মশাহিদ আহমদ, মৌলভীবাজার ঃ মৌলভীবাজারে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনের সংবাদ প্রকাশের পর টনক নড়েছে সদর উপজেলা প্রশাসনের। অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনকারী মনুসর বাহীনির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মাঠে নেমেছে মৌলভীবাজার উপজেলা প্রশাসন। গত ৩নভেম্বর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনু নদীর মনুরমুখে অভিযান চালান। অভিযানের খবর পেয়ে মনসুর বাহিনী ড্রেজার মেশিন নিয়ে বালাগঞ্জ সীমানায় চলে যায়। সে সময় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বালাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করতে অনুরুধ করেছেন বলে জানা গেছে। মৌলভীবাজার মনু নদীর তীরবর্তী গ্রাম গুলোর বাসিন্দারা বর্ষা মুওসুমে ভাঙ্গন আতংকে পরিবার পরিজন নিয়ে উৎকন্ঠায় রয়েছেন। দীর্ঘদিন থেকে ঝুকিপুর্ন নদী রক্ষা বাঁধে সংস্কার না করায় বেহাল অবস্থায় রয়েছে। অন্যদিকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে হুমকির মুখে পড়েছে বন্যা প্রতিরক্ষা বাঁধ। ইজারা না নিয়েও নদী থেকে বালু উত্তোলন করছেন নির্দ্বিধায়। ফলে একদিকে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব অন্যদিকে মাটি ও বালি ব্যাবস্থাপনা আইন অমান্য করে ধ্বংস করা হচ্ছে। বালু উত্তোলনে প্রতি বছরই নদী রক্ষা বাঁধ ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার কারনে বর্ষা মৌসুম এলেই নদী পাড়ের বাসিন্দারা বাঁধ ভাঙ্গার আতংকে উৎকন্ঠায় দিন যাপন করে আসছেন। মনু নদীর দু পাড়ে গা ঘেষে বালু উত্তোলনে দেখা দিয়েছে নদী ভাঙ্গনের আতংক। সরজমিনে নদীর দুপাড়ের বাসিন্দাদের অভিযোগ সাবেক মেম্বার মনসুর গংরা দীর্ঘদিন থেকে একেক সময় একেক জায়গায় অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করে হাতিয়ে নিচ্ছে বড় অংকের টাকা। স্থানীয়দের ক্ষয়ক্ষতির প্রতি দৃষ্টি না দিয়েই যখন বালু উত্তোলন করায় মনসুর বাহীনিকে বিতারিত করলেও পর পর অন্য স্থানে স্থান ত্যাগ করে সেখানে কিছু দাপটশালী ও স্থানীয় পাতি নেতাদেও সহযোগীতায় আবারো বালু উত্তোলন চালিয়ে যাচ্ছে। মনু নদী ও কুশিয়ারার মিলনস্থলে নিজেদের প্রভাব প্রতিপত্তি ও রাজনৈতিক পরিচয় ভাঙ্গিয়ে মনুমুখ ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড প্রভাবশালী সাবেক মেম্বার মনসুর বাহিনী অবৈধ ভাবে প্রতি মাসে বালু বিক্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছে প্রায় দেড় কোটি টাকা। তাদের সাথে হাত মেলায় উসমানী নগর থানার আশরাফ নামে এক ব্যক্তি ও পইলানপুরের চেয়ারম্যান মতিন। এলাকাবাসী ক্ষোভ ও হতাশ প্রকাশ করে জানান,তারা দাবী করেন বালাগঞ্জ থেকে শেরপুর পর্যন্ত প্রশাসনের নিকট থেকে তাদের ইজারা নেওয়া। তাদের অবৈধ বালু উত্তোলনের ফলে সাধারন মানুষের কি ক্ষতি হচ্ছে সে দিকে তারা কোন নজর দিচ্ছেন না। সাধারন মানুষের জমি হারানোর কান্না ও প্রতিবাদের প্রতি কোন তোয়াক্কা করছেন না। এদের হাহাকার তাদের নিকট কোন মূল্য নেই। তাদের দাপটে সাথে প্রতিদিন ৪থেকে ৫টি ড্র্রেজার মেশিন