ঈশ্বরদী (পাবনা) সংবাদদাতাঃ
শিকল দিয়ে তিন দিন বেঁধে ঈশ্বরদীতে মাদ্রাসার শিশু শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। নির্ম্মম এই ঘটনা ঘটেছে, ঈশ্বরদীর সাহাপুর ইউনিয়নের কদিমপাড়া বুড়া দেওয়ান নূরানী হাফিজিয়া মাদ্রাসায়। আমপাড়া শেষ করা মাদ্রাসার নূরানী বিভাগের শিক্ষার্থী মোবারক (১১)কে তিন দিন লোহার শিকল দিয়ে বেঁধে রেখে নির্ম্মমভাবে মারধর করা হয়। শুক্রবার জুম্মার নামাযের সময় ওই শিক্ষার্থী পালিয়ে যাওয়ার পর ঘটনা ফাঁস হয়। এঘটনায় রাতে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হাফেজ আব্দুল মমিন, শিক্ষক পিয়ারুল ইসলাম ও সিনিয়র শিক্ষার্থী সাব্বির আহম্মেদকে থানা হেফাজতে আনা হয়েছে। ভূক্তভোগী শিক্ষার্থী মোবারক আটঘোরিয়া উপজেলার চাঁদভা ইউনিয়নের বাঁচামরা গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে।
শুক্রবার রাতে থানায় নির্যাতিত শিক্ষার্থী মোবারকের বাবা ও মা মূর্শিদা খাতুন জানান, মোবারক মাদ্রাসা হতে পালিয়ে দাশুড়িয়ায় খালার বাড়িতে যায়। সেখান হতে বুঝিয়ে তাকে গত বুধবার মাদ্রাসায় ফেরত পাঠানো হয়। মাদ্রাসায় যাওয়ার পর মোবারককে লোহার শিকল দিয়ে বেঁধে রেখে নির্ম্মমভাবে পেটানো হয়। শুক্রবার জুম্মার নামায আদায়ের সময় লাইন থেকে সে পালিয়ে যায়। শিকল বাঁধা অবস্থায় তাঁকে এলাকার লোকজন উদ্ধার করে তাদের খবর দেয়। থানায় মোবারকের পেছন দিকে কোমড়ের নীচে পা পর্যন্ত নির্ম্মম আঘাতের চিহ্ণ দেখা গেছে। তিন দিন শিকল দিয়ে বেঁধে মারধর ছাড়াও মোবারককে ৭ বার থুতু ফেলে সেই থুতু তাকে দিয়ে চাটানো হয়েছে বলে মা অভিযোগ করেছেন। পালিযে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে মোবারক জানায়, মাদ্রাসায় প্রতিদিনই মারধর করা হতো। এইজন্য সে পালিয়ে যায়।
ঘটনা প্রসংগে অধ্যক্ষ আব্দুল করিম প্রথমে তিনি ছিলেন না ছুটিতে গিয়েছিলেন বলে জানান। পরে তাঁর ছুটি মাদ্রাসা কমিটির সভাপতির অনুমোদন ছিলো কিনা জিজ্ঞেস করলে তিনি অসংলগ্ন কথাবার্তা শুরু করেন। এসময় তিনি শিক্ষার্থী দেখভালের দায়িত্ব শিক্ষক পিয়ারুল ইসলামের উপর বলে জানিয়েছেন।
শিক্ষক পিয়ারুল জানান, আমি বাঁধি নাই। ওই শিক্ষার্থীর সম্পর্কে চাচা সিনিয়র ছাত্র ছাব্বির বেঁধে রেখেছিল। বেদম মারধরের বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি কোন কথা বলেননি।
মাদ্রসার হাফেজ সমাপ্ত করা সিনিয়র ছাত্র ছাব্বির আহমেদ জানান, শিশু মোবারক পালিয়ে যাওয়ার কারণে তার দাদী বেঁধে রাখার কথা বলেছিল। তাই তাকে বেঁধে রাখা হয়। শিক্ষক পিয়ারুলই শিশুটিকে বেদম মারধর করেছে বলে ছাব্বির জানিয়েছে।
এবিষয়ে ঈশ্বরদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফিরোজ কবীর ও অফিসার ইনচার্জ সেখ নাসীর উদ্দিন জানান, খবর পেয়ে মাদ্রাসার শিক্ষকদের থানা হেফাজতে আনা হয়েছে। অভিযোগ পেলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তাঁরা জানিয়েছেন।