বিশ্বনাথ প্রতিনিধি :: বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক, সিলেট জেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ‘নিখোঁজ’ এম. ইলিয়াস আলীর বাড়িতে হঠাৎ ছুটে যান সিলেট-২ আসনের সংসদ সদস্য, গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোকাব্বির খান। (২৭ আগষ্ট) বৃহস্পতিবার বেলা আড়াইটার দিকে তিনি উপজেলার অলংকারী ইউনিয়নের রামধানা গ্রামে ইলিয়াসের বাড়িতে গিয়ে তার মা সূর্যবান বিবির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও বিভিন্ন অনলাইন পোর্টালে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর থেকে বিশ্বনাথ উপজেলা বিএনপি ও সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। স্থানীয় বিএনপি ও সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মী এবং ইলিয়াস পরিবারের কেউ জানতে না এমপি মোকাব্বির খান ‘নিখোঁজ’ বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর বাড়িতে যাবেন। কিন্তু এভাবে এমপি মোকাব্বির খান সাবেক এমপি ‘নিখোঁজ’ ইলিয়াস আলীর বাড়িতে হঠাৎ ছুটে যাবেন কখনও বিএনপি নেতাকর্মীরা মনে করেননি। এনিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিএনপি নেতাকর্মীরা বিভিন্ন মন্তব্য করতে দেখা যায়। এবিষয়ে স্থানীয় বিএনপি ও সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীরা গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এনিয়ে উপজেলার বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষের মধ্যে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। এব্যাপারে উপজেলা সেচ্ছাসেবকদলের আহবায়ক কাওছার খান বলেন, বিগত নির্বাচনে এম. ইলিযাস আলীর জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে মাত্র তিনদিনে এমপি হন মোকাব্বির খান। তিনি বিজয়ী হওয়ার পর ইলিয়াস আলী ও বিএনপিকে ভুলে গিয়ে শপথ গ্রহন করেন। সম্প্রতি উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় এমপির উপস্থিতি নিয়ে সরকার দলীয় দুটি অংশে বিভক্ত হয়ে হামলার ঘটনায় মামলা হয়। কিন্তু এখন হঠাৎ করে এমপি আমাদের প্রিয় নেতা ‘নিখোঁজ’ ইলিয়াস আলীর মায়ের সাথে দেখা করতে যাওয়াকে পজেটিভ হিসেবে দেখছি না। উপজেলা যুবদলের ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক সুরমান খান বলেন, তিনি (এমপি) বিএনপির ভোটে নির্বাচিত হয়ে বিএনপি এবং আমাদের নেতা ‘নিখোঁজ’ ইলিয়াস আলীর পরিবারকে ভুলে গিয়েছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করে তিনি ইলিয়াস আলীর বাড়িতে যাওয়ার বিষয়টি নেতাকর্মীরা মেনে নিতে পারছেনা। পৌর বিএনপির সিনিয়র সদস্য আবদুল হাই সাংবাদিকদের বলেন, এমপি মোকাব্বির উড়ে এসে জুড়ে বসেন। হঠাৎ করে তিনি কেন আমাদের প্রিয় নেতা ইলিয়াস আলীর বাড়িতে গেলেন তা আমাদের জানা নেই। বিএনপি-তথা ইলিয়াস পরিবারের সাথে তাঁর কোনো সর্ম্পক নেই। ইলিয়াস আলীর বাড়ি এমপির যাওয়ার বিষয়টি আমাদের জন্য শুভনীয় নয়।উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য লিলু মিয়া সাংবাদিকদের বলেন. জাতীয় একাদশ সংসদ নির্বাচনে ইলিয়াস পরিবারের সহযোগিতায় এবং বিএনপির ভোটে এমপি নির্বাচিত হয়েছিল মোকাব্বির খান। কিন্তু নির্বাচনে জয়লাভ করার পর থেকে ইলিয়াস পরিবার ও বিএনপি নেতাকর্মীর সঙ্গে তিনি কোনো যোগাযোগ করেননি। কিন্তু নির্বাচনের প্রায় দেড় বছর পর হঠাৎ আমাদের প্রিয় নেতা নিখোঁজ ইলিয়াস আলীর বাড়িতে তিনি যান। এতে দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্ঠা ও ‘নিখোঁজ’ বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা সাংবাদিকদের বলেন, মোকাব্বির খান আমাদের বাড়িতে যাবেন এ বিষয়টি পরিবার কিংবা দলীয় কোনো নেতাকর্মীর জানা ছিল না।সিলেট-২ আসনের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান সাংবাদিকদের বলেন, মানবিক দায়িত্ব নিয়ে ইলিয়াস আলী সাহেবের মা-কে দেখতে গেছি। রামধানা গ্রামে সেদিন গিয়েছিলান মনে করছি ইলিয়াস আলী সাহেবের মা-কে না দেখিয়া আসা নৈতিকতার মধ্যে পড়ে। তাই দেখে আসলাম। আমাকে নিয়ে বিএনপি নেতৃবৃন্দ খারাপ মন্তব্য করলে সেটা হবে রুচিবোধের অভাব। তিনি বলেন, আমি রাজনৈকিভাবে কোন চিন্তা করছিনা। নির্বাচনের সময় বিএনপি নেতাকর্মী আমাকে সহযোগিতা করায় আমি চির-কৃতজ্ঞ। আমি আমার মত চলি। আমি আমার মত করি। প্রসঙ্গত, ইলিয়াস আলীর ইমেজ, স্থানীয় বিএনপি ও ইলিয়াস পরিবারের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জিতে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন মোকাব্বির খান। সাংসদ হিসেবে শপথ গ্রহণকে কেন্দ্র করে পরবর্তীতে ইলিয়াস পরিবারের সঙ্গে মোকাব্বির খানের দূরত্ব সৃষ্টি হয়। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর এই প্রথম তিনি ইলিয়াস আলীর মায়ের সঙ্গে সাক্ষাত করলেন।