বড়াইগ্রাম (নাটোর) প্রতিনিধি
নাটোরের বড়াইগ্রামের মশিন্দা ও কুমরুল এলাকায় দুটি রাস্তা পাকা করার কাজে ময়লা-আবর্জনাযুক্ত নিম্মমানের ইট-খোয়া-বালু ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়দের বাধার মুখে রাতের আঁধারে রাস্তায় এনে নিম্নমানের ইটের খোয়া ফেলছেন ঠিকাদারের লোকজন। এতে স্থানীয়দের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার নগর ইউনিয়নের মশিন্দা গ্রামের আব্দুল হালিমের বাড়ির কাছ থেকে পাকার মাথা পর্যন্ত ১.১ কিলোমিটার রাস্তা পাকা করার জন্য ৬৯ লাখ এবং জোয়াড়ী ইউনিয়নের কুমরুল বড় মসজিদ হতে দুলু হাজ¦ীর বাড়ি পর্যন্ত এক কিলোমিটার রাস্তা পাকা করার জন্য ৬৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। নাটোরের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ইসলাম কনস্ট্রাকশনের নামে কাজ দুটি বরাদ্দ হলেও সাব-কন্ট্রাক্টে কুমরুলের রাস্তার কাজটি করছেন ঠিকাদার সোহেল। প্রায় ১০ মাস বক্স কেটে ফেলে রাখার পর সম্প্রতি রাস্তা দুটির কাজ শুরু হলেও নিম্নমানের ইটের খোয়া ও মাটিযুক্ত বালি দিয়ে কাজ করার অভিযোগ উঠে।
সরেজমিনে দেখা যায়, কুমরুল রাস্তায় নিম্নমানের ইটের খোয়া এনে পুরো রাস্তা জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলে রাখা হয়েছে। রাতের আঁধারে এসব নিম্নমানের খোয়া এনে ফেলা হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। অপরদিকে, মশিন্দা এলাকার রাস্তাটিতে ইটভাটায় দীর্ঘদিন পরে থাকা কাদা ও নোংরাযুক্ত নিম্নমানের ইটের খোয়া দেয়া হয়েছে। এসব খোয়ার সঙ্গে ময়লা-আবর্জনাসহ কমপক্ষে ২৫ শতাংশ হারে ইটের গুড়া (ডাস্ট) রয়েছে। দুটি রাস্তাতেই সাব বেইজ স্তরটি ৬ ইঞ্চি হওয়ার কথা থাকলেও তা কোনভাবেই তিন-চার ইঞ্চির বেশি হবে না। এ স্তরে ৬০ : ৪০ হারে খোয়া ও বালু দেয়ার কথা থাকলেও স্থানীয়দের সহায়তায় রাস্তা খুঁড়ে ইট খোয়ার পরিমাণের উল্টো চিত্র পাওয়া গেছে। বক্স কাটার পর ৬ ইঞ্চি পরিমাণে বালু দেয়ার কথা থাকলেও তা কম দেয়া হয়েছে। বক্স কেটে রোলার করে বালু ফেলা এবং বালুর উপরে পুনরায় রোলার করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
এ ব্যাপারে মশিন্দা গ্রামের রায়হান আলী জানান, রাস্তায় অত্যন্ত নিম্নমানের খোয়া দেয়া হচ্ছে। বালুর মানও খারাপ। রাস্তায় খোয়া ও বালুর পরিমাণে নিয়ম মানা হচ্ছে না। আমরা নিষেধ করলেও ঠিকাদারের লোকজন তা শুনছেন না। এভাবে রাস্তা করলে ৩-৪ মাসের মধ্যে ভেঙ্গে যাবে। কুমরুল গ্রামের বাদশা মিয়া বলেন, শুরু থেকেই স্থানীয় লোকজন কাজের মান নিয়ে আপত্তি করছেন। কিন্তু ঠিকাদারের লোকজন কারো কথা না শুনে রাস্তায় ট্রাকে ট্রাকে নিম্নমানের খোয়া ফেলেছে। এতো নিম্নমানের খোয়া দিয়ে কাজ করলে এ রাস্তা টিকবে না।
মশিন্দা এলাকায় ঠিকাদারের প্রতিনিধি প্রদীপ ইটের খোয়ার মান নিম্নমানের স্বীকার করে বলেন, এরপর আর এ ধরণের খোয়া আসবে না। এবার ভাল খোয়া আনবো। এ সময় রাস্তার উভয় পাশে স্তুপ করে রাখা বিপুল পরিমাণ নিম্নমানের খোয়া কি হবে জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।
উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুর রহিম জানান, রাস্তা দুটির কাজের মান নিয়ে অনেকেই অভিযোগ করেছেন। আমি নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করতে নিষেধ করেছি। যথাযথ মানের কাজ বুঝে নিতে আমরা চেষ্টা করছি।