মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে পণ্য আমদানি ; বেনাপোলের ১০জন ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে তদন্ত

বেনাপোল কাস্টমস হাউসে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে পণ্য আমদানির
সাথে জড়িত ১০জন সিএন্ডএফ এজেন্ট ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ করেছে
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার তদন্ত শেষ করেন
তিন সদস্যের কমিটি। যার নেতৃত্বে ছিলেন মোংলা কাস্টমের কমিশনার হোসেন
আহমদ। এসময় সিএন্ডএফ ব্যবসায়ীরা তাদের বিরুদ্ধে আনা শুল্ক ফাঁকির অভিযোগ
মিথ্যা দাবি করে লিখিত পত্র জমা দিয়েছেন কমিটির কাছে।

চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের শুরুতে মোটরসাইকেল আমদানি করে ৫০ কোটি টাকার
রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার ঘটনা ধরা পড়ে। রাজস্ব ফাঁকির ঘটনা তদন্ত করে শুল্ক
গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর।

শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, ঢাকার আমদানিকারক
প্রতিষ্ঠান টিভিএস অটো বাংলাদেশ লিমিটেড মোটরসাইকেলের খুচরা যন্ত্রাংশ
আমদানির ঘোষণা দেয়। কিন্তু ঘোষণা অনুযায়ী খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানি না করে
বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি শ’ শ’ পূর্ণাঙ্গ (কমপ্লিট) মোটরসাইকেল
আমদানি করে। যন্ত্রাংশ ঘোষণা দিয়ে এইচএস কোড ৮৭১৪.১০.৯০ এর বিপরীতে ৫৮.৬০
শতাংশ শুল্ক কর পরিশোধ করে। সিপিসি ৬৮০ এর সুবিধা নিয়ে রেয়াতি হারে
বিপুলসংখ্যক পণ্য খালাস করে। এভাবে কমপক্ষে ৫০ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি
দেয়া হয়েছিল।

টিভিএস অটো বাংলাদেশ লিমিটেড ও বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্ট মেসার্স শামসুর
রহমান এবং সুজন এন্টাপ্রাইজ জালিয়াতির মাধ্যমে বড় ধরনের শুল্ক ফাঁকি দেয়।
পণ্য চালানে এলসি, ইনভয়েজ ও প্যাকিং লিস্ট জালিয়াতি করে শুল্ক ফাঁকি ও
মানি লন্ডারিং করা হয়েছিল বলে অভিযোগ যায় এনবিআরে। আর তাকে সহযোগিতা করেন
বেনাপোল কাস্টমের সাবেক কমিশনার বেলাল হোসাইন চৌধুরী। মেসার্স শামছুর
রহমানের স্বত্তাধিকারী ও বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক
সভাপতি শামছুর রহমানের বিরুদ্ধে শুল্ক ফাঁকির ঘটনা পুরোনো।

বেনাপোল কাস্টম সূত্র জানায়, শামছুর রহমানসহ বেনাপোলের ১০ জন সিএন্ডএফ
ব্যবসায়ীর শুল্ক ফাঁকির অভিযোগ যায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। সেখান থেকে
বিষয়টি খোঁজ নিতে এনবিআরকে চিঠি দেয়া হয়। পরে এনবিআর ৩ সদস্যর কমিটি গঠন
করে।

শুল্ক ফাঁকির অভিযোগ রয়েছে বাকি ৯টি প্রতিষ্ঠান হলো শামছুর রহমানের ছোট
ভাই জয়েন্ট এন্টারপ্রাইজের মালিক হাবিবুর রহমান, তাদের ভাগ্নে মেসার্স
অর্ণব এন্টার প্রাইজের মালিক এমদাদুর রহমান বাবু, সোহান ট্রেডের মালিক
আহসান হাবীব সেলিম, লিটন এন্টারপ্রাইজের মালিক যুবদল নেতা নুরুজ্জামান
লিটন, বিশ্বাস এন্টারপ্রাইজের আব্দুল মোত্তালিব, মিলিনিয়ামের মালিক দিলাল
উদ্দিন, আনুষা ইমপেক্সের মোঃ নুরুল আলম স্বপন, রাতুল ইন্টারন্যাশনালের
আব্দুল লতিফ এবং জামান ট্রেডার্সের খায়রুজ্জামান মধু।

মেসার্স শামছুর রহমানের স্বত্ত্বাধিকারী শামছুর রহমান জানান, আমাদের
বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে। আমি তদন্ত কমিটির কাছে লিখিত ব্যখ্যা
দিয়েছি। আমার মতো সবাই লিখিত ব্যাখ্যা জমা দিয়েছে। মেসার্স অর্ণব
এন্টারপ্রাইজের মালিক এমদাদুর রহমান বাবু জানান, আমাদের বিরুদ্ধে
ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। অযথা হয়রানির উদ্দেশ্য মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে বেনাপোল কাস্টমের কমিশনার আজিজুর রহমান জানান, তদন্ত
কমিটি দুইদিন ধরে কাজ করে ফিরে গেছেন। পরে তারা এনবিআরে তদন্ত রিপোর্ট
জমা দেবেন। অভিযোগগুলো প্রমাণ হলে সেখানে তারা সুপারিশ করবেন অভিযুক্তদের
বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া যায়।

এব্যাপারে তদন্ত কমিটির প্রধান ও মোংলা কাস্টমস কমিশনার হোসেন আহমদ
জানান, আমরা খুব বেশি তথ্য প্রমাণ ছাড়াই তদন্তে নেমেছিলাম। তারপরও
অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রমাণ জোগাড় করেছি। খুব শিগগিরই তদন্ত রিপোর্ট
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে জমা দেব।

দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোলে শুল্ক ফাঁকির ঘটণা পুরনো। প্রতি বছর
গড়ে দুই শতাধিক শুল্ক ফাঁকির ঘটণা ঘটলেও যারা শুল্ক ফাঁকি দিচ্ছে তাদের
বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়না। গত ১০ অর্থবছরে বেনাপোলে ২ হাজারে
বেশি শুল্ক ফাঁকির ঘটণা ধরেছে কাস্টমের শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ। এসব ঘটণায়
তারা শুধু জরিমানা আদায় করে ছেড়ে দিয়েছেন। শুল্ক ফাঁকির সাথে সরাসরি
আমদানিকারক, সিএন্ডএফ প্রতিনিধিরা জড়িত। আর এদের প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা
করেন কাস্টমের কতিপয় কর্মকর্তা। যেকারণে শুধু জরিমানা আদায় ছাড়া আর কোনো
শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেননা কাস্টম কর্তৃপক্ষ। এতে শুল্ক ফাঁকিবাজরা
উৎসাহিত হচ্ছেন।

২০১১ সালের দিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গোয়েন্দা শাখার তদন্তেও এ
বন্দরের অনিয়ম, শুল্ক ফাঁকির ঘটণা উল্লেখ করা হয়।  গোয়েন্দা শাখার ওই
প্রতিবেদনটি হাতে পাবার পর এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট
মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়কে
চিঠি দেয়া হয়েছিল। সম্প্রতি গোয়েন্দা শাখা থেকে একই ধরণের প্রতিবেদন তৈরি
করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।