসামী গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়নি পুলিশ। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি কাজ করছে না বলে জানা গেছে। শহরের এম সাইফুর রহমান রোর্ডের অভিজাত মনসুন হোটেল এন্ড চাইনিজ রেষ্টুরেন্ট এ চুরি হলেও বিগত কয়েক মাসেও সনাক্ত হয়নি চুরেরা। গত ৬ডিসেম্বর শহরের আবু তাহের রোড দরগা মহল্ল¬া আউয়াল মিয়ার বাসায় বাড়াটিয়া জেসমিন বেগমের বাসা ডাকাতি সংগটিত হয়। এনিয়ে মৌলভীবাজার আদালতে একটি ডাকাতি মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানা গেছে। সম্প্রতি চাঁদনীঘাট বাস স্টেন্ড এলাকায় মাহি এন্ড ব্রদার্সসহ কয়েকটি ও সাইফুর রহমান সড়কের চৌমোহনা এলাকার আহমদের পান দোকানে চুরির ঘটনা ঘটলে ও কয়েক মাসেও উদঘাটন হয়নি । সিলেট সড়কের বড়হাট এলাকার ২টি দোকানে গত নভেম্বর মাসের প্রথমার্ধে নগদ টাকা,মালামাল লুট করে নিয়ে গেলেও কোন সুফল পায়নি ব্যবসায়ীরা। শুধু তাই নয় শহরের সড়কে দোকান পাটসহ বাসা-বাড়িতে চুরি-ছিনতাই ঘটছে। এসব ঘটনার পর কেহ মামলা দিতে চায়না। সিসি ক্যামেরা নিয়ে শহরের কয়েকটি স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থী/শিক্ষক/শিক্ষিকা ও অভিবাবকরা বলেন- পুলিশ সিসি ক্যামেরা স্থাপনের ফলে আমরা নিরাপাদ ও নিশ্চিন্তে ছিলাম। এখন যেভাবে শুনতে পাচ্ছি। লাগানো সিসি ক্যামেরা অমুল্যহীন। সেই আগের ভীতি নিয়ে থাকতে হচ্ছে। আমরা আশা করবো প্রশাসন দ্রুত সেগুলো সংস্কার করবে। অপরাধ দমনে সহায়ক ভুমিকা রাখবে। এ ব্যপারে জানতে চাইলে- মৌলভীবাজারের ক্যাবল ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এমসিএন (মৌলভীবাজার কেবল নেটওয়ার্ক) এর চেয়ারম্যান হাসান আহমদ জাবেদ বলেন- পুলিশ ও ব্যবসায়ীদের আর্থিক সহযোগিতায় শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে প্রায় শতাধিক ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা (সিসি) স্থাপন করে তা চালু করা হয়েছে। এসব পুলিশ বিভাগের পক্ষ থেকে রক্ষনাবেক্ষণ করা হয়। বর্তমানে ফান্ড না থাকায় সিসিটিভি রক্ষনাবেক্ষণ করা সম্ভব হচেছনা। মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব মো. ফজলুর রহমান বলেন-শহরের কোজ সার্কিট ক্যামেরা নিয়ন্ত্রন ও পর্যবেণ পুলিশের প থেকে করা হয়। সেখানে পৌরসভার কোন দায়িত্ব নাই। এ ব্যপারে জানতে চাইলে মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মো. ফারুক আহমেদ পিপিএম (বার) বলেন- ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার সংখ্যা এই মুহুর্তে বলতে পারবোনা। তবে,কিছু জায়গায় লাইনে কাজ করতে গিয়ে সার্কিট ক্যামেরার লাইন নষ্ট হয়ে গেছে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থান আল-হামরা (প্রাঃ) হাসপাতালে প্রকাশ্য পিস্তল বাহির করিয়া শুট করিয়া প্রাণে হত্যার হুমকি,ব্যবসায়ীর উপর সন্ত্রাসী হামলা ও চাঁদনীঘাট ব্রীজের কাছে তৃতীয় লিঙ্গের এক ব্যক্তি মারা যাওয়ার ঘটনা কোজ সার্কিট ক্যামেরার মাধ্যমে সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখছি।