মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় পথপরিক্রমার ২১ বছর

আজ ১২ অক্টোবর মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ১৯৯৯ সালের ১২ অক্টোবর তৎকালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ জননেত্রী শেখ হাসিনা মজলুম জননেতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নামে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাশ হয় ২০০১ সালের ১২ জুলাই এবং একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয় ২০০৩ সালের ২৫ অক্টোবর।
৫৭.৯৫ একর আয়তনের ওপর প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬ টি অনুষদের অধীনে ১৮ টি বিভাগ চালু রয়েছে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৫০০০ জন শিক্ষার্থী, ২৪০ জন শিক্ষক, ২২৮ জন কর্মকর্তা ও ৩২৩ জন কর্মচারী রয়েছেন। দু’দশকে এ প্রতিষ্ঠান থেকে ৬টি অনুষদের প্রায় ৬ হাজার শিক্ষার্থী স্নাতক, স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেছেন এবং পিএইচডি-তে ২টি অনুষদে কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন। ইতোমধ্যে এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রী অর্জনকারী বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই স্ব স্ব কর্মক্ষেত্রে মেধা ও দক্ষতার স্বাক্ষর রাখছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়টির বয়স ২১ বছর পার হলেও ২০০৮ সন পর্যন্ত অবকাঠামোগত উন্নয়নের চিত্র সন্তোষজনক ছিল না। বর্তমান সরকারের সময়ে প্রফেসর ড. মোঃ আলাউদ্দিন ২০১৩ সনের ৩ মে প্রথম মেয়াদে ভাইস-চ্যান্সেলর হিসেবে যোগদানের পর এর উন্নয়নের অগ্রযাত্রা চোখে পড়ার মতো। মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলর জনাব মোঃ আব্দুল হামিদ এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ জননেত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিক সহযোগিতায় ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোঃ আলাউদ্দিন এর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা, প্রশাসন ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদিত মাস্টারপ্লান অনুযায়ী “মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শক্তিশালীকরণ” শীর্ষক প্রকল্পটি মোট তিনশত পঁয়তাল্লিশ কোটি সাতাত্তর লক্ষ টাকা ব্যয়ে জুলাই ২০১৬ হতে জুন ২০১৯ মেয়াদে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সভায় ২৫ অক্টোবর ২০১৬ তারিখে অনুমোদন লাভ করে। পরবর্তীতে সংশোধিত ডিপিপি’র আলোকে বর্ণিত প্রকল্পের মেয়াদ আরও ০২ বছর বৃদ্ধি পেয়ে জুলাই ২০১৬ হতে জুন ২০২১ পর্যন্ত অনুমোদিত হয়।
অনুমোদিত প্রকল্পটির আওতায় বাস্তবায়নাধীন ১২.৭৪ একর ভূমি অধিগ্রহণ, ভূমি উন্নয়ন, ১২-তলা বিশিষ্ট একাডেমিক-কাম-রিসার্চ ভবন নির্মাণ, ১০-তলা বিশিষ্ট প্রশাসনিক অ্যানেক্স উত্তর ভবন নির্মাণ, ২৫০ ছাত্রের জন্য নির্মাণাধীন ৩য় ছাত্র হলের অবশিষ্ঠ ৩য়, ৪র্থ ও ৫ম তলার উর্দ্ধমূখী সম্প্রসারণ, ৭০০ ছাত্রীর জন্য ১০ তলা বিশিষ্ট “শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল” নির্মাণ, ৫৫০ ছাত্রের জন্য ১০-তলা ভিতে ০৫ তলা পর্যন্ত “শেখ রাসেল হল” নির্মাণ, ১০-তলা ভিতে ০৫ তলা পর্যন্ত মাল্টিপারপাস ভবন নির্মাণ, সিনিয়র শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের জন্য ১০ তলা ভিতে ০৫ তলা পর্যন্ত আবাসিক ভবন নির্মাণ।