দিয়ে প্রায় ৫লাখ টাকার বালু উত্তোলন করছে। মৌলভীবাজার সদর থানায় সুজানগর, সাওইজুরি, মনুনদীর শেষ সীমানায় ও বালাগঞ্জ থানার পইলানপুর, ফাজিলপুর,ইছাপুর, উসমানী নগর থানার আলিমপুর থেকে প্রতিদিন চলছে বালু উত্তোলনের মহাউৎসব। এলাকাবাসী দায়ী করছিলেন প্রশাসন নীরবতার সুযোগ। পুলিশ প্রশাসন মাঝে মধ্যে অভিযান করলেও তা ছিল লোক দেখানো। তাদের অভিযানের সময় বালু উত্তোলনকারীর ড্রেজার মেশিন গুলো ক্ষনিক সময়ের জন্য আড়ালে চলে যেত। পুলিশ চলে গেলে আবারও শুরু হতো বালু উত্তোলন । প্রতিদিন ড্রেজার মেশিন দিয়ে ৪০থেকে ৫০টি বড় নৌকা দিয়ে বালু নিয়ে যাচ্ছে শেরপুর ও বিভিন্ন ঠিকাদারের নিকট। বালুর প্রতিটি নৌকায় প্রায় ১০হাজার টাকা বালু থাকে। দৈনিক ৫লাখ টাকার বালু উত্তোলন হচ্ছে ফলে দেখা দিচ্ছে মারাতœক নদী ভাঙ্গন ও পরিবেশের উপর পড়ছে বিরূপ প্রভাব। নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে অনেকেই সব কিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। গত ২নভেম্বর মনসুর আহমদ বাহিনী ৪টি ড্রেজার মেশিন দিয়ে কুশিয়ারা নদীর পইলানপুর,ফাজিলপুর, ইছাপুর বালু উত্তোলনের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। ড্রেজার মেশিনের নৌকা গুলো বালাগঞ্জ থানার সীমানা পেরিয়ে মৌলভীবাজার সদর থানার মুনুমুখ উপকুলে চলে আসে। বালাগঞ্জ থানার পুলিশ চলে গেলে বালু উত্তোলনের ড্রেজার মেশিন গুলো আবার সাবেক স্থানে চলে যায়। সাবেক মেম্বার মনসুর আহমদ পুলিশকে ম্যানেজ করতে চলে যান বালাগঞ্জ থানায়। এভাবে চলচ্ছে অবৈধ বালু উত্তোলনকারী ও পুলিশের চোর পুলিশ খেলা। এই সিন্ডিকেট প্রতি মাসে মনু ও কুশিয়ারা নদী থেকে উত্তোলন করছেন প্রায় দেড় কোটি টাকার বালু। জানা গেছে, গত ১নভেম্বর বালাগঞ্জ সীমানায় অবৈধ বালু উত্তোলনকারীর ৪লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এব্যাপারে মৌলভীবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা শরিফুল ইসলাম এর সাথে আলাপকালে তিনি অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনের বিষয়টি সত্য স্বীকার করে জানান,শুধুমাত্র চানপুর মৌজায় একটি বালু মহাল ইজারা দেওয়া আছে। এই একটি মাত্র ইজারাকে ইস্যু করে আশপাশের এলাকা গুলো থেকে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে । গত ৩নভেম্বর আমি ঘটনা স্থলে গেলে অবৈধ বালু উত্তোলনকারীরা পালিয়ে ড্রেজার ম্যাশিন নিয়ে চলে যায় বালাগঞ্জ থানার সীমানায়। মনু কুশিয়ারা নদী মৌলভীবাজার, রাজনগর,বালাগঞ্জ তিন উপজেলার সীমানার সংযোগ স্থল হওয়ায় অবৈধ বালু উত্তোলনকারীরা এক দিকে অভিযান হলে অন্য সীমানায় চলে যায়। আমি এব্যাপারে বালাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ব্যাবস্থা নেওয়ার জন্য বলেছি। প্রায় সময় আমাদের এসিল্যান্ড অভিযান চালিয়ে জরিমানা করেন। সর্বিশেষে তিনি আরো বলেন,যারাই অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করবে আমরা খবর পাওয়ার সাথে সাথেই প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে আসছি এবং আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।