বর্তমানে পেঁয়াজের মূল্য নিয়ে যখন সাধারন মানুষের আলোচনা তুঙ্গে, ঠিক এমন মূহুর্তে চাটমোহর উপজেলার বিভিন্ন বাজারে কাঁচা পণ্যের বাজার আকাশ ছোয়া হয়ে পড়েছে। উপজেলা প্রশাসন শুধু পেয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রনে দুই একটি অভিযান পরিচালনা করলেও কাঁচা বাজারের অন্যান্য পণ্যে কোন নজর না থাকায় লাগামহীম অবস্থা বিরাজ করছে।
আমদানিকারক ও পাইকারি বিক্রেতাদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে চাহিদার বিপরীতে জোগান একদম কম হওয়ায় বাজারে কাঁচা পণ্যের দাম উর্ধ্বমূখী। এছাড়া অতি বৃষ্টিতে গ্রামে কৃষকের জমিতে পানি জমা হয়ে শাক সব্জির গাছ মারা যাওয়ায়
উৎপাদন কম হওয়ায় বাজারে কাঁচা পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে তারা মনে করছেন। মূলত বাজারে বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা নিয়মিত না থাকায় খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা তাদের খেয়াল খুশিমতো দাম বাড়াচ্ছেন বলে সাধারন ক্রেতাদের ধারনা। তবে সবাই পেঁয়াজ নিয়ে আলোচনায় ব্যস্ত থাকলেও প্রায় প্রতিদিনই নিত্য পণ্যের অনেক কিছুর দাম বাড়ছে। যা পেঁয়াজের সীমাহীন মূল্য বৃদ্ধির খবরের মাঝে আড়ালে থেকে যাচ্ছে। অথচ যেসব পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে এসব পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির পেছনে নেই
যোক্তিক কোনো কারণ। কোনো কারণ ছাড়াই তরতর করে শুধুই বাড়ছে দ্রব্যমূল্য। আজ
এক দামে কোনো একটি পণ্য কিনে নিয়ে গেলে পরদিন দেখা যায় সেই পণ্যের দাম কেজিতে বেড়ে গেছে কয়েক টাকা। এ বিষয়ে দোকানির সহজ ও সেই কমন যুক্তি, চাহিদার চেয়ে পণ্যের জোগান কম। আবহাওয়া খারাপ, এমন যুক্তিও মাঝে মাঝে
দেখানো হয়। শুধু তাই নয়, পাইকারি বাজারের সঙ্গে নেই খুচরা মূল্যের সামঞ্জস্য।
বাজারে ক্রেতা বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বাজার থেকে সাধারণ ক্রেতা যে দামে পণ্য কিনছেন, উৎপাদক সেই দাম কল্পনাও করতে পারেন না। এর সুফল নিচ্ছেন এক শ্রেণির প্রতারক মধ্যস্বত্বভোগীরা। যারা সাধারণ ক্রেতাদের জিম্মি করছেন, জিম্মি করছে কৃষকদেরও। কিন্তু যারা নিজেদের সর্বোচ্চ শ্রম দিয়ে পণ্য উৎপাদন করছেন, সেই কৃষক বঞ্চিত হচ্ছেন ন্যায্যমূল্য থেকে। এক্ষেত্রে শুধু লাভবান হচ্ছেন একশ্রেণির ব্যবসায়ীরা। আর ঠকছেন কৃষক ও সাধারণ ক্রেতা।
শুক্রবার চাটমোহর পৌরসভার সর্ববৃহৎ পুরাতন বাজারে গিয়ে পণ্যের বাজার ঘুরে দেখা
যায়, পেয়াজ ৮৫ টাকা, কাঁচা মরিচ ২২০ টাকা, পটল ৬০ টাকা, বেগুন ৬০ টাকা, আলু ৫০ টাকা, ঝিঙ্গে ৫০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, মুলা ৩০ টাকা, লাউ ৩৫ টাকা,
মিষ্টি কুমড়া কেজি ৩০ টাকা, পেঁপে ২০ টাকা, কাঁচ কলা হালি ২০ টাকা, ফুল কপি ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। যা গত কয়েক দশকের মধ্যে সর্বচ্চ পণ্যের মূল্য দিয়ে ক্রেতারা এসব পণ্য ক্রয় করেছেন।
এছাড়া গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজি প্রতি চালের দাম তিন থেকে চার টাকা
বেড়েছে। এছাড়া নাভিশ্বাস উঠেছে ভোজ্য তেল, মসলা, ডালসহ নিত্যপণ্যের
সবকিছুর দাম বৃদ্ধিতে। পেঁয়াজের ঝাঁজের কাছে তা আড়ালে থেকে যাচ্ছে। এখন প্রায় প্রতি সপ্তাহের নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি যেন সবার কাছে সাধারণ ঘটনা। মূল্য বৃদ্ধি সাধারণ ঘটনা হলেও বিপরীতে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়েনি।
নিত্য পণ্যের উর্ধ্ব গতির বিষয়ে চাটমোহর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি কেএম
বেলাল হোসেন বলেন, বাস্তবিক অর্থে এ বছর কয়েক দফায় বন্যা হওয়ায় গ্রামাঞ্চলের
কৃষকের শাক সব্জির জমিতে পানি জমে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বাজারে পণ্যের আমদানী
কম থাকায় এবং চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় মূলত মূল্য বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা দিয়েছে।
এছাড়া আমাদের চাটমোহরে এখনও পিয়াজের মূল্য ৮০ টাকা ধরে রাখতে আমরা সক্ষম হয়েছি। ইউএনও মহদ্বয়ের সার্বিক তত্বাবধানে আমাদের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দরা নিয়মিত বাজার তদারকি করছেন।
এসব বিষয়ে চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈকত ইসলাম বলেন, ইতিমধ্যে
আমি চাটমোহরের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সাথে যোগাযোগ করেছি এবং বাজার মনিটরিং করেছি। কাঁচা পণ্যের বাজার যদি এভাবে লাগামহীন হয়ে পরে এবং ভোক্তার অধিকার খর্ব করে অসাধু ব্যবসায়ীরা মুনাফা অর্জন করতে থাকে তাহলে বিধি
মোতাবেক ঐ সকল অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করতে বাধ্য হবো।