এছাড়া বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের লক্ষ্যে পানি বিশুদ্ধকরণ প্লান্ট স্থাপন, মাটি ভরাটসহ অভ্যন্তরীণ আরসিসি রাস্তা নির্মাণ কালভার্ট নির্মাণ, আরসিসি ড্রেইন এবং ঢাকনাযুক্ত ডাষ্টবিন নির্মাণ, নতুন স্থাপনাসমূহে গ্যাস লাইন সংযোগ, প্রস্তাবিত ভবনসমূহের জন্য আসবাবপত্র ক্রয়, বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি/ল্যাব যন্ত্রপাতি, মেডিকেল যন্ত্রপাতি ক্রয়, ক্রীড়া সামগ্রী ক্রয়, অফিস যন্ত্রপাতি ক্রয়, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের জন্য বই ও সাময়িকি ক্রয়, ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ০২ টি বাস, শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের জন্য ০১টি মিনিবাস ও ০১টি মাইক্রোবাস ক্রয় কার্যক্রমসমূহ সম্পন্ন হয়েছে।
ইতিপূর্বে “মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় উন্নয়ন”- শীর্ষক প্রকল্প (জুলাই ২০১৩ হতে জুন ২০১৭ মেয়াদে) ৫১ কোটি ৭৪ লক্ষ টাকা (সংশোধিত ৫৬ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা) ব্যয় সম্বলিত প্রকল্পটি গত ৩০ জুন ২০১৭ সমাপ্ত হয়। এ প্রকল্পের আওতায় ছিল: ভাইস-চ্যান্সেলর মহোদয়ের বাসভবন নির্মাণ, ২৫০ আসন ছাত্রের জন্য ২য় ছাত্র হল নির্মাণ, ২৫০ আসন ছাত্রীর জন্য ২য় ছাত্রী হল নির্মাণ, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারীদের জন্য ডরমিটরী নির্মাণ (২০ ইউনিট), নতুন একাডেমিক ভবন নির্মাণ, অভ্যন্তরীণ রাস্তা নির্মাণ, বৈদ্যুতিক সাব-ষ্টেশন নির্মাণ, সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, গ্যাস লাইন, জেনারেটর যন্ত্রপাতি, আসবাবপত্র ক্রয়, ১টি মাইক্রোবাস ও ১টি এ্যাম্বুলেন্স ক্রয় ইত্যাদি।
এছাড়াও “পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের উন্নয়ন”-শীর্ষক গুচ্ছ প্রকল্পের আওতায় এ বিশ্ববিদ্যালয়ে জুলাই ২০০৮ হতে জুন ২০১৬ পর্যন্ত মেয়াদে মোট ৩৭ কোটি ০৫ লক্ষ টাকার প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়। প্রকল্পের আওতায় ৫-তলা লাইব্রেরী কাম ক্যাফেটেরিয়া ভবন নির্মাণ, ৪০০ আসনের ছাত্র হল (বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান হল) নির্মাণ, ৫-তলা ৩০ ইউনিটের শিক্ষক কর্মকর্তা ডরমিটরী নির্মাণ, বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্পে ৪-তলা ভিতে ২-তলা একাডেমিক ভবনের ৩য় ও ৪র্থ তলার উর্দ্ধমূখী সম্প্রসারণ কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়।
অন্যান্য উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের মধ্যে রয়েছে শহীদ বুদ্ধিজীবি স্মৃতিস্তম্ভ ও এর চত্ত্বর নির্মাণ, মুক্তমঞ্চের উন্নয়ন, বিজয় অঙ্গন চত্ত্বর নির্মাণ, ঢাকাস্ত লিঁয়াজো অফিস কাম গেস্ট হাউজ ক্রয় (শ্যামলীতে দু’টি ফ্লাট), লাইব্রেরীতে “বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্ণার” স্থাপন এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রায় ৪০০ পুস্তক ক্রয়, মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মরণে নির্মিত “প্রত্যয় ৭১” এর সম্প্রসারণ ও সংস্কার এবং বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস আইপি ক্যামেরা-এর আওতায় আনয়ন।
