চাটমোহরে গরু ব্যবসায় বাড়ছে ইন্টারনেট নির্ভরতা

যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে ব্যবসার কৌশল পরিবর্তন করে সফলতা পাচ্ছেন পাবনার চাটমোহরের মথুরাপুরের প্রায় অর্ধশতাধিক গরু ব্যবসায়ী। চাটমোহরের অমৃতকুন্ডা ও নতুন বাজার পশু হাট ছাড়াও এর আশ পাশের ভাঙ্গুড়ার শরৎনগর, ঈশ্বরদীর অরণকোলা, সিরাজগঞ্জের নওগাঁ পশু হাটে যখন সনাতন পদ্ধতিতে গরু ক্রয় বিক্রয় হচ্ছে এমন সময় চাটমোহরের মথুরাপুর ইউনিয়ন পরিষদ পাড়ার ব্যবসায়ীরা হাটে গরু ক্রয় বিক্রয় না করে ইন্টারনেটের মাধ্যমে খামার থেকেই গরু বিক্রয় করছেন।


গত দশ বছরে মথুরাপুরে বেশ কিছু গরুর খামার গড়ে উঠেছে। দেশের বিভিন্ন এলাকার গরু ব্যবসায়ীরা এ গ্রামে এসে ঘর ভাড়া নিয়ে অথবা কমিশনের ভিত্তিতে গরুর ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। ইন্টারনেট ব্যবহারকারী দালাল চক্র ব্যবসায়ীদের সাথে গরুর দাম নির্ধারণ করে গরুর ছবি তুলে ও ভিডিও করে ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে ক্রেতার সাথে দর দাম হাঁকিয়ে গরু ব্যবসায়ীর গরু বিক্রিতে সহায়তা করছেন। ফলে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী এ চক্র, গরু ব্যবসায়ী উভয়ই লাভবান হচ্ছেন। পাশাপাশি এখান থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় গরু পৌছে দেয়া পরিবহন মালিক, চালক, হেল্পার, ব্যবসায়ীদের কর্মচারী, রাখাল, স্থানীয় দোকানদার, খামার মালিক এবং গো খাদ্য ব্যবসায়ীরা লাভবান হচ্ছেন।


সরেজমিন মথুরাপুর গ্রামে গেলে চোখে পরে পাকা রাস্তার দুপাশে সাঁড়ি সাঁড়ি গোয়াল ঘর। আশ পাশ এলাকার ক্রেতারা গরু কিনতে এসে গরুর দাম দর করছেন। কেউ ব্যস্ত গরুর পরিচর্যায়। কেউ দুধ দোহনের কাজে। কেউ ক্রেতার অপেক্ষায় গোয়াল ঘরে চেয়ার পেতে বসে আছেন। কেউবা গরুর ছবি তোলায় ব্যস্ত।
মথুরাপুর গ্রামের খামার মালিক হাবিবুর রহমান জানান, পাবনা, রাজশাহী, নাটোর, লালমনির হাটসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার গরু ব্যবসায়ীরা এ গ্রামে এসে কমিশনের ভিত্তিতে অথবা খামার ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করেন। বিভিন্ন গ্রাম ও এলাকা থেকে গাভী ও বকনা গরু কিনে এনে তারা খামারে রাখেন। এক একটি গরু বিক্রি হলে আমরা এক হাজার টাকা কমিশন পাই, পাশাপাশি দুধের অর্ধেক অংশ পাই। পাবনার নওদা পাড়ার গরু ব্যবসায়ী সাইদুল ইসলাম জানান, প্রায় ৪৫ বছর যাবত গরুর ব্যবসা করেন তিনি। মথুরাপুরে দুই বছর যাবত খামাড়ে ব্যবসা করছেন। তিনি জানান, প্রতিদিনই কম বেশি গরু বিক্রি হয়। তবে, বুধবার, বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার সপ্তাহের এ তিন দিন বেশি গরু বিক্রি হয়। প্রায় সারা দেশের ক্রেতা অনলাইনে অথবা সরাসরি এ গ্রামে এসে গরু কিনে নিয়ে যান। স্থানীয় গরু ব্যবসায়ী ইউসুফ আলী জানান, আগে রিক্সা ভ্যান চালাতাম। প্রথমে তিনটি গরু কিনে ব্যবসা শুরু করি। এখন আমার খামাড়ে ১৪ টি গরু। রাশেদুল ইসলাম জানান, গরু ব্যবসার ক্ষেত্রে মথুরাপুর গ্রামটির নাম এখন সারা দেশে ছড়িয়ে পরেছে। আমার বাবা বাদাম বিক্রি করতেন, আমি চা-পাপড় বিক্রি করতাম। প্রায় পনেরো বছর আগে গরুর ব্যবসা শুরু করি। এখন আমার খামারে দশ-পনেরোটি গরু সব সময় থাকে। খামাড় ছাড়াও দুই বিঘা জমি কিনেছি, সেমি পাকা বাড়ি করেছি। বাবা-মা, সন্তানসহ পাঁচ জনের পরিবার নিয়ে আগের চেয়ে এখন অনেক ভাল আছি।