বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ রাব্বী (২২) হত্যা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে নিযুক্ত স্পেশাল পিপি অ্যাডভোকেট এহসানুল হক সমাজীকে বুয়েটের পক্ষ থেকেও দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে।
গত ২৪ আগস্ট বুয়েটের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. সাইদুর রহমান স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি চিঠি প্রাপ্তির কথা গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন অ্যাডভোকেট সমাজী।
এর আগে গত ২ জুলাই আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রালয় থেকে এক আদেশে অ্যাডভোকেট এহসানুল হক সমাজী ও অ্যাডভোকেট মো. আবু আব্দুল্লাহ ভূঞাকে স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর এবং অ্যাডভোকেট মোশারফ হোসেন কাজলকে চিফ স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়।
এদিকে বৃহস্পতিবার (২৭ আগস্ট) আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রালয় আদেশে এবং একই সাথে বুয়েটের চিঠিতে সম্মানি-ভাতাদির কথা উল্লেখ থাকায় অ্যাডভোকেট সমাজী কেবল বুয়েট থেকেই সম্মানী-ভাতাদি গ্রহণ করতে ইচ্ছুক মর্মে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবকে প্রয়োজনীয় অনুমতি ও ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চিঠি দিয়েছেন। একইদিন তিনি পৃথক আরেকটি চিঠিতে তার নিরাপত্তার স্বার্থে সার্বক্ষণিক একজন দেহরক্ষী নিয়োগের জন্যও অনুরোধ করেছেন।
এদিকে আগামী ২ সেপ্টেম্বর এ মামলায় চার্জশুনানির জন্য দিন ধার্য রয়েছে ট্রাইব্যুনালে।
এর আগে এ মামলায় একই ট্রাইব্যুনালে গত ৬ এপ্রিল আসামিদের উপস্থিতি ও চার্জগঠনের দিন ধার্য করেছিল। কিন্তু করোনা ভাইরাসের সংক্রমনের কারণে তার আগে দেশের সকল আদালত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেদিন শুনানি অনুষ্ঠিত হয়নি।
আবরার বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের (১৭তম ব্যাচ) ছাত্র ছিলেন। তিনি থাকতেন বুয়েটের শেরেবাংলা হলের নিচতলার ১০১১ নম্বর কক্ষে। গত বছর ৬ অক্টোবর একই হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে তাকে নির্যাতন করে তাকে হত্যা করা হয়। রাত ৩টার দিকে হল থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। হত্যাকাণ্ডের পর তার বাবা বরকত উল্লাহ ১৯ জনকে আসামি করে ওই বছর ৭ অক্টোবর চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
মামলার পর ওই বছর ১৩ নভেম্বর ডিবি পুলিশের পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো. ওয়াহিদুজ্জামান ২৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। চলতি বছর ২১ জানুয়ারি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত চার্জশিট আমলে গ্রহণ করেন। এরপর গত এপ্রিল মাসে মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এ আসে এবং ৬ এপ্রিল ট্রাইব্যুনালে শুনানির প্রথম তারিখ ঠিক হয়। কিন্তু তার আগে করোনা ভাইসের জন্য আদালতের কার্যক্রম বন্ধ হওয়ায় বিচার শুরু হতে পারেনি।
এ মামলায় ২২ জন আসামি কারাগারে রয়েছেন। এরা হলেন, বুয়েট ছাত্রলীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মো. অনিক সরকার, উপ-সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক ইফতি মোশাররেফ সকাল, ক্রীড়া সম্পাদক মো. মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন, মো. মনিরুজ্জামান মনির, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভীর, শিক্ষার্থী মো. মুজাহিদুর রহমান ও এএসএম নাজমুস সাদাত, বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল, আইন বিষয়ক উপ-সম্পাদক অমিত সাহা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুহতামিম ফুয়াদ, কর্মী মুনতাসির আল জেমি, গ্রন্থ ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক ইসাতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, শিক্ষার্থী আবরারের রুমমেট মিজানুর রহমান, শিক্ষার্থী শাসছুল আরেফিন রাফাত, বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৬তম ব্যাচের তৃতীয় বর্ষে ছাত্র আকাশ হোসেন, শিক্ষার্থী মো. মাজেদুর রহমান মাজেদ, শামীম বিল্লাহ, হোসেন মোহাম্মাদ তোহা, মুয়াজ ওরফে আবু হুরায়রা, বুয়েটের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারং বিভাগের ১৭তম ব্যাচের ছাত্র মোর্শেদ অমত্য ইসলাম ও এস এম মাহমুদ সেতু। যাদের মধ্যে প্রথম ৮ জন আদালতে স্বীকারোক্তি করেছেন।
অপর তিন আসামি বুয়েটের ইলেকট্রিক অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স বভাগের ১৭তম ব্যাচের ছাত্র মুহাম্মাদ মোর্শেদ-উজ-জামান মন্ডল ওরফে জিসান (২২), সিভিল ইঞ্জিনিয়ারং বিভাগের ১৭তম ব্যাচের ছাত্র এহতেশামুল রাব্বি ওরফে তানিম (২০) ও কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারং বিভাগের ১৬তম ব্যাচের ছাত্র মুজতবা রাফিদ (২১) পলাতক রয়েছেন।