একাডেমিক কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে লাইব্রেরী অটোমেশন, ই-বুক, ই-জার্নাল, আইসিটি সেল স্থাপন, ইনিস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি এ্যাসুরেন্স সেল (আইকিউএসি) স্থাপন, রিসার্স সেল-এর মাধ্যমে শিক্ষকগণের গবেষণা পরিচালনা, বিডিরেন কতৃক ইন্টারনেট সংযোগ প্রদান, বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য হায়ার এডুকেশন কোয়ালিটি এনহেনসমেন্ট প্রজেক্ট (হেকেপ) বাস্তবায়ন।
উল্লেখ্য যে, বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠালগ্ন হতে অদ্যাবধি যে সকল অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে তা ৫টি অনুষদের আওতায় ১৫টি বিভাগের জন্য যথেষ্ট নয়। ইতোমধ্যে বর্তমান ভাইস-চ্যান্সেলর মহোদয় প্রথমবার যোগদানের পর দেশের চাহিদার সাথে মিলিয়ে যুগোপযোগি বিষয় বায়োকেমেস্ট্রি এন্ড মলিকুলার বায়োলজি ও ফার্মেসী বিভাগ চালু করেছেন। দ্বিতীয় মেয়াদে ২০১৭ সালের ২৯ জুলাই যোগদানের পর বিজনেস এ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিভাগকে বিলুপ্ত করে ব্যবস্থাপনা ও হিসাব বিজ্ঞান নামে নতুন দুটি বিভাগ এবং ইংরেজী বিভাগ কার্যক্রম শুরু করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোঃ আলাউদ্দিন বলেন, ২১ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শুভাকাক্সক্ষীদের জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ, কৃতজ্ঞতা ও অভিনন্দন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ জননেত্রী শেখ হাসিনার দেয়া “মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শক্তিশালীকরণ”-শীর্ষক প্রকল্প প্রায় শেষের দিকে। জুন ২০২০ পর্যন্ত এ প্রকল্পের মোট প্রায় ৬০ শতাংশ ব্যয় হয়েছে। এ প্রকল্পের ডিপিপি-তে অর্ন্তভুক্ত সবগুলো কম্পোনেন্টের নির্মাণকাজ ও প্রকিউমেন্টের কাজ সমাপ্ত হলে এ বিশ্ববিদ্যালয় অবকাঠামোগত উন্নয়নে শিক্ষা, গবেষণা, প্রশাসন, ল্যাবরেটরী, সুবিধা বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যসেবা, খেলাধূলা, পরিবহন সেবা ও আবাসনসহ ইত্যাদি বিষয়ে ব্যাপক সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি হবে। যার ফলে আরও নতুন একাডেমিক বিভাগ খোলা সম্ভব হবে ও বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের কলেবর বৃদ্ধি পাবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষায় গুনগতমান আরও বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকারের “রুপকল্প-২০২১” এবং ”সমৃদ্ধ বাংলাদেশ-২০৪১” বিনির্মানে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষায় গ্রাজুয়েটরা মুখ্য ভূমিকা পালন করবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। ভবিষ্যতে আরও উন্নয়নমুলক প্রকল্প নিয়ে আসার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, যার মধ্যে- কেন্দ্রীয় গবেষণাগার, একাডেমিক ভবন, ছাত্র হল, ছাত্রী হল, কেন্দ্রীয় মসজিদ, অডিটোরিয়াম, স্টেডিয়াম, জি¤েœসিয়াম, ছাত্র-শিক্ষক মিলনায়তন, শিক্ষক ক্লাব, কর্মকর্তা ক্লাব নির্মাণ ইত্যাদি থাকবে। তাছাড়া ক্যাম্পাস চত্বরে অবস্থিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য সকল প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের সহযোগিতায় স্থানান্তর করার পরিকল্পনা রয়েছে।